কবর থেকে শিশুর লাশ তুলে ফেলার ঘটনায় নির্মূল কমিটির নিন্দা
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কবর থেকে আহমদীয়া সম্প্রদায়ের শিশুর লাশ তুলে ফেলার পৈশাচিক ঘটনার নিন্দা করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি মানবাধিকার নেতা বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি লেখক, চলচ্চিত্রনির্মাতা শাহরিয়ার কবির। আজ (১১ জুলাই) এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনের শীর্ষ নেতৃদ্বয় বলেন¾ ‘আজ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দাফনের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আহমদীয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের এক শিশুর মরদেহ কবর থেকে তুলে ফেলার সংবাদ আমাদের অত্যন্ত ব্যথিত, উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ করেছে। আমরা এই পৈশাচিক অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার দাবি করছি।
আমরা দীর্ঘকাল ধরে লক্ষ্য করছি ’৭১-এর গণহত্যাকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের প্রধান দল জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের উগ্র মৌলবাদী সহযোগীরা জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদির হত্যা ও সন্ত্রাসের দর্শন বাস্তবায়নের জন্য আহমদীয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর বার বার হামলা চালাচ্ছে, তাদের হত্যা করছে, ঘরবাড়ি ও মসজিদ ধ্বংস করছে; অথচ এসব নৃশংস অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কখনও কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এবং দেশের ভেতর একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সহ নাগরিকদের বিভিন্ন ফোরাম থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবাদ ও নিন্দাজ্ঞাপনের পরও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। যার ফলে মওদুদিবাদী, ধর্মব্যবসায়ী, মৌলবাদী দুর্বৃত্তরা করোনাকালের এই ঘোর দুর্দিনে আহমদীয়া সম্প্রদায়ের একজন হওয়ার কারণে কবর থেকে শিশুর লাশ তুলে ফেলার মতো ভয়ঙ্কর পৈশাচিক কাণ্ড করতে উৎসাহী হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন এই ঘৃণ্য অপরাধীদের গ্রেফতারের পরিবর্তে যেভাবে তথাকথিত সালিশের নামে অপরাধের ঘটনা চাপা দিয়ে অপরাধীদের শাস্তিপ্রদান এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করেছে তা মানবাধিকারের গুরুতর লংঘন এবং আইনের শাসনের পরিপন্থী। এর আগে গোপালগঞ্জে নিখিল তালুকদার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এভাবে সালিশের নামে ধামাচাপা দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা একই ধরনের অপরাধ করেছেন। ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর সংঘটিত এ ধরনের ভয়ঙ্কর অপরাধ সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তিকে ক্রমাগত প্রশ্রয় দেয়া হলে প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের অপরাধকেই প্রশ্রয় দেয়া হবে, যা অপরাধীদের অধিকতর অপরাধে প্ররোচিত করবে এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করবে।
‘আহমদীয়া মুসলিম সম্প্রদায় এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সংবিধানপ্রদত্ত সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের ব্যর্থতা ও অবহেলার বিষয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। একই সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে এ ক্ষেত্রে আরও সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। ভিন্নধর্ম, ভিন্নমত ও ভিন্ন জীবনধারায় বিশ্বাসী নাগরিকদের সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার ও মর্যাদা থেকে ক্রমাগত বঞ্চিত করা হলে অন্তিমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি যে কলঙ্কিত হয়- এ বিষয়টি সরকার ও প্রশাসনকে সব সময় মনে রাখতে হবে।’