ফের পেছালো ছাতকের সুরমা ব্রিজ উদ্বোধনের তারিখ
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা তথা উত্তর সুরমাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে সুরমা নদীর উপর নির্মিত ব্রিজ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে। এ ব্রিজটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছেন ছাতক-দোয়ারাবাজারের মানুষ। বহুল প্রত্যাশিত এই ব্রিজের উদ্বোধনের তারিখ দু’দফা পিছিয়ে গেছে। ২৯ অক্টোবর ব্রিজটি উদ্বোধনের লক্ষ্যে শেষমূহর্তের কাজ করা হয়েছে দ্রুত গতিতে। কিন্তু ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং’র কারণে আবারো ব্রিজ উদ্বোধনের তারিখ পিছিয়েছে।ছাতক থেকে সংবাদদাতা জানান, ২০০৫ সালের ২৩ আগস্ট ছাতকে সুরমা ব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সরকারের একটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় ব্রিজটির নির্মাণকাজ। সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিলো তিন বছর। কাজ শুরুর এক বছরের মধ্যে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রিজের চারটি স্তম্ভ (পিলার) নির্মাণ করা হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্রিজটির নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর প্রকল্পটি এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) থেকে বাতিল করা হয়। ২০১০ সালে এই ব্রিজটির অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য ৫১ কোটি টাকার একটি নতুন সংশোধিত প্রকল্প যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়। এই আবেদনের পরে আবার নতুন করে ২০২০ সালে ১১৩ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সওজ এর প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক )-এ ১১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সুরমা ব্রিজের পুনঃনির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করে। এরপর নেভিগেশন, এ্যাপ্রোচ, ভূমি অধিগ্রহণসহ দফায় দফায় কয়েকটি প্রকল্প অনুমোদন করে ব্রিজের কাজ শুরু করা হয়।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ ১৭ বছর অনেক বাধা-বিপত্তি, গড়িমসি ও চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে বর্তমানে ব্রিজটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। গত জুন মাসে ব্রিজটি উদ্বোধনের কথা থাকলেও ভয়াবহ বন্যার প্রচ- স্রোতে এ্যাপ্রোচ রোড ভেঙ্গে যাওয়ায় ব্রিজটি চালু করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে আগামী ২৯ অক্টোবর ২য় দফা উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা করে ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং’র কারণে তা স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে, ছাতকে সুরমা নদীর উপর সুরমা ব্রিজ নির্মাণ ছাড়াও গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কে আরো ৯টি ব্রিজ উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে । সুরমা ব্রিজ, এ্যাপ্রোচ, টোলপ্লাজাসহ এই ১০টি ব্রিজ নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয়েছে আড়াই’শ কোটি টাকারও বেশি।স্থানীয়রা জানান, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ, ছাতক সদর ও দোয়ারাবাজার আঞ্চলিক সড়কে গুরুত্বপূর্ণ এই ব্রিজগুলো নির্মাণের ফলে সিলেট-সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ছাড়াও ভারতের মেঘালয় অঞ্চলের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহৃত হবে ছাতক শিল্পাঞ্চল। সুরমা ব্রিজের কারণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের (ছাতক) উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুম আহমদ সিদ্দিকী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৯ অক্টোবর ছাতকের সুরমা ব্রিজসহ সারাদেশের ১০০টি নতুন ব্রিজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের কথা ছিলো। এই তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। দ্রুত সুরমা ব্রিজের অসমাপ্ত আনুষাঙ্গিক কাজ চলছে। খুব শিগগিরই ব্রিজের উদ্বোধন করা হবে।এদিকে, সুনামগঞ্জ থেকে দোহালিয়া হয়ে ছাতক সড়ক ও জাউয়াবাজার থেকে চরমহল্লা হয়ে ছাতক সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলো সরাসরি সুরমা ব্রিজের উপর ওঠার কোন সুযোগ নেই। এসব যানবাহন ছাতক বাজার হয়ে মাধবপুর গিয়ে সংযোগ সড়ক পাবে এবং সুরমার উত্তর পাড়ে যেতে এ সড়কই ব্যবহার করতে হবে। দোহালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামীমুল ইসলাম ও পান্ডারগাও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ জানান, আকিজ প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের কাছ দিয়ে একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ হলে এ সমস্যার সমাধান হবে। এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং এলজিইডি’র উদ্যোগ নেয়া জরুরী।মুহিবুর রহমান মানিক এমপি তাঁর অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, সুরমা ব্রিজ সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ব্রিজটি নির্মাণের ফলে ছাতক-দোয়ারাবাজার যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পাশাপাশি এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হবে।