বন্যার জনভোগান্তি লাঘবে গোয়াইনঘাটের ঘরে ঘরে উপজেলা প্রশাসন
সিলেট অফিস
সত্যবাণী
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় পবিত্র ঈদ-উল আযহার রাত থেকে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় চারদিকে হাহাকার-দূর্ভোগ-ভোগান্তির শেষ নেই। ঘর থেকে বের হলেই শুরু হয় যন্ত্রণা। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে জনভোগান্তি যেন নিত্যকার ঘটনা। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হওয়াতে উপজেলাবাসী চরম কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।
গোয়াইনঘাট থেকে সংবাদদাতা জানান, ঈদ-উল আযহার আনন্দকে মাটি করে দিয়ে আসা গোয়াইনঘাটবাসির এ দুর্যোগে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রলয়ংকারী এই বন্যায় আগে থেকেই পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে ছিলো উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার ৫৬টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খুলে তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি উদ্ধার তৎপরতা ও জানমাল রক্ষায় রেসকিউ টিম গঠন করে উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশি পুলিশ ও সকল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা ছিলো প্রশংসনীয়। বিশেষ করে ইউএনও তৌহিদুল ইসলামের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে বড় ধরণের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় প্রান্তিক উপজেলা গোয়াইনঘাট।
বন্যা উপদ্রুত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার তৎপরতা ও বানভাসীদের খাদ্য সহায়তা বিতরণ করে কষ্ট লাঘবে শতভাগ ব্যবস্হা নেয়া হয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। শুকনো ও রান্না করা খাবার নিয়ে ইউএনও এবং ওসি রফিকুল ইসলাম পিপিএম মানুষের পাশে দাঁড়ালে তাদের সাথে ছুটে আসেন জনপ্রতিনিধি এবং সচেতন-সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে বানভাসিদের খাবার সরবরাহের এই তৎপরতা ছিল বৃহস্পতিবার পর্যন্তও। বৃহস্পতিবার দিনভর উপজেলার বিভিন্ন স্হানে নৌকাযোগে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলায় পানি কমে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির পর বন্যাউত্তর উপজেলা ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রণয়নের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য নিয়ে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ডা. কিশলয় সাহার সমন্বয়ে একাধিক টিম নিয়ে উপজেলা জুড়ে জরুরি স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কাজ করছেন। নৌকাযোগে উপজেলা সদর থেকে প্রত্যন্ত এলাকা গুলোতে ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, স্যালাইন বিতরণ করা হয়। ভয়াবহ বন্যায় উপজেলা ১৩টি ইউনিয়নের ৩১৩টি গ্রামের ৬৬,১৯১টি পরিবার বানের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বানভাসিদের খাদ্য সহায়তা পৌছে দিতে সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণ বরাদ্দও দিয়েছে।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত সিংহভাগ জরুরি খাদ্য সহায়তা উপজেলা প্রশাসন বানভাসিদের মাঝে বিতরণ করেছে। প্রাপ্ত বরাদ্দ তালিকা থেকে জানা গেছে, উপজেলায় এখন পর্যন্ত নগদ ৪ লাখ টাকা, গো-খাদ্য ১৮৫ মেট্রিক টন, শুকনো খাবার ৪৫০ প্যাকেট বিতরণ হয়েছে। এছাড়াও পরিস্থিতি বিবেচনায় উপজেলা প্রশাসন জরুরী ভিত্তিতে জিআর তহবিল থেকে ৩ লাখ টাকার ৪ হাজার মেট্রিক টন চিড়া, ১ হাজার মেট্রিক টন গুড় সংগ্রহ করে ২ কেজি চিড়া ও ২০০ গ্রাম গুড় জনপ্রতিহারে ২ শ’ পরিবারে বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়া স্হানীয় এমপি ইমরান আহমদের নিজস্ব তহবিল হতে ১ম ধাপে ১৫শ’ প্যাকেট (চাল, ডাল, সয়াবিন, লবন ও আলু সমন্বয় করে) বিতরণ করা হয়। ২য় ধাপে ৩ হাজার মানুষকে চিড়া, গুড়, মোমবাতি বিতরণ করা হয়েছে।
এবারের বন্যায় এ পর্যন্ত অসাবধানতাবশতঃ বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনায় ২ জন ও নৌ-ডুবিতে একজনসহ ৩টি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
গোয়াইনঘাট জুড়ে বানভাসিদের মধ্যে সরকারের চলমান খাদ্য সহায়তা বিতরণ অব্যাহত রয়েছে এবং প্রয়োজনে তা আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
ইউএনও তৌহিদুল ইসলাম বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল সৃষ্ট বন্যায় গোয়াইনঘাটের অনেক ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় জানমাল রক্ষা ও জরুরি উদ্ধার তৎপরতায় প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রথমে জরুরি উদ্ধার তৎপরতা, পরে খাদ্য সহায়তা বিতরণ এবং এই মুহূর্তে আমরা জনস্বাস্থ্য নিয়ে মাঠে থেকে কাজ করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরাসরি সিলেটের বানভাসিদের বিষয়ে ওয়াকিবহাল এবং তদারকি করছেন। আমরা জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে দিক নির্দেশনা পাচ্ছি এবং সে অনুযায়ী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি।