বিএনপির উদ্দেশ্য সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ও গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করা : তথ্যমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির উদ্দেশ্য সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ও গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করা।তিনি বলেন, ‘বিএনপির উদ্দেশ্য হচ্ছে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ও গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করা, ধূলিস্যাৎ করা। ২০১৪ সালে তারা সেই অপচেষ্টা করেছিলো, ২০১৮ সালে নির্বাচনে গিয়েও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। এখন সেই অপচেষ্টা চালালে দেশের জনগণ তাদের প্রতিহত করবে।মন্ত্রী আজ দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে সাংবাদিকরা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মন্তব্য ‘যে দিন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে সে দিনই হবে এ সরকারের অন্তিম যাত্রা’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের তফসিল বা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সে অনুযায়ী নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত আছি।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি নেতারা নির্বাচন বর্জন করতে পারে, যে কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জনের বা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার আছে। আমি মনে করি, বিএনপি যদি একটি দায়িত্বশীল দল হয় তাহলে অবশ্যই তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। কারণ গণতন্ত্রকে সংহত করা শুধুমাত্র সরকারি দলের দায়িত্ব নয়। গণতন্ত্রকে সংহত করা, গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে অব্যাহত রাখা সেটি সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব। এরপরও যে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করার অধিকার রাখে। তাই বলে নির্বাচন প্রতিহত করার অপচেষ্টা চালানো হলে দেশের মানুষ সেটি কঠোর হস্তে দমন করবে।সিঙ্গাপুরে বিএনপি মহাসচিবের সাথে জাতীয় পার্টির মহাসচিবের বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমি এটি দেখেছি। কিন্তু মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন সেটি অসত্য। তার বক্তব্যকেই আমি সত্য ধরে নিচ্ছি।’

নির্বাচনে পররাষ্ট্রনীতির প্রভাব আছে কি না এ প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন হয় দেশে, ভোট দেয় দেশের জনগণ। এটা পররাষ্ট্রনীতির বিষয় না। আর পররাষ্ট্রের ক্ষেত্রে আমরা বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করে সকল দেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।সাংবাদিকরা বিএনপির দাবিকৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের নাম আসা নিয়ে প্রশ্ন করলে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ড. ইউনূস সাহেব দেশের একজন জ্যেষ্ঠ নাগরিক, নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন, তার প্রতি যথার্থ সম্মান এবং শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, এ ক্ষেত্রে তার নামের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটাও দেখেছি যে, বিএনপি হিরো আলমকে পছন্দ করেছে। এ সব প্রচার-অপপ্রচার যাই বলেন, এগুলো নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না।’
ড. ইউনূসের বিচার নিয়ে বিদেশিদের চিঠির প্রশ্নে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, দেখুন কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। এ দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিচার হয়েছে এবং তিনি সাজা ভোগ করছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নোবেল লরিয়েটের বিচার হয়েছে, তারা জেলও খেটেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিচার হচ্ছে। হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের বিচার প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছ। সত্যটা হচ্ছে এই যে, শ্রমিকদের ৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দেওয়ার কথা ছিলো যেটির মূল্য হচ্ছে ১২শ’ কোটি টাকা। তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে এবং ঘুষ প্রদান করে সেটিকে ৪শ’ কোটি টাকায় নামিয়েছিলেন। সেটিও তিনি প্রদান করেননি। সে জন্য বিচার হচ্ছে। আরো অনেক মামলা আছে। আমাদের দেশের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিবৃতি দেওয়া দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষপের শামিল। সে জন্য বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক এবং সাংবাদিকরা এর বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন।’
ঢাকায় নতুন উড়ালসড়ক প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গতকাল প্রধানমন্ত্রী যে উড়ালসড়ক উদ্বোধন করেছেন সেটি উন্নয়নের অভিযাত্রায় অবশ্যই আরেকটি মাইলফলক। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত সাড়ে ১৪ বছরে ঢাকা শহরসহ সারাদেশ সত্যিকার অর্থেই বদলে গেছে। আপনারা মির্জা ফখরুল সাহেবকে, বিএনপির নেতাদেরকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন, তারা কি বলে একটু শোনার অপেক্ষায় আছি। কারণ তারা চোখ থাকতেও দেখে না, কান থাকতেও শোনে না। আর দেশের আপামর জনগণ, তরুণ সমাজ, ছাত্র সমাজ যে আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে, আওয়ামী লীগের সাথে আছে, সেটি গত দুইদিনের সমাবেশে আবার প্রমাণিত হয়েছে।’
লন্ডনে পিএসআইএফে যোগদান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টারিয়ানদের সাথে বৈঠক: মতবিনিময়ের শুরুতে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ তার সদ্যসমাপ্ত লন্ডন সফরের ওপর আলোকপাত করেন। মন্ত্রী ৫০টিরও বেশি দেশের ২৮২জন প্রতিনিধি সমন্বয়ে লন্ডনে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্টারি সিকিউরিটি ইনটেলিজেন্ট ফোরামের (পিএসআইএফ) সম্মেলনে যোগদানের পাশাপাশি ফোরামের চেয়ারম্যান যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র কংগ্রেসম্যান রবার্ট পিটেনজার, কো-চেয়ার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সভাপতি এলিসিয়া কিয়ার্নসের সাথে তার বৈঠকের কথা জানান।ড. হাছান মাহমুদ জানান, যুক্তরাজ্যের মিনিস্টার অভ স্টেট ফর মিডিয়া, ট্যুরিজম এন্ড ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রিজ স্যার জন হুইটিংডেল, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান ফ্রেঞ্চ হিল, বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের অল পার্টি গ্রুপের সভাপতি রুশনারা আলী এমপি প্রমুখের সাথে বৈঠকগুলোতে তারা বাংলাদেশের অসামান্য উন্নয়ন, সন্ত্রাস দমন ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে প্রশংসা করেছেন এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

You might also like