বিএনপির’ছত্রচ্ছায়ায়’ ছিনতাই–চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ জনগন
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী এ বাজারে প্রতিটি ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে ৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। আবার কিছু কিছু পণ্যবাহী ট্রাক থেকে আরও বেশি চাঁদাও আদায় করা হয়।ট্রাক শ্রমিক নামধারী একশ্রেণির চাঁদাবাজ এখন বিএনপির নাম দিয়ে চাঁদাবাজি করছে।আগে আওয়ামী লীগের নাম দিয়ে চাঁদাবাজি হতো।বর্তমানে চাঁদা না দিলে মারধর করা হচ্ছে ট্রাক চালক-হেলপারদের। এমনকি দেওয়া হচ্ছে হত্যার হুমকিও। এ অবস্থায় সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।
চাক্তাইয়ে দোকানপাট বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। তারা বলছেন, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে চাঁদাবাজরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবারও বিকাল ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত চাক্তাইয়ের দোকানপাট বন্ধ রেখে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ব্যবসায়ীরা। এখান থেকে আন্দোলনরত ব্যবসায়ীরা ৭ দিনের মধ্যে চিহ্নিত চাঁদাবাজদের গ্রেফতারের দাবি জানান। এর আগে বুধবারও খাতুনগঞ্জে শ্রমিক সংগঠনের নামে পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজির প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করেন ব্যবসায়ীরা।এদিকে ট্রাকে চাঁদাবাজির কারণেও চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ ভোগ্যপণ্যের দাম অনেক ক্ষেত্রে বাড়ছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন। তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা পরিবহণ বাবদ চাঁদাবাজির বিপরীতে যে টাকা দিচ্ছে তাও পণ্যের কস্টিং হিসাবে ধরছে। সে কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী জানান, আগে আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রী ও এমপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি চলত। এখন ক্ষমতার পট পরিবর্তনে চাঁদাবাজদের জার্সিও বদল হয়েছে। ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলেও ব্যবসায়ীদের রেহাই নেই। প্রত্যেক দলই তাদের লাথি মারে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, এই বাজারে প্রতিদিন বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ৫০০ থেকে ৭০০ ট্রাক ঢোকে। বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে যেমন ট্রাক ঢোকে তেমনি দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও পণ্য নিয়ে এখানে ট্রাক আসে। আবার এখান থেকেও বিভিন্ন পণ্য নিয়ে বিভিন্ন ট্রাক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যায়। পণ্যবাহী এসব ট্রাক খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ে প্রবেশ করলেই গুনতে হয় চাঁদা। চাঁদাবাজরা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ৫-৬টি উপদলে ভাগ হয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছে। প্রতিটি ট্রাক থেকে ৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। প্রতি মাসে এই চাঁদার পরিমাণ কোটি টাকার ওপরে।
২০২১ সালেও সিএমপি কমিশনার বরাবরে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে চাঁদাবাজির বিষয়ে অভিযোগ দেওয়া হয়। লিখিত অভিযোগে বেশ কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল নিজাম কাজল, মহিউদ্দিন জনি, মিনহাজ উদ্দিন রনি, নজরুল ইসলাম, বেলাল হোসেন বেলাল, মো. মিলন, জেবল হোসেন, কামাল উদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ মুন্সি, আরিফ মিয়া, খোরশেদ আলম, নুরুল হকের নাম রয়েছে। এ ছাড়াও মমিন, খলিলুর রহমান, নারায়ণ চৌধুরী, মনজু প্রকাশ ডিম মনজু, আবদুস শুক্কুর মিয়া, হানিফ ও ইব্রাহিমের নাম রয়েছে।এ চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের দাম বাড়ার পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী এই দুই ব্যবসা কেন্দ্রের ভাবমূর্তিও দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ঢাকার বাবু বাজারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাক ভাড়া করলেও চালকরা আসতে চান না এই চাঁদাবাজির কারণে। শুধু ব্যবসায়ী নন, ট্রাক চালকরাও এদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ।
চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, চাঁদাবাজি এখন ব্যবসায়ীদের গলার ফাঁস হয়ে দেখা দিয়েছে। এমনিতেই আন্তর্জাতিক বাজার দর, ডলারের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি। তার ওপর পণ্যবাহী সব ট্রাক থেকে প্রতিদিন চাঁদাবাজি। ট্রাক শ্রমিক নামধারী কয়েকটি গ্রুপ বাকলিয়ার রাজাখালী থেকে চাক্তাইয়ে ট্রাক প্রবেশের পথে লাঠিসোঁটা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা ট্রাক আটকে ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে।