বিদ্যুতের অসহনীয় যন্ত্রণায় চরম বিক্ষুব্দ সিলেটবাসী
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ কয়েক বছর আগের দিনে যেন ফিরে গেছে সিলেট। কোন এক সময় যখন ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় কাতর হতে হতো, জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠতো এবং সাধারণ মানুষ প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসতেন, মিছিল করতেন। এখন আবার সেই পরিস্থিতি চলছে। অন্ততঃ গত ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকেই চলছে এই বৈদ্যুতিক নির্যাতন। চলছে আরও নানা কানাঘুঁষা। ইতোমধ্যে আন্দোলন শুরুর খবর আসতে শুরু করেছে। যখন তখন সিলেটজুড়ে জন বিস্ফোরণেরও আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।গত ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগের প্রায় একমাস সিটি এলাকায় তেমন একটা লোডশেডিং দেখা যায়নি। প্রায় ২৪ ঘন্টাই বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল। তখন নগরজুড়ে সুর ছিল, নির্বাচনের কারণে দলীয় প্রার্থীর ভাবমুর্তি রক্ষায় বা জয় নিশ্চিতের জন্য বিশেষ কর্মসুচির আওতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত ছিল সিলেটবাসীর জন্য!
বাস্তবেও তাই ঘটেছে।নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকেই আবারও লোডশেডিং শুরু হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুতের খেমটা নাচন দেখে সাধারণ মানুষের ধারণা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। দিনে দিনে লোডশেডিংয়ের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখন আর তার কোন ব্যাখ্যাই দিতে পারছেন না কেউ। এমন কি, বিদ্যুতের কর্তারাও।এরমধ্যে আবার টানা কয়েকদিনের বৃষ্টির পর এখন শুরু হয়েছে শ্রাবণ মাসের রোদ-বাদলের খেলা। গত কয়েকদিন নামমাত্র বৃষ্টি হলেও সিলেটের আবহাওয়া ছিল চরম উত্তপ্ত। এখনো চলছে প্রচন্ড গরম। যদিও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত, বৃষ্টি নামি নামি করছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শুক্রবার সকালে ও বিকেলে হালকা চালে কিছুটা বৃষ্টি ঝরেছে।কিন্তু এই প্রচন্ড গরমে তীব্র লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে সাধারণ মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা! বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের পাশাপাশি শ্রমজীবি মানুষের অবস্থা খুবই খারাপ। সাথে গরমজনিত রোগ জীবানুর দাপটও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। এ অবস্থায় স্বস্তির কোন সুযোগই মিলছেনা। আর তাই মানুষ ফুঁসছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা শুরু হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওসমানীনগরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। এদিকে অন্যান্য উপজেলায়ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরাসরি আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা না হলেও সাধারণ মানুষ ফুঁসছেন। যখন তখন বড় ধরণের কর্মসূচি নিয়ে মানুষ রাস্তায় নামতে পারেন।বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট বিভাগে পল্লী বিদ্যুৎ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড মিলিয়ে প্রায় ২২ লাখ গ্রাহক রয়েছেন। সিলেট অঞ্চলে গত বুধবার ৫৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৩৫০ মেগাওয়াট।বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল করিম জানান, বিতরণ বিভাগ-১ এর গতকালের বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪৪ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে লোডশেডিং ছিল ৩২ থেকে ৪০ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, গত ২১ জুন অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রচারের সময় আলোচনায় উঠে আসে লোডশেডিং প্রসঙ্গ। নব নির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর প্রচেষ্টায় সিসিক নির্বাচন পর্যন্ত সিলেটে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও নির্বাচনের পর ফের লোডশেডিংয়ে ফিরে সিলেট। মধ্যখানে ২/১দিন কিছুটা উন্নীত হলেও গত ১০ ও ১১ জুলাই নবীগঞ্জস্থ বিবিয়ানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সিলেটবাসী ফের বিদ্যুৎ ভোগান্তিতে পড়েন।এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাদির জানিয়েছেন, ৫৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের যখন চাহিদা, তখন আমরা পাচ্ছি মাত্র ৩৫০ মেগাওয়াট। ১৯০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তাই এ অবস্থা। এ অবস্থা থেকে মুক্তি কবে, তার কোন জবাব নেই এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার কাছে।