বিয়ের চাঁদা আদায় নিয়ে সিলেটের হিজড়ারা দ্বিধাবিভক্ত বিরাজ করছে উত্তেজনা

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ সিলেটে বিয়ের চাঁদা আদায় নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে হিজড়ারা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। যখন-তখন তা সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।সিনিয়র সাংবাদিক এনামুল কবীর সরেজিমন অনুসন্ধান করে জানান, সিলেটের রাস্তায় বরযাত্রার গাড়ি আটকে মোটা অংকের চাঁদায় আদায় করে হিজড়ারা। তারা এমন অবস্থার সৃষ্টি করে যে, চাঁদা না দিয়ে যাওয়ার কোন উপায়ই থাকেনা। তাও আবার যেনোতেনো প্রকার নয়, মোটা অংকের। এ নিয়ে সিলেটবাসী দীর্ঘদিন থেকে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করলেও এ থেকে তাদের নিবৃত্ত করা যাচ্ছিলনা কিছুতেই।সম্প্রতি তাদের গুরুমা হিসেবে পরিচিত সুন্দরী হিজড়া ওরফে ফরহাদের নেতৃত্বে একটি বড় অংশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আর রাস্তায় নয়। এখন হয় বিয়ের আগের দিন বিয়ে বাড়িতে বা বিয়ের দিনেই কমিউনিটি সেন্টারে তারা হাজির হবে। সেখানে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার না করে চাঁদা বা সাহায্য দেয়ার আহ্বান জানাবে ওই অংশটি। আর রাস্তায় গাড়ি আটকে যেসব হিজড়া চাঁদা চাইবে তাদের শায়েস্তা করতেও তারা সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

তবে এই সিদ্ধান্তটি মানছে না কয়েকজন হিজড়া। তারা নানাভাগে বিভক্ত হয়ে রাস্তায় বরযাত্রার গাড়ি আটকে চাঁদা আদায় করেই চলেছে।রাস্তায় চাঁদাবাজির বিপক্ষের একজন হিজড়া নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, এ সিদ্ধান্ত সবাই মানার কথা থাকলেও অনেকেই মানছে না। তারা নানা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আগের মতোই রাস্তায় বরের গাড়িবহর থামিয়ে চাঁদা আদায় করছে।তিনি জানান, সুনামগঞ্জের গোবিন্দগঞ্জে বরের গাড়ি আটকে চাঁদা আদায় করছে ময়না হিজড়া ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। সিলেটের লামাকাজিতে একই কাজ করছে রনীর নেতৃত্বে একদল হিজড়া। ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জে মালেকা ও সালমা হিজড়ার নেতৃত্বে রাস্তায় চাঁদাবাজি চলছে।এছাড়া আম্বরখানা থেকে মেজরটিলা এবং এর আশপাশ এলাকায় চাঁদাবাজি করছে পাপ্পু, সাদ্দাম, রুমন ও তান্নার নেতৃত্বে একদল হিজড়া। এদের প্রতিরোধের আহ্বান জানান, সুন্দরীর পক্ষের হিজড়ারা।গুরুমা সুন্দরীর নেতৃত্বাধীন হিজড়ারা এখন রাস্তায় চাঁদাবাজি ছেড়ে দিয়ে বিয়ের আসরে চাঁদা আদায় শুরু করেছে। এক্ষেত্রে অবশ্য তারা দু’ধরনের প্রতিক্রিয়াই পাচ্ছে। কেউ কেউ দুর্ব্যবহার করছেন, আবার কেউ কেউ তাদের সস্তুষ্ট করেই বিদায় দিচ্ছেন বলেই দাবি তাদের।
হিজড়াদের নিয়ে কাজ করছে এমন একটি সূত্রের দাবি, হিজড়ারা তাদের পেটের দায়ে রাস্তায় চাঁদাবাজি করে বেড়ায়। কিন্তু বিয়ের মতো একটি শুভ কাজে এমনটা মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। এ নিয়ে সিলেটবাসী প্রচন্ড বিরক্ত। আমরা তাদের এ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছি। সেজন্য তাদের বুঝানো হচ্ছে। এই খারাপ দিকটা বুঝতে পেরে হিজড়াদের একটি বড় অংশ রাস্তায় চাঁদাবাজি বন্ধ করেছে। সূত্রটির দাবি, তারা নিজেরাই এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিয়ের আগের দিন বাড়িতে বা বিয়ের দিন সেন্টারে গিয়ে তারা সাহায্য চাইবে এবং চাইছেও। এতে নাকি তারা বেশ সাড়া পাচ্ছে।তবে এখনো যারা রাস্তায় চাঁদাবাজি করছে, তাদের ব্যাপারে সূত্রটি জানায়, এদেরকেও এমন কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা চলছে।সিলেটে হিজড়াদের নেতা বা গুরুমা সুন্দরী হিজড়া ওরফে ফরহাদের নির্দেশ অমান্য করে যারা রাস্তায় চাঁদাবাজি করছে, তাদের ব্যাপারে তার সাথে কথা বলতে মোবাইলে কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।তবে তার খুব ঘনিষ্ঠ এক হিজড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সুন্দরী এখন আত্মগোপনে আছেন। তিনি প্রকাশ্যে এলে রাস্তায় বরের গাড়ি আটকে যারা চাঁদাবাজি করছে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি আরও জানান, এ কারণে হিজড়াদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যখন-তখন তা সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে।

You might also like