বিশ্বকাপ ২০২৩: টাইগাররা কি ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে?
আবু মুসা হাসান
উপদেষ্টা সম্পাদক, সত্যবাণী
লন্ডন: প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দল আফগানিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে শুভ সূচনা করেছে। হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট এসোসিয়েশনের ধর্মশালা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করে বাংলাদেশ দল মাত্র ৩৭ দশমিক ২ ওভারে ১৫৬ রানে আফগানিস্তানকে অল আউট করে। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং মেহেদী হাসান মিরাজ তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন, শরিফুল নিয়েছেন ২ টি উইকেট, মোস্তাফিজ এবং তাসকিন নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।
আফগানদের হারিয়ে মিরাজ প্লেয়ার অফ দ্যা ম্যাচ
জয়ের টার্গেটে পৌঁছতে গিয়ে মিরাজ করেছেন ৫৭ রান, আর নাজমুল হাসান শান্ত করেছেন ৫৯ রান। বল এবং ব্যাট হাতে সেরা পারফরমেন্সের জন্য প্লেয়ার অফ দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
১০ই অক্টোবর বাংলাদেশ মোকাবেলা করবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে। ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলে বাংলদেশ দলের সেমি ফাইনালে পৌঁছার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে। তবে, সেমি ফাইনাল নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশকে ৫টি ম্যাচে জয়লাভ করতে হবে।
টাইগাররা ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল
বেশীদিন আগের কথা নয়, ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। ঐ ম্যাচের সুখ স্মৃতি নিয়ে ১০ই অক্টোবর ইংল্যান্ডকে মোকাবেলা করার জন্য মাঠে নামবেন ঐ জয়ের দুই নায়ক মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম। তাদের সাথে আরো থাকবেন ২০১৫ সালের ঐ ম্যাচে বাংলাদেশ দলের আরো দুই সদস্য তাসকিন আহমেদ এবং বিশ্বসেরা ওডিআই অলরাউন্ডার বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
২০১৫ সালের ৯ই মার্চ অস্ট্রেলিয়ার এডিলেডে অনুষ্ঠিত ঐ ম্যাচে আগে ব্যাট করে টাইগার্সরা ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৭৫ রান করেছিল। এই ২৭৫ রানের মধ্যে মাহমুদউল্লার ব্যাট থেকে এসেছিল ১০৩ রান আর মুশফিকুর রহমানের সংগ্রহ ছিল ৮৫ রান। তাসকিন আহমেদ ৯ ওভার বল করে ৫৯ রানের বিনিময়ে ২টি উইকেট পেয়েছিলেন।
সাম্প্রতিক কালে মাহমুদউল্লাহ এবং মুশফিকের ব্যাট থেকে এখন নিয়মিত রানের বন্যা দেখা যায়না, তবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাঠে নামার পর এডিলেডের ঐ মধুর স্মৃতি তাদের উজ্জীবিত করে তুলবে নিশ্চয়। অন্যদিকে, সাকিব আল হাসান এবং তাসকিন আহমেদ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশী পরিপক্ক এবং অভিজ্ঞ। আর বাংলাদেশের ১১ জনের দলে এই চারজনের সাথে থাকবেন নতুন প্রজন্মের আরো ৭জন দক্ষ ও সাহসী ক্রিকেটার।
অধিকন্ত, বাংলাদেশ দলের অস্ত্রাগারে এখন রয়েছে বিশ্বমানের পেস ও স্পিন বোলার। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর সক্ষমতা বর্তমান বাংলাদেশ দলের যে রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা । তবে, পুনরাবৃত্তি ঘটবে কিনা তা নির্ভর করবে ১০ই অক্টোবর ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং-বোলিং এবং ফিল্ডিং কতটকু জ্বলে উঠে তার উপর। উল্ল্যেখ্য, বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিম পঞ্চম বারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছেন।
অন্যদিকে, ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড দলের জো রুট, মঈন আলী এবং ক্রিস ওকস বর্তমান বিশ্বকাপের ইংল্যান্ড দলে খেলছেন। তাই এবারের বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ দলের সাথে খেলার সময় তাদের মনে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের দুঃস্বপ্ন যে উঁকিঝুঁকি মারবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারন তাদের পক্ষে ঐ দুঃসপ্ন ভোলা সম্ভব নয়। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পুল ’এ’ থেকেই ইংল্যান্ডকে বিদায় নিতে হয়েছিল, কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সুযোগ পায়নি । অন্যদিকে, ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সুযোগ পেয়েছিল।
বাংলাদেশ ইংল্যান্ডকে ৫ বার হারিয়েছে
ইংল্যান্ড দল নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ দল থেকে অনেক বেশী শক্তিশালী এবং ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত ওডিআই ম্যাচগুলোর অধিকাংশ ম্যাচেই জয়লাভ করেছে। তবে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের এডিলেডের ম্যাচ ছাড়াও বাংলাদেশ ২০১০ সালের ১০ই জুলাই ব্রিস্টলে, ২০১১ সালের ১১ই মার্চ চট্টগ্রামে ২০১৬ সালের ৯ই অক্টোবর ঢাকার মিরপুরে এবং ২০২৩ সালের ৬ই মার্চ চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে।
২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের কপাল পুড়েছিল বাংলাদেশ
শুধু মাত্র ২০১৫ সালের বিশ্বকাপই নয়, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ অঘটন ঘটিয়েছিল। ২০০৭ সালের ১৭ই মার্চ ওয়েস্ট ইন্ডিজের পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ‘বি’ গ্ৰুপে বাংলাদেশ দল ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়ে বিদায় করে দিয়েছিল। শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি, রাহুল দ্রাবিড়, যুবরাজ সিং, হরভজন সিং এবং মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো ষ্টার ক্রিকেটারদের সমন্বয়ে গঠিত ভারতীয় দল আগে ব্যাট করতে নেমে ১৯১ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল। হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল ৯ বল হাতে রেখেই ১৯২ রানের জয়ের টার্গেটে পৌঁছে গিয়েছিল। বাংলাদেশ দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন, তামিম ইকবাল, শাহরিয়ার নাফিস, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ আশরাফুল, আফতাব আহমেদ, মোহাম্মদ রফিক, আব্দুর রাজ্জাক, মাশরাফি বিন মর্তুজা প্রমুখ।
ব্যাট হাতে তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিম অর্ধশত করেছিলেন। বল হাতে মাশরাফি মর্তুজা ৩৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যান অফ দা ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
‘বি’ গ্ৰুপ থেকে শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশ সুপার এইট পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল আর ভারত গ্ৰুপ পর্যায় থেকেই দেশে ফিরে গিয়েছিল।