বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা চারু বালা-কে নির্মূল কমিটির অর্থ সহায়তা প্রদান
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ফরিদপুর: একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুলের ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে বীরাঙ্গনা চারু বালাকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। ৯ মে (২০২১) বিকেল ৩ টায় ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কনফারেন্স রুমে বীরাঙ্গনা ও শহীদজায়াদের নিয়ে এ অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।সভা থেকে ফরিদপুরের বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা নারীরা লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের কাছে তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও বীরাঙ্গনাদের স্বীকৃতি না পাওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। বীরাঙ্গনারা তাদের উপর নিপীড়ন নির্যাতনের কথা যাতে নির্ভয়ে বলতে পারেন এজন্য নির্মূল কমিটি গত ত্রিশ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে আপনাদের স্বীকৃতি এবং সহযোগিতার জন্য নির্মূল কমিটি সাধ্যমতো চেষ্টা করবে।
এসময় তিনি চরভদ্রাসনের বীরাঙ্গনা ভূমিহীন চারু বালা এবং ফরিদপুর সদরে ভাড়া করা একটি রুমে বসবাসরত বীরাঙ্গনা মনোয়ারা বেগমের সাথে কথা বলেন। অন্যান্য বীরাঙ্গনা এবং শহীদজায়ারা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক এবং সাংবাদিককে পেয়ে তাদের অতীত স্মরণ করে দুঃখভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন এবং তাদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সাংবাদিক দিব্যেন্দু দ্বীপের মাধ্যমে শাহরিয়ার কবিরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসনের সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যা ১৯৭৫-এ তাঁর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় এসে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানীভাতা দশ হাজার টাকায় উন্নীত করেছেন এবং বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা প্রদান করে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছেন।’ যে সব বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধারা এখনও তালিকাভুক্ত হন নি তাদের দ্রুত তালিকাভুক্ত করার জন্য তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান।
সভা শেষে নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা দিব্যেন্দু দ্বীপ সংগঠনের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধা চারু বালার হাতে পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থ সাহায্য তুলে দেন। এ সময় সামাজিকভাবে স্বীকৃত এবং আত্মস্বীকৃত অন্য আরও আটজন বীরাঙ্গনাকে শাড়ী উপহার দেওয়া হয়। তাদের বিষয়ে তদন্ত রিপোর্ট একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির বহুভাষিক মুখপত্র ‘জাগরণে’ প্রকাশ করা হবে। উল্লেখ্য, শহীদজায়া, শহীদমাতা বীরাঙ্গনা চারু বালা বাস করতেন পদ্মার চরে একটি খুপড়ি ঘরে। সাংবাদিক দিব্যেন্দু দ্বীপ চরভদ্রাসনে গণহত্যা নিয়ে গবেষণা করতে গেলে তিনি চারু বালার খোঁজ পান। এরপর চারুবালাকে নিয়ে একটি মর্মস্পর্শী লেখা দিব্যেন্দু দ্বীপ-এর লেখনিতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অনলাইন বহুভাষিক মুখপত্র ‘জাগরণে’ প্রকাশিত হলে এ বিষয়ে বরেণ্য লেখক, সাংবাদিক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শাহরিয়ার কবির সহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষিত হয় এবং চারু বালার ভাগ্য বদলাতে শুরু করে। চারু বালা প্রশ্ন করেন এবং কৈফিয়ত চান যে, কেন তাকে এভাবে অজ্ঞাত স্থানে দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর বসবাস করতে হলো এবং এক রকম ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করতে হলো। চারু বালার পাশাপাশি বেঁচে আছেন এমন আরও আটজন বীরাঙ্গনাকে ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে খুঁজে পাওয়া যায়, যাদের অবস্থাও খুব শোচনীয়। চারু বালাকে অর্থ সাহায্য প্রদানের এ অনুষ্ঠানে এরকম আরও সাতজন বীরাঙ্গনা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন শহীদজায়া এবং শহীদ পরিবারের কয়েকজন সদস্য।অনুষ্ঠানটি নির্মূল কমিটির চরভদ্রাসন উপজেলার আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক সাজ্জাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সঞ্চালনা করেন শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি ফরিদপুরের সদস্যসচিব উৎপল সরকার সাগর।