বুদ্ধিজীবী হত্যা ও গণহত্যার দায়ে পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতীয় জাগরণ গড়ে তুলুন
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ বাঙালী জাতীয়তাবাদের বিকাশ ও সম্প্রীতির স্বদেশ গড়ে তোলার প্রত্যাশায় দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের পথ পেরিয়ে ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মহুতি ৩ লক্ষের অধিক নারীর নিগৃহীত হওয়ার মধ্যদিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী স্বৈরশাসনের পতন ঘটিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয় ঘটে। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের সাথে এদেশীয় দালালরা বর্বরতায় মেতে উঠে। স্বৈরশাসনকে পাকাপোক্ত করে তাদের হীনস্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে সারাদেশে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় শুরু করে। নিরীহ মানুষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, চিহ্নিত এই দালালদের সহায়তায় গনিমতের মাল নামে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে আমাদের নারীদের পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর হাতে তুলে দেয়।
মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আজ আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে সে সকল বীর সেনানীদের স্মরণ করছি। একইসাথে সে দিনের গণহত্যার দায়ে পাকিস্তান সরকারকে নিংশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাই। একইসাথে স্বাধীনতার বিরোধী অপশক্তি জামাত-শিবিরসহ সকল উগ্র-ধর্মান্ধ রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবী জানাই।আজকের এই শুভক্ষণে আমরা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি সেদিনের কঠিন সময়ে বন্ধুপ্রতীম ভারতবর্ষের মানুষদের, যারা সেদিন ১ কোটির উপর নিরীহ বাঙালী শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছেন, খাবার যুগিয়েছেন, আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করেছেন। আমরা মনে করি স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাসের মূল্যায়নের সময় এসেছে। স্বাধীনতা অর্জনে যারা ভূমিকা রেখেছেন, জীবন দিয়েছেন, তাদের প্রকৃত সম্মান দিতে হবে। পাঠ্য পুস্তকে পর্যায়ক্রমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সন্নিবেশিত করতে হবে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বেলা ৩ টায় সংগঠনের কার্যালয় প্রাঙ্গনে সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য জয়ন্তী রায়, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন সামছি, জহিরুল ইসলাম জহির, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য অলক দাশগুপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা ও জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ, ঢাকা মহানগর নেতা জুবায়ের আলম প্রমুখ।
সভা সঞ্চালনা করেন, সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে আজাদ।
সভাপতির বক্তব্যে পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে মূলত মুক্তিযুদ্ধকে হত্যা করা হয়েছে। এখনো প্রতিনিয়ত বাংলাদেশকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র চলছে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় থেকেই খুনী মোস্তাকের নেতৃত্বে আরও একটি সরকার ছিল যারা মূলত পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিশ^াস করেনি। তারা পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। এরাই বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল নায়ক, এরা সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্টপোষক।
দেশে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিয়ে সর্বদা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে চলেছে এরা।এদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর জাতির জনকের হাতে অস্ত্র সমর্পন করার পর, কথা ছিল দেশ গড়তে মুক্তিযোদ্ধাদের কাজে লাগানো হবে। যে কোন সময় দেশের কাজে মুক্তিযোদ্ধাদের ডাক পড়বে। বিগত ৫০ বছরেও সেই পরীক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ গড়ার কাজে ডাকা হয়নি। মূলত আইয়ুব-ইয়াহিয়া মার্কা প্রশাসনের তাবেদারির কারণে। আমরা মনে করি এখনো যে সকল দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছেন দেশ পুর্নগঠনে তাদের কাজে লাগাতে হবে, মুক্তিযোদ্ধারা সেই ডাকের অপেক্ষায় রয়েছেন।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, স্বপ্নটা খুব বড় ছিল না সেদিন। মোটা ভাত, মোটা কাপড় আর শান্তিতে বসবাস করার নিশ্চয়তা দিয়ে একটা জাতি গঠনে মনোনিবেশ করা। দুর্ভাগ্য হলো বঙ্গবন্ধু বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মানবমুক্তির লড়াইকে অগ্রসর করে নেবার তাগিদ সেদিন ষড়যন্ত্রকারীরা সাড়ে তিন বছরের মাথায় ভুলন্ঠিত করেছে। স্বাধীনতার বিরোধীরা সেই ’৭৫ সাল থেকে এখনো সমাজ, রাজনীতিতে, রাষ্ট্রে বহাল তাবিয়তে রয়েছে। তাদের পৃষ্টপোষকতা করে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে বিপথে পরিচালিত করা হচ্ছে। এরা এখনো রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এরা সুযোগ সন্ধানী, সুবিধাবাদী, এদের জাতি কোনদিন ক্ষমা করেনি। আমরা দাবি করছি এই সময়ে আয়ুব-ইয়াহিয়ার পেতাত্মা সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী রাজনীতি নিষিদ্ধ করুন, এদের সাথে দেশ ও আন্তর্জাতিক প্রভুরা রয়েছে তাদের চিহ্নিত করুন। এদের আইনের আওতায় আনুন। সম্প্রীতি ও বৈষম্যমুক্ত স্বদেশ গড়তে হলে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জাতীয় জাগরণ গড়ে তোলার সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করুন। মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ, মর্যাদা মূল্যায়ন করুন। রাজনীতিকে ব্যবহার করে দীর্ঘ সময় থেকে এই মাটিতে একটি লুটেরা শ্রেণী, ধর্মান্ধগোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। এরা দল বুঝেনা, দেশ বুঝেনা, এদের বিরুদ্ধে জাতীয় জাগরণ গড়ে তুলতে হবে। সুবর্ণজয়ন্তীর পথ ধরে সম্প্রীতির স্বদেশ নিশ্চিত করতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের মূলধারা হলো বৈষম্য, শোষণ ও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা, আজকে সেই চেতনায় গণতান্ত্রিক রাজনীতিক, সামাজিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। দুর্নীতির মূল উৎপাটন সাম্প্রদায়িকতার কবর রচনা তাগিদে আসুন আবার ঐক্যবদ্ধ হই।
জয়ন্তী রায় বলেন, চেতনার ঐতিহ্যকে অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার অর্জনকে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে হলে আরও একটি জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ৭২’এর চেতনায় ফিরিয়ে যেতে না পারলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। সময় এসেছে ৭২’ এর মূল চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। সভায় গণ সঙ্গীত পরিবেশন করেন “আনন্দন” শিল্পীরা। সভাশেষে র্যালিসহ শিখাচিরন্তনে বীর সেনানীদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করা হয়।