বেসরকারি মেডিকেল কলেজে স্থায়ী শিক্ষক ৭৫ শতাংশ বাধ্যতামূলক
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ৭৫ শতাংশ স্থায়ী শিক্ষক রাখতে হবে।২৫ শতাংশের বেশি খণ্ডকালীন (পার্টটাইম) শিক্ষক রাখা যাবে না এমন বিধান রেখে ‘বেসরকারি মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কলেজ আইন,২০২০’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।খসড়া আইন অনুযায়ী, মেট্রোপলিটন এলাকায় মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ স্থাপনে দুই একর ও অন্যান্য এলাকায় চার একর জমি থাকতে হবে।মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,এতদিন বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলো চলতো দুটি নীতিমালার মাধ্যমে।একটি ছিল ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালন নীতিমালা ২০১১’ ও ‘বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ স্থাপন ও পরিচালন নীতিমালা ২০০৯’। এখন দেখা যাচ্ছে নীতিমালা দিয়ে সবকিছু সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য একটা আইন প্রয়োজন,এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগ থেকে এ খসড়া আইন নিয়ে আসা হয়েছে।তিনি বলেন,বেসরকারি মেডিকেল কলেজের একাডেমিক অনুমোদন, একাডেমিক অনুমোদন নবায়ন,শিক্ষা কার্যক্রম,কতগুলো ছাত্র থাকবে, সে জন্য কী ফ্যাসিলিটিজ থাকতে হবে, ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত কী হবে, শিক্ষকদের কী যোগ্যতা থাকবে, কলেজগুলো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকবে, আর্থিক ব্যবস্থাপনা কেন হবে, কী ফ্যাসিলিটিজ থাকবে- এ বিষয়গুলো খসড়া আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
‘প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের অনুপাত হবে ১:১০, অর্থাৎ প্রত্যেক ১০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষকের ব্যবস্থা থাকতে হবে। মিনিমাম ছাত্র হতে হবে ৫০ জন। ৫০ জনের কম হলে করা (মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ) যাবে না। ২৫ ভাগের বেশি খণ্ডকালীন শিক্ষক রাখা যাবে না, ৭৫ শতাংশ স্থায়ী শিক্ষক থাকতে হবে।বর্তমান নীতিমালায় অনেক কিছু স্পষ্ট না থাকায় অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পার্টটাইম শিক্ষক দিয়ে চালানো হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি বিষয়ে কমপক্ষে পাঁচজন শিক্ষক থাকতে হবে, সেখানে ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকবে।পরিচালনার বিস্তারিত নির্দেশনার জন্য খসড়া আইনে বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা দেয়া আছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।তিনি বলেন, ‘যদি কেউ আইন ভঙ্গ করেন তবে শাস্তির কথা বলা হয়েছে খসড়া আইনে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া যেতে পারে। শর্তপূরণ না করলে অনুমোদন বাতিল হবে বলেও আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।’
রিজার্ভ ফান্ড হিসেবে মেডিকেল কলেজগুলোতে তিন কোটি ও ডেন্টাল কলেজগুলোকে দুই কোটি টাকা রাখতে হবে বলে আইনের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনে খসড়া আইনে অনেকগুলো শর্ত দেয়া আছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মেডিকেল চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটা ব্যবস্থা রাখতে হবে। চিকিৎসা বর্জ্যগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, নরমাল যে ডাম্পিং গ্রাউন্ড সেখানে ফেললে হবে না। সেখানে থেকে ভাইরাস বা রোগ-জীবাণুর ব্যাপক প্রসার হতে পারে। এ জন্য মেডিকেল কলেজগুলোকে মেডিকেল বর্জ্য ডিসপোজালের ব্যবস্থা রাখতে হবে।তারা যে জমি নেবে তা অবশ্যই নিষ্কণ্টক থাকতে হবে। মেট্রোপলিটন এলাকায় দুই একর ও অন্যান্য স্থানে চার একর জমি থাকতে হবে। জমি না থাকলে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ অনুমোদন পাবে না। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ডেন্টাল কলেজের জন্য অবশ্যই দুই কোটি টাকা রিজার্ভ ফান্ড থাকতে হবে। ডেন্টাল কলেজের নামে সংরক্ষিত তহবিলে কমপক্ষে এক কোটি টাকা তফসিলি ব্যাংকে থাকতে হবে।তিনি আরও বলেন, ‘মেডিকেল কলেজের ১০ শতাংশ শয্যা গরিব রোগীদের জন্য বিনা পয়সায় চিকিৎসার জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে।মেডিকেল কলেজগুলোতে কমপক্ষে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল ও ডেন্টালে ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকতে হবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যেই বিভাগে যে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ থাকবে, তা সেই বিভাগের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকবে। ঢাকা বিভাগের মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকবে। যেখানে নেই সেখানে সার্কুলার দিয়ে বলে দেয়া হবে, তারা কোন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকবে।দেশে বর্তমানে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৭০টি, ডেন্টাল কলেজ ২৬টি। সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৬টি এবং একটি ডেন্টাল কলেজ রয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।