ব্রিটিশ পার্লামেন্টে গোলটেবিল বৈঠক: বাংলাদেশ ধর্মীয় স্বাধীনতার বাতিঘর
আনসার আহমেদ উল্লাহ
কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, সত্যবাণী
লন্ডন: ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ ফর ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিডম অব রিলিজিয়ন এর উদ্যোগে ও বাংলাদেশ স্টাডি সার্কেলের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত এক উঁচ্চ পর্যায়ের গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ধর্মীয় স্বাধীনতার বাতিঘর’।
১৭ মে, বুধবার স্থানীয় সময় দুপুরে পার্লামেন্ট ভবনের একটি সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ব্রিটিশ এমপি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।
বক্তারা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধর্মনিরপেক্ষ আকাঙ্ক্ষা এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত প্রচেষ্টার উপর আলোকপাত করতে গিয়ে বাংলাদেশকে ধর্মীয় স্বাধীনতার বাতিঘর উল্লেখ করলেও, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য দেশের কিছু ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর প্রচেষ্টার কারণে এই সম্প্রীতি হুমকির মুখে পড়েছে মন্তব্য করে বলেন, এ বিষয়ে আরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
বৈঠকে অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে ছিলেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত ফিওনা ব্রুস এমপি, ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক ছায়ামন্ত্রী, ক্যাথরিন ওয়েস্ট এমপি, কনজারভেটিভ এমপি সাকিব ভাট্টি এবং লেবার এমপি স্যার স্টিফেন টিমস।
স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির লিসা ক্যামেরন এবং লর্ড মেন্ডেলসনের অফিসের সদস্যরা প্রতিনিধিত্ব করতে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রবীন সংগঠক ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী, স্টাডি সার্কলের সমন্বয়ক জামাল আহমেদ খান, ফরেন, কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট অফিস, লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং চার্চ অফ ইংল্যান্ডের সিনিয়র প্রতিনিধিরা।
বৈঠকে সংযুক্ত হয়ে বাংলাদেশের সাংসদ অ্যারোমা দত্ত বলেন, “বাংলাদেশে ধর্মের একটি অনন্য সংমিশ্রণ রয়েছে”। ধর্মীয় সংঘাতের কিছু ঘটনা রয়েছে, এমনটি স্বীকার করে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, “ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলি নিজেদের আধিপত্য জাহির এবং সরকারের বিরুদ্ধে সহিংস হয়ে উঠতে একটি গ্রুপকে রাজনৈতিকভাবে উস্কে দিয়ে এদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে”। তবে তিনি উল্লেখ করেন, “ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে কোনও সমস্যা নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধ।”
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেন, বাঙালি সংস্কৃতিতে, “ধর্মের মধ্যে পার্থক্য নেই। আমরা সবাই একই স্টক থেকে এসেছি – সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগতভাবে। ধর্মীয় স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কোনো আইন নেই এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বাংলাদেশে নেই। আমরা সবাই একই – শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে।”
ব্যারোনেস ভার্মা, যিনি সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের পক্ষে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, তিনি বলেন, “আমি তিনবার বাংলাদেশ সফর করেছি। দুইবার নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং একবার সরকারের মন্ত্রী হিসেবে। বাংলাদেশ তার সম্প্রীতির কথা বলার জন্য আরও অনেক কিছু করতে পারে, এবং আজ আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সম্ভাবনা এবং সম্ভাবনার কথা শুনে খুব খুশি হয়েছি।
বাংলাদেশ স্টাডি সার্কেল লন্ডনের চেয়ার সৈয়দ মোজাম্মেল আলী বলেন, “সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় জর্জরিত একটি অঞ্চলে বাংলাদেশ ধর্মীয় স্বাধীনতার আলোকবর্তিকা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা আজ যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে এই সম্প্রীতির ইতিহাস শেয়ার করতে পেরে আনন্দিত হয়েছি এবং আশা করছি ব্রিটিশ এমপিদের এবং সহকর্মীদেরকে এই বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানাতে পারবো যাতে করে তারা নিজেরাই সম্প্রীতির বাংলাদেশকে দেখেন।