ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা ঠেকাতে হাইকোর্টের ৭ নির্দেশনা
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে হয়রানি বন্ধ করতে সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত।বুধবার (১৪ অক্টোবর) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব নির্দেশনা দেন।
আদালত তার নির্দেশনায় বলেন−
১. গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যুর সময় পরোয়ানা প্রস্তুতকারী ব্যক্তিকে ফৌজদারি কারাবিধির ধারা ৭৫ এর বিধান মতে নির্ধারিত ফরমে উল্লিখিত চাহিদা অনুযায়ী সঠিক ও সুস্পষ্টভাবে তথ্য পূরণ করতে হবে। যেমন−
(ক) যে ব্যক্তি বা যেসব ব্যক্তি পরোয়ানা কার্যকর করবেন, তার বা তাদের নাম এবং পদবি ও ঠিকানা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
(খ) যার প্রতি পরোয়ানা ইস্যু করা হচ্ছে অর্থাৎ অভিযুক্তের নাম ও ঠিকানা এজাহার নালিশি মামলা কিংবা অভিযোগপত্রে বর্ণিত মতে সংশ্লিষ্ট মামলার নম্বর ও ধারা এবং ক্ষেত্রমতো আদালতের মামলার নম্বর ও ধারা সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
(গ) সংশ্লিষ্ট জজ (বিচারক)/ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষরের নিচে নাম ও পদবির সিল এবং ক্ষেত্রমতো দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারকের নাম ও পদবির সিলসহ বামপাশে বর্ণিত সংশ্লিষ্ট আদালতের সুস্পষ্ট সিল ব্যবহার করতে হবে।
(ঘ) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রস্তুতকারী ব্যক্তির (অফিস স্টাফ) নাম, পদবি ও মোবাইল ফোন নম্বরসহ সিল ও তার সংক্ষিপ্ত স্বাক্ষর ব্যবহার করতে হবে, যাতে পরোয়ানা কার্যকরকারী ব্যক্তি পরোয়ানার সঠিকতা সম্পর্কে কোনও সন্দেহের উদ্বেগ হলে পরোয়ানা প্রস্তুতকারীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে সঠিকতা নিশ্চিত হওয়া যায়।
২. গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রস্তুত করা হলে স্থানীয় অধিক্ষেত্র কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট পিয়নবইতে এন্ট্রি করে বার্তা বাহকের মাধ্যমে তা পুলিশ সুপারের কার্যালয় কিংবা সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠাতে হবে। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের/থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্তৃক ওই পিয়নবইতে স্বাক্ষর করে তা বুঝে নিতে হবে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানো ও কার্যকর করার জন্য পর্যায়ক্রমে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার কাজে লাগানো যেতে পারে।
৩. স্থানীয় অধিক্ষেত্র বাইরের জেলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করণের ক্ষেত্রে পরোয়ানা ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সিলগালা করে এবং অফিসের সিলমোহর ছাপ দিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠাবেন।
৪. সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিলমোহরকৃত খাম খুলে প্রাপ্ত গ্রেফতারি পরোয়ানা পরীক্ষা করে এর সঠিকতা নিশ্চিত করে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য ব্যবস্থা নেবেন। তবে কোনও গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ক্ষেত্রে সন্দেহের উদ্রেক হলে পরোয়ানায় উল্লিখিত পরোয়ানা প্রস্তুতকারীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে এর সঠিকতা নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।
৫. গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার জন্য পরোয়ানা গ্রহণকারী কর্মকর্তা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাওয়ার পর তা কার্যকর করার আগে আবার পরীক্ষা করে যদি কোনও সন্দেহের উদ্রেক হয়, সেক্ষেত্রে পরোয়ানায় উল্লিখিত পরোয়ানা প্রস্তুতকারীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে এর সঠিকতা নিশ্চিত হয়ে পরোয়ানা কার্যকর করবেন।
৬. গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুসারে আসামিকে/আসামিদের গ্রেপ্তারের পর সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে ওই আসামি/আসামিদের আইন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট/জজ আদালতে গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ উপস্থাপন করতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেট/গ্রেফতারকৃত আসামি বা আসামিদের জামিন না দিলে আদেশের কপিসহ হেফাজতি পরোয়ানা মূলে আসামি/আসামিদের জেল হাজতে পাঠানো ও ক্ষেত্রমতো সম্পূরক নথি তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যুকারী জজ/ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বরাবর পাঠাবেন।
৭. সংশ্লিষ্ট জেল সুপার কিংবা অন্য কোনও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেফাজতি পরোয়ানামূলে প্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট আসামি/আসামিদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যুকারী আদালতে এই মর্মে অবিলম্বে অবহিত করবেন যে, কোন থানার কোন মামলার সূত্রে বা কোন আদালতে কোন মামলায় বর্ণিত আসামিদের ওই আদালতের ইস্যুকৃত পরোয়ানামূলে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে এবং পরবর্তীতে আসামিদের নতুন কোনও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রাপ্ত হলে জেল সুপার ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে পরোয়ানা কার্যকর করবেন।
আদালত তার অপর নির্দেশনায় এ আদেশ বাস্তবায়নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব, আইন মন্ত্রণালয় সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, মহা-কারা পরিদর্শক ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন।এছাড়া এই আদেশের অনুলিপি প্রত্যেকটি দায়রা জজ ও মেট্রোপলিটন দায়রা জজ, সব ট্রাইব্যুনাল, বিশেষ জজ আদালতের বিচারকবৃন্দ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের অবগত করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।