ভূমিহীন হওয়ায় পুলিশে চাকুরী পাচ্ছেননা আফসিয়া
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকা: পুলিশ কনস্টেবল পদে লিখিত মৌখিকসহ সব পরীক্ষায় পাস করেও চূড়ান্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে আছে আসপিয়া ইসলাম নামে ভূমিহীন এক মেয়ের। আসপিয়ার পরিবার ভূমিহীন হওয়ায় ও তাঁর স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় আইনি জটিলতায় চাকরির সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে।
এ খবরে দীর্ঘদিনের সরকারি চাকরির স্বপ্ন চূর্ণবিচূর্ণ হলে পুলিশ প্রশাসনের কাছে ছুটছেন আসপিয়া ইসলাম। বরিশালের সরকারি হিজলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করেছেন আসপিয়া।
মানবিক বিবেচনায় প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে আসপিয়ার চাকরি চূড়ান্ত করা হউক বলে দাবি করেছে সুশীল নাগরিকরা।
আসপিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল জেলায় পুলিশ কনস্টেবলের শূন্য পদে আসপিয়া অনলাইনে আবেদন করন। গত নভেম্বরে বরিশাল নগরীর পুলিশ লাইনস্ মাঠে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় পাস করার পর ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি লিখিত পরীক্ষার ফলাফলে উত্তীর্ণ হন ।
এরপর ২৪ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম স্থান হন। দসর্বশেষ গত ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে সেখানেও পাস করে আসপিয়া।
কিন্তু আসপিয়ার চূড়ান্ত নিয়োগের আগে বরিশাল জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আসপিয়া ও তার পরিবারকে ‘ভূমিহীন’ উল্লেখ করা হয়। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) জেলা পুলিশ সুপার বরাবর আসপিয়ার পরিবার ভূমি বলে স্থায়ী ঠিকানা নেই বলে এক প্রতিবেদন জমা দেন হিজলা থানার উপ-পরিদর্শক মো. আব্বাস।
এই খবর পেয়ে বুধবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে আসপিয়া ডিআইজি এসএম আকতারুজ্জামানের কার্যালয়ে গিয়ে তার কাছে জানতে চান, সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও কেন তার চাকরি হবে না।
এমন প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি জানান, নিজেদের জমি না থাকলে চাকরি দেওয়ার আইন নেই। এরপর ভাঙা মন নিয়ে বুধবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত নগরীর পুলিশ লাইনস্ মূল গেটের সামনে বসে থাকে আসপিয়া।
আরো জানা গেছে, ১৫ বছর ধরে হিজলা উপজেলার খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামের একজনের জমিতে আশ্রিত হিসেবে থাকছে আসপিয়ার পরিবার। আসপিয়ার বাবা সফিকুল ইসলাম মারা গেলে তিন বোন, এক ভাই ও মা কে নিয়ে কষ্টে জীবন যাপন করে। একমাত্র ভাই পোশাক কারখানায় চাকরির আয় দিয়ে চলে আসপিয়ার সংসার।
আসপিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি নিজ যোগ্যতাবলে এক-এক করে সাতটি পরীক্ষায় পাশ করি। এরপর অপেক্ষায় থাকি চূড়ান্ত নিয়োগের। এর মধ্যে হিজলা থানার ওসি জানান, চাকরি পেতে হলে নিজেদের জমিসহ ঘর দেখাতে হবে। কিন্তু আমাদের কোনও জমি নেই। আমরা একজনের জমিতে বছরের পর বছর ধরে বাস করছি। জমি নেই বলে আমার চাকরি হবে না- এটা বিশ্বাস হচ্ছিল না।
বরিশালের ডিআইজি এসএম আখতারুজ্জামান তার নিজস্ব ফেসবুক ওয়ালে মানবতা এবং বিধি-বিধান: আসপিয়া পুলিশে চাকরি পেয়েও না পাওয়া উল্লেখ করে একটি পোস্ট দেন।
ওই পোস্টে মহিবুল্লাহ, মাহফুজ চৌধুরী এবং আরো বিভিন্ন ফেসবুক আইডির কমেন্টে লিখেছেন, আসপিয়ার যোগ্যতা থাকার পরও শুধু ভূমিহীন হওয়ায় মেয়েটির চাকরি হবে না। এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে।
প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করে মেয়েটিকে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান তারা।
বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানান, চূড়ান্ত নিয়োগের আগে নিয়ম অনুযায়ী পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য বরিশাল জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আসপিয়া ও তার পরিবারকে ‘ভূমিহীন’ উল্লেখ করা হয়। এতে নিয়োগে আইনি জটিলতা দেখা দেয়। তবুও দেশের কোথাও যদি আসপিয়ার পরিবারের ভূমি থাকে তাহলে সেটাই স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে গ্রহণ করা হবে। আসপিয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, সকল পরীক্ষায় আসপিয়া উত্তীর্ণ হওয়ার পরও চাকরি না হওয়া একটি দুঃখজনক ঘটনা। ওই মেয়েটির পরিবারকে হিজলায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে জমিসহ ঘর, তথা একটি স্থায়ী ঠিকানার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।
বরিশালের ডিআইজি এসএম আখতারুজ্জামান তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেন, আসপিয়ার নিয়োগকর্তা হলেন এসপি বরিশাল। আর তার পুলিশ ভেরিফিকেশন চলছে, এটা গোপনীয় প্রক্রিয়া। আসপিয়ার বা আমার তো এই বিষয়ে জানার কথা নয়। আসপিয়া জেনেছে তার চাকরি হচ্ছে না। কেন? সে জানায় তার জমি নাই তাই। তাকে প্রশ্ন করে জানতে পারি, তার বাবা-মা উভয়ে ভোলা জেলার স্থায়ী বাসিন্দা। অনেক বছর আগে তার মা বরিশালের হিজলা থানা এলাকায় ভাড়ায় বসবাস করেন। সে লেখাপড়া সেখানেই করেন, কিন্তু স্থায়ী আবাস গড়ে তুলেননি। সে বরিশালের স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণ করতে পারছেন না। সে সরল ভুলে ভোলার পরিবর্তে বরিশালে চাকরি প্রার্থী হয়েছে। তাকে সান্ত্বনা দেই এবং সাংবাদিকদের কিছু পরামর্শ দেই। পুলিশ সুপার, বরিশাল এবং উপরে আসপিয়ার বিষয়টি অবগত করি। বিধি মোতাবেক পুলিশ কাজ করবে। আমার রেফারেন্সে পোস্ট হয়, পোস্টের মোমেন্টাম বাড়ানোর জন্য। আমি বিধি মানি, কিন্তু মেয়েটির প্রতি আমার কষ্ট বোধ থেকেই যায়। দোয়া করি, মেয়েটির ভাগ্যে সোনার হরিণটি যেন ধরা দেয়।