ভূমিহীনদের সরকারি দেয়া বাড়িঘর নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে

সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ ‘সরকার আমাদেরকে যে গ্রাম তৈরী করে দিছিল মনে হয় আর খুব বেশীদিন সেই গ্রামে থাহন যাইব না। দিন দিন ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এহন ভাঙ্গন আমাদের বসতঘরের কাছে আইয়া পরছে।’ এমনটিই বলছিলেন, সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নে সরকারিভাবে ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত আদর্শগ্রামের বাসিন্দা মো. আনিছ মিয়া।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরকারিভাবে নির্মিত আদর্শগ্রাম নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে নদীগর্ভে বিলীন হতে চলেছে। নদী ভাঙ্গনরোধকল্পে নদীরতীরে একটি প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করে গ্রামটি রক্ষার দাবী গ্রামবাসীর।
মধ্যনগর থেকে সংবাদদাতা জানান, ১৯৮৬-১৯৮৭ অর্থবছরে তৎকালীন সরকারের ‘গৃহহীনদের জন্য আদর্শগ্রাম নির্মাণ প্রকল্প’র আওতায় তখনকার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজের মাধ্যমে সমগ্র ইউনিয়ন থেকে নির্বাচিত ৪০টি ভূমিহীন পরিবারের জন্য বুড়িপত্তন মৌজায় সুমেশ্বরী নদীর পূর্বপাড়ে এই গ্রামটি নির্মাণ করা হয়। গ্রামে বসবাসকারী প্রতিটি ভূমিহীন পরিবারের জন্য একটি করে বসতঘর নির্মাণ, বিশুদ্ধ পানীয়জলের ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন, দু’টি পুকুর ও একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হয়। কয়েক বছর আগে সুমেশ্বরী নদীর একটি দীর্ঘ অংশ খনন করা হলে নদীর জলপ্রবাহের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে বর্ষাকালে সুমেশ্বরীর জলপ্রবাহের তীব্রতায় প্রতিবছর ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে গ্রামটি।
আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা স্নাতক পড়ুয়া শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন বলেন, নদীভাঙ্গনে গ্রামের পশ্চিম পাশের গাছ-পালা গোড়া থেকে ও বসতঘরের ভিটা থেকে মাটি সরে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফলে গ্রামটি ক্রমশঃ ছোট হয়ে যাচ্ছে। এসব ঘর মেরামত করতে ভূমিহীন পরিবারগুলো প্রতিবছর আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। ইতিমধ্যে দু/একটি পরিবার এ কারণে গ্রাম ছেড়েছে। নদীভাঙ্গন রোধে আমরা গ্রামের পশ্চিম পাশে একটি প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতিবছর সুমেশ্বরী নদী ভাঙ্গনে আদর্শগ্রামের পশ্চিম পাশের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব ঘরবাড়ি মেরামত করতে গিয়ে দরিদ্র পরিবারগুলো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে। এছাড়াও প্রতিবছরই অনেক গাছ-পালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গ্রামটি রক্ষায় নদীরপাড়ে সরকারিভাবে একটি প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ প্রয়োজন।
মধ্যনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার দয়িত্বে থাকা ধর্মপাশা উপজেলার ইউএনও শীতেষ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘এ বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

You might also like