ভ্যাকসিন শূন্যতা পুরনে যুক্তরাজ্যের জরুরী সহায়তা চায় বাংলাদেশ: আইটিভিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোমেন
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
সত্যবাণী
লন্ডন: ভারতের রফতানি নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশে যে ভ্যাকসিন সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে যুক্তরাজ্যের জরুরী সহায়তা চেয়েছে দেশটি।
শুক্রবার যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী গণমাধ্যম আইটিভি নিউজের সাথে এক একান্ত সাক্ষাতকারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এই সহায়তা চান।
আইটিভি নিউজের সাথে কথা বলতে গিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাংলাদেশের ভ্যাকসিন পরিস্থিতিকে ভয়ানক”সঙ্কট” মন্তব্য করে বলেন, এই সংকট উত্তোরণে “আমরা মরিয়া’।
তিনি বলেন, ‘কোভিডের নতুন ভেরিয়েন্টের আক্রমনে দিশেহারা ভারত ভ্যাকসিন রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় সেরাম ইন্সটিটিউটে অর্ডার করা অ্যাস্ট্রাজেনেকার মাত্র এক তৃতীয়াংশ ডোজ পেয়েছে বাংলাদেশ। গত ফেব্রুয়ারীতে ৩০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়ে জুনের মধ্যে প্রতি মাসে যেখানে ৫ মিলিয়ন ডোজ করে পাওয়ার কথা, সেখানে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পৌছেছে মাত্র ১০.২ মিলিয়ন ডোজ। এরমধ্যে ৭ মিলিয়ন আমাদের ক্রয় করা এবং বাকী ৩.২ মিলিয়ন ডোজ ভারতের দেয়া উপহার।’
আইটিভি নিউজের ডেপুটি নিউজ এডিটর মাহাথির পাশাকে দেয়া সাক্ষাতকারে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ‘ভারত এখন ভীষণ সঙ্কটজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি, অত্যন্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তাদের। আমরা বুঝতে পারছি তারা একটি কঠিন সময় পার করছে। আর এজন্যই তারা যে ভ্যাকসিন আমাদের পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো, তা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।’
ড. মোমেন বলেন, ‘প্রতিশ্রুত ভ্যাকসিন সরবরাহের ব্যর্থতার মানে হলো নির্ধারিত ১২ সপ্তাহের মধ্যে ১.৬ মিলিয়ন মানুষকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজটি সরবরাহ করতে না পারার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বাংলাদেশ।’
মিঃ মোমেন আইটিভি নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় ডোজগুলির জন্য সরাসরি যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে, কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকারের সক্ষমতা নেই, এই কারণ দেখিয়ে এই আবেদনটি শেষ পর্যন্ত প্রত্যাখ্যান করা হয়। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, যুক্তরাজ্য সরকার চেষ্টা করলে আমাদের এই সংকটে সহায়তা করতে পারে, কারণ তাদের সক্ষমতা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কমনওয়েলথভুক্ত দেশ হিসেবে আমরা যুক্তরাজ্যের কাছে এমন সহায়তা আশা করতে পারি। আমি মনেকরি কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সংকটে যুক্তরাজ্যের আরও আন্তরিক হওয়া উচিত।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের একটি ভাল বন্ধু, অনেক বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবদান রাখছেন, সুতরাং আমাদের এই সংকটে যুক্তরাজ্যের এগিয়ে আসা উচিত।’
ড. মোমেন বলেন, ‘আমরা খুব বেশি কিছু চাচ্ছিনা, মাত্র ১.৬ মিলিয়ন ডোজ অ্যাষ্ট্রেজেনেকা চাই, যাতে ১ম ডোজ নেয়া লোকজন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তাদের দ্বিতীয় ডোজটি নিতে পারে।’
এদিকে, যুক্তরাজ্য সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র ভ্যাকসিন বা তাদের সরবরাহের চুক্তি, উৎপাদন বা বিতরণে যুক্তরাজ্যের সরকারের কোন ভূমিকা নেই।
করোনভাইরাস ভ্যাকসিন যাতে বিশ্বব্যাপী পৌছে এবিষয়ে শুধু ভূমিকা পালন করছে দেশটি। তিনি বলেন, ‘এ বছর নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলিতে এক বিলিয়নেরও বেশি ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য £৫৪৮ মিলিয়ন পাউন্ড অনুদান দিয়েছে যুক্তরাজ্য। এই হিসেবে কোভ্যাক্স এর অন্যতম বৃহত অনুদানকারী দেশ যুক্তরাজ্য।’
তিনি বলেন, ‘কোভ্যাক্স ইতিমধ্যে ১২০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে সহায়তা করেছে, যার মধ্যে ৭০টিরও কম আয়ের দেশ।’