মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের ভুল চিকিৎসার ফলঃ শাবি কর্মকর্তার মৃত্যু
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ সিলেট নগরির বেসরকারি মাউন্ড এডোরায় হাসপাতালের এঁদোয় নাকে ত্রুটিপূর্ণ চিকিৎসায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সাহেদ আহমদের (৪০) মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তার সহকর্মীদের অভিযোগ, ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাহেদের চিকিৎসায় কালক্ষেপণ করেছে। এজন্য তার মৃত্যু হয়েছে।
১৩ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে সাহেদের মৃত্যু হয় বলে জানান শাবির কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক অশোক বর্মন অসীম। সাহেদ আহমেদ শাবির নিরাপত্তা শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন।
অশোক বর্মন অসীম বলেন, প্রথমে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের চিকিৎসকের ত্রুটিপূর্ণ চিকিৎসার জন্য আমাদের সহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। মাউন্ট এডোরা কর্তৃপক্ষের কারণে আমাদের সহকর্মীর যে সমস্যা হয়েছে তাতে তার চিকিৎসা সহায়তা চেয়েছি, তাদের কাছে কোন ক্ষতিপূরণ চাইনি। তবে তারা আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণ করেছে; কোন সদুত্তর দেয়নি। তারা আমাদের সাথে সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক আচরণ করেছে। তাতেই আমাদের সহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আমরা মাউন্ট এডোরা কর্তৃপক্ষের বিচার চাই। মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে যাতে এরকম ক্ষতির সম্মুখীন আর কেউ না হয়। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সহকর্মীর মৃত্যুতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করবে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা জানান, গত ডিসেম্বরে সিলেটের আখালিয়াস্থ মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান সাহেদ আহমদ। সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহ কামাল কর্তৃক সাহেদের নাকে এন্ডোসকপিক সাইনাস অপারেশন করানো হয়। এরআগে একইদিন সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. খালেদ মাহমুদ রোগী সাহেদকে সিস্টের অপারেশন করেন। অপারেশনের পরের দিন পেটের তীব্র ব্যথা অনুভব করলে তাঁকে আলট্রাসনো ও স্লিপেস টেস্ট করানো হয়। পরে হাসপাতালের এমডি অধ্যাপক ডা. আক্তারুজ্জামান রোগী সাহেদের প্যানক্রিয়াটাইস লিক হয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেন। ফলে একই সময় সাইনাস ও সিস্টের অপারেশনের ফলে সাহেদের একটি চোখ নষ্ট ও প্যানক্রিয়াস লিক হয়ে যায়। এতে অগ্নাশয়ের জটিল সমস্যায় পড়েন বলে অভিযোগ উঠে। পরে সাহেদের চিকিৎসা মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ৬ ডিসেম্বর তাকে ঢাকার পিজি হাসপাতালে স্থানান্তর করে চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা দেয়া হয় বলে জানা গেছে।
সাহেদকে চিকিৎসা দেয়ার বিষয়ে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. খালেদ মাহমুদ বলেন, গত ডিসেম্বরে সে রোগীর পরামর্শক্রমে আমি সিস্টের অপারেশন করিয়েছিলাম। শুনেছি এরপরে উনার শরীরে অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়। তবে আমার অপারেশনের সাথে উনার পরবর্তী সমস্যাগুলোর (রোগের) কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
চিকিৎসা দেয়া মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহ কামালের কাছে জানতে চাইলে তিনি মিটিংয়ে আছে বলে জানিয়ে পরে কথা বলব বলে ফোন কেটে দেন। এছাড়া মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ডা. আখতারুজ্জামানের সাথে সাহেদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেটাও সাহেদের ভুল চিকিৎসা এবং মৃত্যুর কারণ বলে অনেক কর্মকর্তা অভিযোগ তুলেছেন।
এরআগে, গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার দপ্তরের কর্মকর্তা নূরজাহান ফাতেমা সিলেটের নয়াসড়কস্থ মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে সিস্টের অপারেশন ও এ্যানেসথেসিয়া করার পরপরই তার মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতালটির ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে। এছাড়াও এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে অসংখ্য ভুল চিকিৎসার অভিযোগ রয়েছে।