মাতাল বাঁশি

 হামিদ মোহাম্মদ

(সাহিত্যের বহু শাখায় বিচরণ হামিদ মোহাম্মদ-এর। কবিতা,গল্প, উপন্যাস এমনকি মননশীল সাহিত্য কোনটাই বাদ যায়নি। লিখেন সমান সৃজনশীলতা নিয়ে, সমান উজ্জ্বলতায়। সত্যবাণী প্রতি রোববার ধারাবাহিক প্রকাশ করবে তাঁর লেখা উপন্যাস ‘মাতাল বাঁশি’। সাম্প্রতিক নানা বিষয় থেকে শুরু করে ধর্মীয় মৌলবাদী উত্থান, প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলন, চিকিৎসাবাণিজ্য, বাঙালি, বাংলাদেশ এবং বিলেতের অভিবাসী প্রেক্ষিত—সব একসুত্রে গেঁথেছেন লেখক। পাঠক পড়তে থাকুন,আমরা আছি আপনাদের সঙ্গে।)

(উৎসর্গ: অসাম্প্রদায়িক মাতৃভূমি নির্মাণের উদ্দেশ্যে)

 ॥ছয়

আসে ৮৩ সাল। শিকড় সংস্কৃতি চক্র গঠন করেন শুভেন্দু ইমাম ও হামিদ মোহাম্মদ। সাথে সদ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠ শেষ করে আসা আমি আহমেদ আজাদ। দেশে সামরিক শাসনের যাতাকল, এর ওপর মৌলবাদের বিস্তার। আমরা রুখে দাঁড়াতে সংঘবদ্ধ হলাম কজন সংস্কৃতিকর্মী। তখন আমরা মনে করি, সংস্কৃতি হলো রাজনীতির পাহারাদার। রাজনীতিকে পাহারা দিতেই হবে। এতে আরো যোগ দিলেন সামসুল আলম, নুরুজ্জামান মনি, আফতাব হোসেইন, তুষার কর, আজিজ আহমেদ সেলিম, হোসনে আরা হেনা, শাহেদা জেবু, হীরা শামীম, শামীমা চৌধুরী, নাসরিন চৌধুরী। সেলিনা তরপদার তারা তিনবোনও এলো আমাদের সাথে। আরো এলো একঝাঁক তরুণ-তরুণী। বিভিন্ন সংগ্রামী সৃজনশীল অনুষ্ঠানের আয়োজন চলতে থাকে। কবিতাপাঠ,আবৃত্তি সেমিনারসহ নানা কর্মসূচী নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।
এক বছরের কর্মসুচী হাতে নিলাম। আসন্ন একুশে ফেব্রæয়ারি মহান শহীদ দিবসে রেজিষ্ট্রি মাঠে স্বৈরাচার বিরোধী স্বরচিত কবিতাপাঠ,আবৃত্তি ও গণসঙ্গীতের অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিই। এসময় হাতে আসে একটি ছোট চটি বই। কবি মোহাম্মদ রফিকের খোলা কবিতা নামে একটি কবিতা। ঢাকা থেকে পাঠিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সৈয়দ এনামুল ইসলাম। এ কবিতা সংকলনটি পেয়ে আমরা আবেগাপ্লুত হই আরো। আবৃত্তির জন্য এটি সিলেক্ট করলাম। আরো সিলেক্ট করলাম শামসুর রাহমান, সিকান্দার আবু জাফর, আবুজাফর ওবায়েদল্লাহ, নির্মলেন্দু গুণ প্রমুখ প্রিয় কবিদের কবিতা। আবৃত্তিতে অংশ নেবেন স্থানীয় আবৃত্তি শিল্পী এবং গণসঙ্গীতে অংশ নেবেন উদীচীর শিল্পীরা। মূল উদ্যোক্তাকর্মী শুভেন্দু ইমাম, হামিদ মোহাম্মদ, আমি ও সেলিনা তরপদার। অনুষ্ঠান হবে শিকড় সংস্কৃতি চক্রের ব্যানারে।
অন্যদিকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট গঠন করারও উদ্যোগ নিই। কবি দিলওয়ার ও হেমচন্দ্র ভট্টাচার্যকে যুগ্ম আহবায়ক এবং সাংবাদিক তবারক হোসেইনকে সদস্যসচিব করে ১০১ সদস্যের একুশে উদযাপন কমিটি গঠন করা হলো। কার্যকরি কমিটিতে শিকড় থেকে শুভেন্দু ইমাম, হামিদ মোহাম্মদ ও আমি আহমেদ আজাদসহ আরো অনেকে। সিদ্ধান্ত হয় রাজনৈতিক দলসমূহকে যুক্ত করার। আমরা রাজনৈতিক দল সমূহকে সম্পৃক্ত করতে রাজনীতিকদের সাথে যোগাযোগ সৃষ্টি, সম্মিলিত ও ব্যাপকভাবে একুশ উদযাপন নিয়ে আলোচনা চলে। রাজনীতিকরা তখন সামরিক শাসনের বিধিনিষেধে আত্মগোপনে। কেউ কেউ দ্বিধান্বিত। অনেকের প্রশ্ন ছিলো, এসব পারা যাবে কি? আমরা বললাম, কোর্ট-পয়েন্টে সমবেত হয়ে শোকমিছিল ও প্রভাতফেরির আয়োজন করা যাবে না কেন?। সিদ্ধান্ত নিলাম–স্থানীয় মদনমোহন কলেজের শহীদ মিনার বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। আর বিকেলে শিকড় সংস্কৃতি চক্রের রেজিষ্ট্রি মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজন। সেখানে সংস্কৃতিকর্মীরাই থাকবেন বেশি। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকেও সম্পৃক্ত করতে থাকি। ব্যাপক সাড়া মেলে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে।
এদিকে, ১৪ফেব্রæয়ারি ঢাকায় সংগ্রামী ছাত্রসমাজ মজিদ খান শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের প্রতিবাদে শিক্ষাভবন ঘেরাও কর্মসূচী পালন করে। এতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে বহুছাত্র শহীদ হন। এ ঘটনায় দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। সমগ্র দেশের মানুষ ফুঁসে ওঠে, চাপা উত্তেজনা বিরাজ করে সর্বত্র। এ অবস্থায় একুশে ফেব্রæয়ারি ভোরে কোর্ট পয়েন্টে প্রতিবাদী লক্ষ মানুষের সমাবেশ ঘটে। প্রভাতফেরিতে এতো মানুষের অংশগ্রহণ এর আগে ঘটেনি। কোর্টপয়েন্ট থেকে মদনমোহন কলেজ প্রায় দেড় মাইলের বেশি দুরত্বে। কোর্টপয়েন্ট থেকেই জিন্দাবাজার শুরু। আমরা প্রভাতফেরির অগ্রভাগে ছিলাম। মদনমোহন কলেজের শহীদ মিনার চত্বরে প্রভাতফেরির প্রথম অংশ পৌঁছার পরও জিন্দাবাজারে রয়েছে মিছিলের পেছন দিক। এরপরেও খন্ড খÐ প্রভাতফেরির মিছিল দুপুর পর্যন্ত শহীদ মিনার বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করে। অবিরাম চলে পুষ্পস্তবক অর্পন। মদনমোহন কলেজ ক্যাম্পাস এদিন লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে সামরিক শাসন বিরোধী শ্লোগান ওঠে, যদিও শ্লোগান বা আকারে ইঙ্গিতেও সামরিক শাসনকে সমালোচনা নিষিদ্ধ ছিলো। আমাদের সংগঠনের কর্মী সাংবাদিক অজয় পাল বেদিতে দাঁড়িয়ে সামরিক শাসন বিরোধী জ্বালাময়ী কবিতাও আবৃত্তি করেন। এ সময় কেউ কেউ দ্রুত সরে পড়েন এদিক সেদিক। কেননা, গ্রেফতার হওয়ার আশংকা ছিলো। রাস্তায় এবং আশেপাশে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনি বিডিআরের সশস্ত্র টহল।
বিকেল ৩টায় রেজিষ্ট্রি মাঠে কবিতা পাঠ, আবৃত্তি ও গণসঙ্গীতের আসর আমাদের শিকড় সংস্কৃতি চক্রের। মাঠের দক্ষিণ পাশে টেলিফোন ভবন, পূর্ব পাশে জজ কোর্ট ও পশ্চিমে গণপূর্ত ভবন। ভবনগুলোর ছাদে মিলিটারি এ্যাম্বুস নিয়ে আছে। হালকা মেশিনগান রেজিস্ট্রি মাঠের দিকে তাক করা। আমরা চিন্তিত হয়ে পড়ি। কিন্তু বিষ্ময়ের সাথে দেখি, সব আগে মেয়েরাই মাঠে এসে পৌঁছেছে। এসেছেন এমসি কলেজের শিক্ষক বাম চিন্তক প্রফেসর গোলাম রব্বানী। তিনি শামীমা চৌধুরী ও নাসরিন চৌধুরীর প্রিয় শিক্ষক। সরকারি চাকরি করলেও তিনি তা কমই তোয়াক্কা করেন। প্রিয় কবিদের বিপ্লবী ও তেজদীপ্ত কবিতা আবৃত্তি করলেন আবৃত্তি শিল্পীদের মধ্যে আমিনুল ইসলাম লিটন,অম্বরীশ দত্ত, সুমন্ত চট্টোপাধায়, শামীমা চৌধুরী ও নাসরিন চৌধুরী যুগল কণ্ঠে আবৃত্তি করেন কবি মোহাম্মদ রফিকের খোলা কবিতা। যখন খোলা কবিতা আবৃত্তি হচ্ছিলো তখন মাঠের সমবেত সাধারণ শ্রোতা পর্যন্ত হকচকিয়ে ওঠেন। এ কবিতা পড়ার পর গণসঙ্গীতে অংশ নিতে আসা উদীচীর শিল্পীরা যে কয়জন এসেছিলেন তারাও কেটে পড়ে। কিন্তু আমরা স্বরচিত কবিতা পাঠ চালিয়ে যাই উচ্চকণ্ঠে। কবি শুভেন্দু ইমাম, অজয় পাল, হামিদ মোহাম্মদ, তুষার কর, নুরুজ্জামান মনি, হোসনে আরা হেনা, হীরা শামীম,শাহেদা জেবু, সেলিনা তরপদার প্রমুখ সামরিক শাসন বিরোধী স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। কবিতাপাঠ শেষে সামরিক শাসন বিরোধী সেøাগান দিয়েই দর্পিত পায়ে মাঠ ছাড়ি। এছাড়া শহীদ দিবস উপলক্ষে ‘শিকড়‘ নামে একুশে সংকলনও প্রকাশ করি। সংকলনে সামরিক দু:শাসন বিরোধী কবিতা লেখেন কবিরা। সংকলনখানা প্রভাতফেরিতেই নি:শেষ হয়ে যায়। মাত্র কয়েক কপি অবশিষ্ট ছিলো। এই কয়েক কপি নিয়ে রেজিস্ট্রি মাঠে থাকা পাঠকদের মাঝে রীতিমত টানাটানি শুরু হয়। দিগনির্দেশনামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন ও সংকলন প্রকাশের সফলতায় আমরা আবেগ তাড়িত হয়ে পড়ি। বিভিন্ন গঠনমূলক কাজে আরো সক্রিয় হই। গতি আসে কাজে।
একুশে ফেব্রæয়ারির কর্মসূচীর সফলতা আমাদের কাজের ধারাকে আরও গতিশীল করে তুলে। সংস্কৃতিকর্মী ও রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সব শ্রেণীপেশার মানুষের বিপুল সাড়ায় নিজেদের মধ্যে এমনকি ভবিষ্যত কর্মপন্থার প্রতিও আস্থা বেড়ে যায়। কদিন পর শিকড় সংস্কৃতি চক্রের কমিটি গঠনের জন্য কর্মীদের একটি সভা বসে। সভায় সিদ্ধান্ত হয় শুভেন্দু ইমাম সভাপতি ও হামিদ মোহাম্মদ সাধারণ সম্পাদক। আমি আহমেদ আজাদসহ অন্য সবাই সদস্য। সংগঠনের উদ্দেশ্য আদর্শ অঙ্গীকার ও কর্মসূচী প্রণয়ন করা হয় এই সভায়। শিকড়ের বক্তব্য ও অঙ্গীকারÑ‘একাত্তর সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুধুমাত্র পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল ছিন্ন করার সংগ্রামই ছিলো না, ছিলো এদেশের শ্রমজীবী মানুষের আর্থসমাজিক অবস্থার পরিবর্তনের যুদ্ধও। সে যুদ্ধে সর্বস্তরের শ্রমজীবী জনসাধারণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিজয় অর্জিত হলেও সমাজ পরিবর্তনের দায়বদ্ধ প্রগতিশীল কোন নেতৃত্ব ও সংগঠন শীর্ষ নেতৃত্বে না থাকায়, মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশিত সমাজ পরিবর্তন সম্ভব তো হয়-ই-নি বরং মানুষের অবস্থার আরো ক্রমাবনতি ঘটেছে। এ থেকে পরিত্রাণ জরুরি।
শোষক শ্রেণী আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে যেভাবে তাদের শোষণ প্রক্রিয়ার ক্রম-বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে, তেমনি তাদের শোষণ অব্যাহত রাখার জন্য সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও তারা আধিপত্য সুদৃঢ় করছে। তাদের পৃষ্টপোষকতায় অপসংস্কৃতির প্রসার দ্রæত গতিতে বেড়ে চলেছে। এস্টাবলিশমেন্টের সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে বড় পর্দা, মিনিপর্দা, দৈনিক,সাপ্তাহিক,বেতারসহ সকল গণমাধ্যম তাদের শ্রেণী স্বার্থে ব্যবহার করছে। এদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়েছে স্বাধীনতা বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীও। তাদের মিলিত কর্মপ্রক্রিয়ায় চাপা পড়ে যাচ্ছে বাঙালির আবহমানকালের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সংগ্রামশীল ধারা।
আমরা মনে করিÑ শোষকদের নির্মিত এই অপসংস্কৃতির বিবর থেকে উদ্ধার ব্যতীত শ্রমজীবী মানুষের মুক্তি অর্জন সম্ভব নয়। আর এ জন্যে দরকার উৎসাভিসারী প্রগতিশীল সংস্কৃতি ও সাহিত্য চর্চার।
প্রগতিশীল সংস্কৃতি ও সাহিত্যচর্চার এই দায়বোধ নিয়ে আমরা শিকড়ের কর্মীরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। বাঙালির সাংস্কৃতিক উৎস সন্ধানের জন্যে সংস্কৃতিকে মাটি ও মানুষের সাথে যুক্ত করার দায়বোধ আমাদেরই। এ লক্ষ্যে সংস্কৃতিকর্মীদের আন্দোলনে ব্যাপকভাবে সমবেত ও যুক্ত করার প্রত্যয় ঘোষণা করছি।’
এছাড়া আমরা আরও কিছু বিষয়ে একমত হই যে, আমরা স্বাধীনতা বিরোধী ও জামায়াতীদের সাথে কোন সম্পর্ক রাখবো না, কোন আত্মীয়তা বা ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ব না, তাদের কোন অনুষ্ঠানে যাব না, আমাদের কোন অনুষ্ঠানেও দাওয়াত দেব নাÑ বরং সর্বক্ষেত্রে প্রতিরোধ ও প্রতিহত করব। সামরিক স্বৈরাচারের দালালদের ব্যাপারেও সমান নীতি প্রযোজ্য হবে। আরও সিদ্ধান্ত নিইÑমহিলা পরিষদ, উদীচী খেলাঘরসহ সমমনা সংগঠনগুলোকে এক প্লাটফর্মে সমবেত করা জরুরি। স্বৈরাচার ও মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলন বেগবান করার লক্ষ্যে সংকলন প্রকাশ, সেমিনার আয়োজন,স্বরচিত কবিতাপাঠ ও আবৃত্তির নিয়মিত আয়োজন করা হবে। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও পয়লা বৈশাখ নববর্ষ উদযাপনসহ রবীন্দ্র, নজরুল,সুকান্ত ও জীবনানন্দের জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করি।
এই প্রত্যয় ও অঙ্গীকারের ভিত্তিতে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিই। সিদ্ধান্ত নিইÑ কর্মসূচীগুলো যাতে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক কর্মসূচী বা প্রক্রিয়ার বিকল্প হতে পারে। যুক্ত হতে পারেন রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীরা।
ইতোমধ্যেই, সামরিক স্বৈরাচার সাংস্কৃতিক কর্মকাÐকে সীমিত করে বিভিন্ন বাধানিষেধ আরোপ করেছে। সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মকাÐকে টুটি চেপে ধরতে নানান ফঁন্দি ফিকির করছে সরকার। দালাল তৈরির চেষ্টা চলছে। মেধা ও মননকে ক্রয়-বিক্রয়ের পথ ধরেছে স্বৈরাচার। অনেকে এসব ফাঁদে পা দিচ্ছেন। এই সুযোগে ধর্মের নামে মৌলবাদীরা সাপ¥্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। স্বাধীনতা দিবস,বিজয় দিবস ও শহীদ দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া নাজায়েজ, পয়লা বৈশাখে মেলার আয়োজন নাফরমানিÑএসব ফতোয়া দেয়া হচ্ছে। ‘শহীদ দিবস’কে ‘ভাষা দিবস’ বলা হচ্ছে। এদের এই অপপ্রচারে মদদ দিচ্ছে ও প্রচ্ছন্নভাবে এদের লালন করছে সামরিক স্বৈরাচার। সামরিক মদদে এরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে, এদের বিস্তৃতি বেড়েই চলেছে। একটার পর একটা সামরিক ফরমান জারি করে মানুষকে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু মৌলবাদীদের বিচরণ অবাধ। দেখা যাচ্ছেÑসামরিক স্বৈরাচার ও মৌলবাদ এই দুই শত্রæ অভিন্ন, সহোদর। একে অন্যের হাত ধরে সমাজকে গিলে খাচ্ছে, সমাজের বুকে চেপে বসেছে লাফ দিয়ে। এ দু:সময়ের বেড়াজাল ছিন্ন করতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হই, সমাজকে এই অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে ও শ্বাসবদ্ধ যন্ত্রনা থেকে উদ্ধার করতেই হবে।
মৌলবাদের এই উত্থান ও বিস্তার রোধ, সাম্প্রদায়িকতা ও স্বৈরাচারকে রুখে দাঁড়ানো আশু করণীয় বিবেচনা করে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ঐক্যের ডাক দিই। অস্ত্রের মুখে মানুষের কণ্ঠরোধ চলতে দেয়া যায় না। আমরা সোচ্চার হয়ে উঠি। ঐক্যই মুক্তির পথ। সাংস্কৃতিক সংগ্রামকে রাজনৈতিক শক্তির সহায়ক শক্তি শুধু নয় এই সময়ে বিকল্প শক্তি হিশেবে দাঁড় করানোর প্রত্যয়াবদ্ধ হতে সিদ্ধান্ত নিই। রাজনীতিক কর্মকাÐ যখন নিষিদ্ধ, এই অবস্থায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সক্রিয় হওয়া ছাড়া মানুষ হিশেবে বাঁচার পথ রুদ্ধ। আমাদের প্রতিজ্ঞাÑএই রুদ্ধ আগল ভাঙতে হবে।
মধ্য-ফেব্রæয়ারির ছাত্র আন্দোলনকে একটি মাইলপোস্ট বিবেচনা করে শিকড় সংস্কৃতি চক্রের পক্ষ থেকে ‘মধ্য-ফেব্রæয়ারির ছাত্রআন্দোলন ও পরবর্তী রাজনীতির গতিপ্রকৃতি‘ শীর্ষক সেমিনার ও ‘স্বৈরাচার বিরোধী কবিতাপাঠ‘এর আয়োজন করি। তারিখ নির্ধারণ করি ২৭ ফেব্রæয়ারি। প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সেমিনার ও কবিতাপাঠ অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাজনৈতিক নেতারাও আলোচক হিশেবে অর্ন্তভুক্ত হন। এই সেমিনারে অভূতপূর্ব সাড়া মেলে। রাজনৈতিক নেতারা যেভাবে অংশগ্রহণ করেন, বিপুল পরিমাণ রাজনৈতিক কর্মীরাও শ্রোতা হিশেবে উপস্থিত হতে দেখা যায়। তরুণ কবি এবং আবৃত্তি শিল্পীরা মঞ্চ কাঁপানো কবিতা পড়েন। অনুষ্ঠানটি এতোই সফল হয়Ñশহরের মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে সাহসী পদক্ষেপের কথা। এ সফলতায় আমরা শক্তি পাই। অনুপ্রেরণা ও মুগ্ধতায় ২৬ মার্চে ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচী নিতে উদ্ধুদ্ধ হই।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস। ‘শিকড়’নামে সংকলন প্রকাশের উদ্যোগ নিই। সেমিনার ও স্বরচিত কবিতাপাঠ,স্থান ‘প্রান্তিক মিলনায়তন’। লিটল থিয়েটারের ক্ষুদে বন্ধুরাও আমাদের অনুষ্ঠানকে সফল করে তুলতে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজে।
ধীরে ধীরে রাজনৈতিক কর্মীরাও পুরোদস্তু যুক্ত হয়ে পড়ে আমাদের কাজে। আরো যুক্ত হন শিক্ষক,সাংবাদিক, লেখক,বুদ্ধিজীবী শ্রেণীপেশার মানুষ। সবার অংশগ্রহণে সৃজনশীল ও বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনার ক্ষেত্র শাণিত হতে থাকে। সামরিক স্বৈরাচারকে উপড়ে ফেলার দায়বদ্ধতা সমাজে পরিস্ফুট হয়। শিকড় সংকলনে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কবিরাও লেখেন। সুধিসমাজে শিকড় প্রকাশনা সমাদৃত হয়।
আসে পয়লা বৈশাখ। নববর্ষে বৈশাখিমেলার আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিই। এর আগে উদীচী এককভাবে ছোট পরিসরে মেলার আয়োজন করে আগের বছর। আমরা অন্যান্য প্রগতিশীল সংগঠনগুলোকে সংযুক্ত করে বড় আকারে মেলার প্রস্তুতি নিতে থাকি। মেলা উপলক্ষে একটি সংকলন প্রকাশের উদ্যোগও বাদ যায়নি। সিলেট শহরের মীরাবাজার মডেল হাইস্কুলের মাঠে মেলার স্থান নির্বাচন করা হয়। সূর্য ওঠার আগেই নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে উদ্বোধনী হয় মেলার। উদ্বোধন করেন কবি দিলওয়ার ও বাউল কবি শাহ আবদুল করিম। বিভিন্ন সংগঠন রকমারি বাঙালি ঐতিহ্যিক পশরার বর্ণাঢ্য স্টল দেন। আমরা শিকড়ের পক্ষ থেকে বইয়ের স্টল দিই। আলোচনানুষ্ঠানে অংশ নেন শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, লেখক কবি সাহিত্যিক ও সাংবাদিকরা। শিশু ও বড়দের অংশগ্রহণে গান, কবিতাপাঠ, আবৃত্তি, নৃত্য, নাটক, হাডুডু খেলাসহ ঐতিহ্যিক নানান সাংস্কৃতিক কার্যক্রম দিনব্যাপী চলতে থাকে। মেলায় শহরের সর্বস্তরের মানুষ উপচে পড়ে। মেলার সফলতা ছিল অভাবনীয়, সাধারণ মানুষের ভীড় কর্তব্যরত স্বেচ্ছাসেবকদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়।
এসব অনুষ্ঠানের সফলতার পর শিকড় থেকে নিয়মিত আবৃত্তি ও স্বরচিত কবিতা পাঠের উদ্যোগ নিই। মৌলবাদ ও সামপ্রদায়িকতা বিরোধী ও প্রতিবাদের কবিতা পাঠের আসর। নজরুল, রবীন্দ্র,সুকান্ত জয়ন্তী ব্যাপক কর্মসূচীর মাধ্যমে পালন করি। ১৫ ফেব্রæয়ারি কবি জীবননান্দ দাশের জন্ম দিবস। এদিনে কবিকে নিয়ে ভিন্নধর্মী আয়োজন ছিলো উল্লেখযোগ্য। শিকড়ের ব্যানারে প্রতিটি অনুষ্ঠানই এতোই জনপ্রিয়তা পায়, যার ফলশ্রুতিতে আমাদের সংগঠনটি অল্পদিনেই সকলের প্রিয় হয়ে ওঠে। এদিকে, মৌলবাদীদের যে সংগঠনগুলো এতোদিন দাপট দেখাচ্ছিলোÑআমাদের কার্যক্রমে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। একুশে ফেব্রæয়ারিকে ‘শহীদ দিবস’ না বলে ভাষা দিবস,বৈশাখিমেলাকে না-জায়েজ বলা থেকে বিরত হয়ে পড়ে। আমাদের প্রতিবাদী আয়োজন তাদের জন্য এ সময় কুঠারাঘাত ছিলো।
কিছুদিনের মধ্যে ‘দিনপনেরো‘ নামে প্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারার একটি নিয়মিত সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ শুরু করি। শুভেন্দু ইমাম সম্পাদক ও হামিদ মোহাম্মদ প্রকাশক। মুদ্রনে মাহবুব আহসান। মাহবুব আহসানের প্রেস ব্যবসা। প্রেসের নাম ‘মোহাম্মদী প্রেস’। তার প্রেসে রাত জেগে শিকড়ের প্রæফ দেখার ফাঁকে এ বুদ্ধি আসে।‘দিন পনেরো‘ দু সংখ্যা বেরুনোর পর একদিন পুলিশ এসে প্রেসে হানা দেয়। ধরে নিয়ে যেতে চায়, প্রেসের মালিক মাহবুব আহসানকে। মাহবুব আহসান এ সময় প্রেসে ছিলেন না। ছিলেন তার দুলাভাই। তার দুলাভাই দাঁতের ডাক্তার। পাশের রুমে চেম্বার। তিনি সামাল দিলেন। কৌশলে ‘দিনপনেরো‘র সব কপি ড্রেনে ফেলে দিলেন। এ ঘটনার পর দিনপনেরো প্রকাশে বিঘœ ঘটে। আমরা পুলিশের চোখ এড়ানোর জন্য ‘দিনপনেরো‘ প্রকাশনা বন্ধ করে দিই। তবে পুলিশ ‘শিখা‘ নামে একটি পত্রিকার তথ্য জানতে চেয়েছে। ১৯২৯ থেকে ১৯৩১ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিশেবে ঢাকার প্রগতিমনা লেখক গোষ্ঠী মুখপত্র ‘শিখা’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। করিতকর্মা পুলিশের খাতায় নিষিদ্ধ ঘোষিত এ পত্রিকার তথ্যটি আজও রয়েছে। এই ধারণা অমূলক নয়। তবে যে বা যিনি ‘দিনপনেরো‘ সম্পর্কে পুলিশের কাছে কোন তথ্য দিয়েছে, ঔই সোর্সও বিভ্রান্তিতে পড়েছে। কেননা, ‘দিনপনেরো‘র ওপরের বাম পাশে একটি প্রজ্জ্বলিত শিখার মনোগ্রাম ছিল।
অন্যদিকে, আমাদের নিয়মিত আড্ডার জায়গা হয়ে ওঠে প্রান্তিক। রাতে নাটকের অভিনয় ও আবৃত্তির মহড়া, পরে তাস খেলা। ঝালমুড়ি,চা বিস্কুট চলে রাতভর। কোন কোন রাতে কবুতর ধরে রান্না করে খাওয়া। প্রান্তিকের ঘরটিতে ছিল টিনের চাল। ছাদ ছিল মুলি বাঁশের। ছাদেই আশ্রয় নিতো শতাধিক কবুতর। টেবিলের ওপর চেয়ার তুলে হাত বাড়িয়ে কবুতর ধরতাম। ছাদে আলো না থাকায় কবুতর টের পেতো না। অন্ধকারে নাকি কবুতর চোখে দেখে না। তাই, কবুতর ধরতে অসুবিধা নেই। কবুতর ধরে জবাই করে বস্তায় ভরে চলে যেতাম বন্ধু আফতাবের বাসায়। আফতাব একা থাকতেন। সেখানে চলতো রান্না,তাস খেলাও। ভুরিভোজ করে গভীর রাতে বাসায় ফেরা। এসবের ভেতরেই চলতো ‘শিকড়‘র কর্মসূচী প্রণয়ন।
এমনি একদিন একজন লোক দেখে ফেলে কবুতর জবাই করার দৃশ্য। ভদ্রলোক তো মারমুখো। বিষয়Ñশাহজালালের কবুতর খাওয়া নিষেধ। শাহজালালের দরগা প্রান্তিকের কাছেই। সিলেটে একটি কিংবদন্তী চালু আছে, কবুতর শাহজালালের সঙ্গী হয়ে আরব দেশ থেকে এসেছিল নাকি! তাই, একে খাওয়া মানা। অনেক লোক এসব কবুতরকে নিয়ে চালু এই কথা বিশ্বাস করে ও মান্য করেই চলে। আমাদের এই অমান্য কাÐ লোকটি বরদাস্ত করতে পারেনি, ধমকাতে শুরু করে। রাগে গোস্সায় কবুতর ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপাচাপি করতে থাকে। আমরা প্রথমে তর্ক জোড়লেও পরে কাচুমাচু করি। দেখলামÑভদ্রলোককে সামাল দেয়া মুষ্কিল। অতএব তার কথায় সায় দেয়াই উত্তম। বেগতিক দেখে তাকে সম্মান দিয়ে বলিÑবাবা আর এসব করবো না, ভুল করেছি, আমাদের জানা নেই।
পরের দিন বিকেলে আবৃত্তির মহড়া চলছে। শুভেন্দু ইমাম, হামিদ মোহাম্মদ, আজিজ আহমদ সেলিম, নুরুজ্জামান মনি, সামসুল আলম,মাহবুব আহসান, হোসনে আরা হেনা,শামীমা চৌধুরী, নাসরিন চৌধুরী, সেলিনা তরপদার, আমি আহমেদ আজাদ ও শোয়েব নিজাম সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছি প্রান্তিকে। আবৃত্তির মহড়াও চলছে। সেলিনা তরপদার, শামীমা চৌধুরী, নাসরিন চৌধুরী কবতুর নিয়ে আগের দিনের সন্ধ্যার ঘটনা জেনে ফেলে। এ নিয়ে তারা টাট্টা-মসকারা ও হাসাহাসি শুরু করে। আমাদের বীরত্বকে নিয়ে তাদের যতসব কথা। আবুল ও বাবুল নামে দু’ভাই বারান্দায় রাতে ঘুমাতো। দিনে ভিক্ষা করতো। দু’ভাইয়ের মধ্যে একজনের একটি হাত অকেজো, বাকা ধরনের। আরেক জনের পা শর্ট, পঙ্গুই বলতে হয়। ওরা আমাদের ফুট-ফরমায়েস শুনতো। বিনিময়ে আমরা পাঁচ দশ টাকা বখশিস দিতাম। শামীমা ও নাসরিন মেয়েদের গ্রæপে স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড। শামীমা হাত নেড়ে বললো, আজকে বীরপুরুষদের খবর আছে, দেখি কেমন বীর পুরুষ। বাবুলকে ডেকে বললো, সাহেবদের কাছ থেকে টাকা নে, ঝালমুড়ি আর চা নিয়ে আয়। আমরা সবেমাত্র তাস নিয়ে বসেছি, মহড়া শেষ। আমাদেরও চা খাওয়ার ইচ্ছে। পকেটে হাত দিয়ে যে যত পারি দিলাম।
মাহবুব আহসান হেসে বললো, কিসের বীরত্ব, শুনি?
বীরত্ব! আহা বাবুরা! ধরা খাইছেন শুনছি। ফাহিমা বললো।
সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে অসুবিধা হয়নি। বাবুলের টাকা নেয়ার সময় তার হাসি থেকেই বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়। সে ওদের কাছে ফাঁস করে দিয়েছে গত সন্ধ্যার ঘটনাটি। আমরা এক ধরনের সমস্বরে বললাম ,এটা আবার কিসে ধরা খাওয়া। সামরিক শাসন ডরাই না, ওটা তো একটা ফালতু ঘটনা, ফালতু লোকও।
শামীমা মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললো, কেন এটা তো একটা প্রথা। আপনারা তো মুখে বলেন প্রথাবিরোধী। অথচ প্রথার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারলেন না। একটি মাত্র লোক, তাও পথচারিÑতার কাছেও মাফ চাইছেন শুনেছি।
নাসরিন বললো, মাফ চাইলেন, তবে প্রথা ভাঙবেন কিভাবে?
আমরা হাসলাম। বললাম, এটা প্রথা নয় অন্ধ বিশ্বাস। মানুষের অন্ধ বিশ্বাস একদিনে যাবে না।
আমি এই সময় সেলিনা তরপদারের প্রতি ইঙ্গিত করে বললাম, শুনেছি, আমাদের প্রিয় এক কবি প্রথা ভাঙতে উদ্যত। পারবেন?
শোয়েব কথা কেড়ে নিয়ে একজনকে ইঙ্গিত করে বললো, আমি তো তোমাকে নিয়ে পালাবো, প্রথা ভাঙা হবে না?
নাসরিন টা-টা করে কাটফাটা হাসি দিয়ে বললো,আরে ব্যাটারে,কী ব্যাটা অইছেন,পালাইবেন,আমার মা-বাবার কাছে বলতে সাহস নেই,পালাতে চান! ওরা কি এমনি এমনি দুধকলা খাইয়ে বড় করেছে,তোমার মতো ভুয়া বীরপুরুষকে জামাই বানাবে! বাতাস করেন!
সেলিনা তরপদার এতোক্ষণ হাসছিল একটু একটু। মুখ খোলে। সখেদে বলে ওঠে তখনÑপুলিশের ডরে ড্রেনে গেছে ‘দিনপনেরো‘পত্রিকা। কচুরতলে কে ছিলো তখন? আমরা জানি না? সমাজ বদলাবেন কিভাবে, আজ আবার অন্ধবিশ্বাসের কাছেই কুপোকাত!
ড্রয়ার থেকে পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ নিয়ে কুটে নাসু। ট্রে ধুয়ে আনলো শামীমা। মুড়ি আর চানাচুর মিশিয়ে ছোট বাটিতে ওরা হাতে তুলে দিল আমাদের। চপচপ ঝপঝপ করে খাওয়া শুরু। ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে দিল বাবুল।
ঝাল কাঁচা মরিচের ঝাঁজে চো চো করে নাসু বললো, বাবুদের মধ্যে ত্যাজ আছে দেখি। সবাই একচোট হাসি ছড়িয়ে নাসুর ইঙ্গিতপূর্ণ কথায় আমি বলে উঠিÑসই-রা সাথে থাকলে বাতির ত্যাজ বাড়ে, তীব্র ত্যাজে জ্বলে ওঠে, নেবে না।
–মানে? শামীমার প্রশ্ন।
–না,আমরা জ্বলে উঠি। আন্ধাইর ঘরে আলো দেখি।
–বুঝেছি, আমরা সাথে থাকলে মেলেটারির মেশিনগানের সামনেও দাঁড়াতে সাহস বাড়ে! নাসু ফোড়ন কাটে। এই কথা বলে হাসতে থাকে।
–তাইতো। একুশে ফেব্রæয়ারি রেজিস্ট্রি মাঠে সাহস দেখালাম না? বললো, মাহবুব আহসান।
–হুম। সবাই এক সুরে বলেই হেসে ওঠে।
একটু সিরিয়াস হয়ে নাসু বলে, দেখা যাক কে কত সাহসী। সামনে দিন আসছে। দেখা যাবে।
আমি একটি মিনি বক্তৃতা দিয়ে ¯েøাগানের মতো বললাম, আমরা এ সমাজ ভাঙবো,নতুন সমাজ গড়বো। মৌলবাদ নিপাত যাক। স্বৈরাচার নিপাত যাক। আমাদের ঐক্য নারীপুরুষের সখ্য।
ঐক্য ঐক্য, নারী পুরুষের ঐক্য। (চলবে)

You might also like