মাসব্যাপী ‘এ সিজন অব বাংলা ড্রামা’র সমাপ্তি:শেকড় সন্ধানী পরিবেশনাসমূহে অভিনয়-দক্ষতায় প্রশংসায় ভাসছে নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা
হামিদ মোহাম্মদ
সত্যবাণী
লন্ডনঃ টাওয়ার হ্যামলেটসে মাসব্যাপী ‘এ সিজন অব বাংলা ড্রামা’র সমাপ্তি হয়েছে ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায়। শেষ দিনের উপস্থাপনা ছিল ম্যানচেস্টারের আয়না আটর্সের প্রযোজনায় ’ঘুর্ণি’ নাটক। একই দিনে ’ঘুর্ণি’র দুটি শো’ শেষে মাসব্যাপী নাট্য উতসবের সমাপ্তি ঘটে। সমাপনি দিনে দুটি শোতেই বিপুল সংখ্যাক নাট্যবোদ্ধা ও সংস্কৃতিকর্মীদের ভীড় পরিলক্ষিত হয়। টাওয়ার হ্যামলেটসের নাট্য বিভাগের কর্মকতাদের উপস্থিতিতে দর্শক শ্রোতাদের অংশগ্রহণে সংক্ষিপ্ত এক সমাপনি সভা পরিচালনা করেন টাওয়ার হ্যামলেটসের নাট্য বিভাগের কর্মকর্তা কাজী রোকসানা বেগম। মাসব্যাপী সৃজনশীল এ আয়োজনের আগামী বছরে দর্শক ও নাট্যমোদী মানুষের আরো ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণের আশাবাদ ব্যক্ত করেন বক্তারা। সমাপনি আয়োজনে উজ্জীবিত বক্তব্য রাখেন কুইমেরী ইউনির্ভাসিটির প্রফেসর প্যানেল মেম্বার আলী ক্যাম্পবেল, কাউন্সিলের সিজন অব বাংলা ড্রাামার প্যানেল মেম্বার রোকসানা খান ও রেস্টলেস বিয়িংয়ের রহিমা বেগম ও মাবরুর আহমেদ। কাজী রোকসানা বেগম তার বক্তব্যে এবারের আয়োজনে নাট্যজন ড. সুদীপ চক্রবর্তী ও লীসা গাজীর সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।
কাজী রোকসানা এই সময় বাংলা ড্রামা’ আয়োজনের পুরো ম্যানেজমেন্ট টিমকেও পরিচয় করিয়ে দেন। একই সাথে নাট্য উতসবে অংশগ্রহণ করা সংগঠন, শিল্পী, কলা কুশলী ও সংগঠনের কর্মকর্তাদের পরিচয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সকলের অশেষ শ্রম ও সহযোগিতায় ‘এ সিজন অব বাংলা ড্রামা’ সফলতা অর্জন করেছে বলে মন্তব্য করেন সবাই। পরিচয় পর্বে দর্শক শ্রোতাবৃন্দ মুর্হূর মুর্হূর করতালিতে আনন্দ প্রকাশ করেন। সমাপনি অনুষ্ঠান শেষে দর্শকশ্রোতা ও অতিথিদের সম্মানে নৈশভোজ অনুষ্ঠিত হয়। নৈশভোজের আয়োজন করেন টাওয়ার হ্যামলেটস কর্তৃপক্ষ। সমাপনি অনুষ্ঠানের শুরুতে ’গাজা’ ও বিশ্বব্যাপী মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধকে ধিক্কার জানিয়ে একটি স্বরচিত কবিতাপাঠ করেন ড. ক্যানন সালিহ।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে শুরু হওয়া এ সিজন অব বাংলা ড্রামা বহুভাষী ও বহুবর্ণের মানুষের মাঝে বরাবরের মতো এবারও প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি করে। সবচেয়ে লক্ষণীয় ছিল বাাঙালি-ব্রিটিশ নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণ। বাংলা, ইংরেজি ছাড়াও দ্বিভাষিক সংলাপ ও কথোপকথনে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের সাবলীল উচ্চারণ ও অভিনয় ছিল প্রশংসনীয় ও আশা জাগানিয়া। মোদ্দাকথা, শেকড় সন্ধানী এবারের সৃজনশীল পরিবশেনাসমূহে অভিনয় দক্ষতায় প্রশংসায় ভাসছে নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা। সমাপনি সপ্তাহের সাংস্কৃতিক ও নাট্য আয়োজনের মধ্যে ছিল বৈচিত্রপূর্ণ পরিবেশনা। এর মধ্যে ২২নভেম্বর ব্রাডি আর্টস সেন্টারে ‘আশা’ (হোপ) মুভ ইউর ওয়ার্ডস’ অনুষ্ঠিত হয় রোকেয়া প্রজেক্টের। ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় কবি নজরুল সেন্টারে আবৃত্তি সংগঠন ছান্দসিক পরিবেশন করে কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, গান ও কথায় সমৃদ্ধ ব্যতিক্রমী আয়োজন। ছান্দসিকের কর্ণধার মুনিরা পারভীনের উপস্থাপনায় বাঙালি কবি ছাড়াও ভিনভাষী কবিও স্বরচিত কবিতা পাঠ করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন।
একই সন্ধ্যায় ‘সেড’ নাটক পরিবেশন করে ম্যাসেজ কালচারাল গ্রæপ ব্রাডি আটর্স সেন্টারে। ‘নেভারগিপ আপ হোপ’ ছিল নাটকের অন্যতম বার্তা। ২৩ নভেম্বর লাইমহাউসে অনুষ্ঠিত হয় ‘এ ওয়াকিং ট্যুর’। লীসা হ্যানলন-এর তত্ত¡াবধানে ব্রিটিশ এম্পায়রের পোর্টস, রেলওয়ে, ডকসহ নানা অর্জনের তথ্য নিয়ে হেরিটেইজ প্রদর্শন। ২৩ নভেম্বর কবি নজরুল সেন্টারে বিকালে অনুষ্ঠিত হয়’ সেইভ দি ব্রিকলেন’ চিত্র প্রদর্শনী। এছাড়া ২০ নভেম্বর শুরু হয় মাই ল্যান্ড আর্ট প্যাভেলিয়নে সপ্তাহবাপী চিত্র প্রদর্শনী ‘কালার অব বাংলাদেশ’। ২১ নভেম্বর সেন্ট মার্গারেট হাউসে অনুষ্ঠিত হয় গায়মা শেয়ারিং ইভেন্ট’। এতে বাংলাদেশী পেরেন্টেসদের কেয়ার সমস্যা নিয়ে পরিবেশনা ছিল একটি ভিন্নরকম আয়োজন। ২১ নভেম্বর ‘বাঙালিয়ানা, আশা’ নামক একটি আয়োজন ছিল ‘বাঙালি হেরিটেইজ’ নিয়ে হোয়াইট চ্যাপেলের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল হলে, পরিবেশন করে ব্রিট বাংলা। ২০ নভেম্বর ‘ডাইবসিস, ক্রিয়েটিভ নেচার’ ওয়ার্কসপ আয়োজন করে ডিডলাস থিয়েটার কোম্পানি। মাইল্যান্ডের ইকোলজি প্যাভেলিয়নে অনুষ্ঠিত এ ওয়ার্কসপে অংশ নেন শিক্ষার্থীসহ সুধীজন। ২৩ নভেম্বর পপলার ইউনিয়নের হলরুমে কবিতাপাঠ, লেখালেখি বিষয়ক ওয়ার্কসপের আয়োজন করে ‘ব্রিটিশ বাইল্যাঙ্গুয়েল পয়েট্রি’ সংগঠন। কবি শামীম আজাদ ও মাইক রাগেট-এর উপস্থাপনায় ওয়ার্কসপে অংশ নেন বাঙালি ও ব্রিটিশ মূলধারার কবিরা।
উল্লেখ্য, এবাবের এ সিজন অব বাংলা ড্রামা’য় ছিল ১২ টি নাটক, তিনটি চিত্র প্রদর্শনী, ওয়ার্কসপ ৪টি, নৃত্যনাট্য ২টি, আবৃত্তি ও কবিতা পাঠ ৪টি, বাঙালি পোশাক ‘শাড়ি’ বিক্রয় ও প্রদর্শনী ১টি। প্রতিটি আয়োজনে বিপুল সংখ্যক সংস্কৃতিমনা লোকের সমাগম ছিল লক্ষণীয়। এতে প্রমাণ করে বিলাতে বাংলা ড্রামার সৃজনশীল পদচারণা উজ্জ্বল।