মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক খায়রুল হুদা চৌধুরী আর নেই
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডন: মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ভাষা সৈনিক, প্রাক্তন ন্যাপ এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নেতা খায়রুল হুদা চৌধুরী আর নেই। যুক্তরাজ্যের বর্নমাউথ শহরের স্হানীয় একটি হাসপাতালে সোমবার, ১৫ ই ফেব্রুয়ারী বার্ধক্যজনিক রোগে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮৯ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, সন্তান, নাতি নাতনী ও আত্মীয স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
খায়রুল হুদা চৌধুরীকে অনেকে জানতেন অনেক ভাবে। কেউবা চিনেছেন তাঁকে বামপন্হি ছাত্রনেতা হিসেবে, কেউ জেনেছেন স্রেফ একজন প্রবাসী পরিচয়ে। আমাদের মহান রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে খায়রুল হুদা চৌধুরী পরিনত হয়েছিলেন একজন ভাষা সংগ্রামী হিসেবে। জাতীয় রাজনীতিতেও অনেকটা পথ এগিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতা হিসেবে কাগমারী সম্মেলনেরও প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের কানিশাইল গ্রামের সন্তান জনাব খায়রুল হুদা।
কিন্তু সে সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতার কারনে আরো অনেকের ন্যায় তাকেও দেশত্যাগী হতে হয়েছিল। সাত সমুদ্র তেরো নদী অতিক্রম করে বসতি গড়েন বিলেতে। কিন্তু সেখানে বাস করেও দেশের রাজনীতি নিয়ে ভাবতেন অবিরত, অবদান রাখারও প্রয়াস চালাতেন। অন্যান্য সকল প্রবাসী বামপন্হিদের নিয়ে বাঙালি জাতির সকল গনতান্ত্রিক আন্দোলনের সমর্থনে বিলেতের জমিনেও আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়াস নিতেন এই দেশপ্রেমিক মানুষটি। ১৯৬৬, ৬৮, ৬৯ এবং ১৯৭১ সালে ব্রিটেন কাঁপানো আন্দোলনে তাঁর ভূমিকার কথা এখনও স্মরণ করেন ব্রিটেনে বসবাসকারী প্রবীণ বাঙালিরা। ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে খায়রুল হুদার ছিল গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত সংগ্রহের পাশাপাশি ঐসময় এক পর্যায়ে ভারতে গিয়ে ন্যাপ–কমিউনিস্ট পার্টির ক্যাম্প পরিচালনায় অংশ গ্রহণ করেন তিনি।
স্বাধীনতার পর পরই খায়রুল হুদাদের উদ্যোগে বিলেতে গঠিত হয় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, ন্যাপের শাখা। আর এর প্রধান নেতাদের অন্যতম ছিলেন খায়রুল হুদা চৌধুরী। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তিনি যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ব্রিটেনে বাঙালির সকল রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহন ছিল তাঁর। ৮৯ বছর জীবনের মাত্র ২৫ বছর জন্মভূমিতে অতিবাহিত করলেও এক মূহুর্তের জন্যও দেশপ্রেমে ঘাটতি পড়েনি দেশ পাগল এই মানুষটির। সব সময়ই তাঁর হৃদয় জুড়ে ছিল বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।