মৃত্যু ঘিরে হারিছ চৌধুরী হঠাৎ আলোচনায়
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ ১৪ বছর ধরে ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী। ২০০৭ সালের আলোচিত এক-এগারোর পর পালিয়ে যান, তারপর আর নির্দিষ্ট করে খোঁজ পাওয়া যায়নি। সেই তিনিই হঠাৎ করে এসেছেন আলোচনায়। তবে মৃত হিসেবে এবং রীতিমতো সেখানেও রয়ে গেছে রহস্য। তার এক চাচাতো ভাইয়ের দাবি, তিনি মারা গেছেন প্রায় চার মাস আগে;যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। কিন্তু তার দলের এক নেতার ভাষ্য, হারিছ চৌধুরী ঢাকায় ছিলেন এবং মারা যাওয়ার পর ঢাকাতেই তাকে দাফন করা হয়েছে।হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই কানাইঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী গতকাল বুধবার সমকালকে বলেন, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি হারিছ চৌধুরী লন্ডনে মারা যান। তার আগে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেরে ওঠার পর করোনা-পরবর্তী জটিলতায় তার মৃত্যু হয়। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।এতদিন মৃত্যু সংবাদ গোপন রাখার ব্যাপারে আশিকের ভাষ্য, হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় জানতে দেরি হয়েছে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হারিছ চৌধুরী। পাশাপাশি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তার সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। এই মামলায় খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে ছিলেন। এ ছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা ও বিস্ম্ফোরক মামলার আসামি হারিছ চৌধুরী। এক-এগারোর সময় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন।সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘদিন খুঁজেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এই রাজনৈতিক সচিবের সন্ধান পায়নি। এই সময়ে তিনি লন্ডন, পাকিস্তান, ভারতসহ বিভিন্ন স্থানে ছিলেন বলে প্রচারে আছে।হারিছ চৌধুরীর পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবি করেছে, হারিছ শিক্ষক পরিচয়ে চেহারা পাল্টে ঢাকায় আত্মগোপন করেছিলেন। মৃত্যুর পর তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
রাজধানীর মিরপুরে বড় বোনের সঙ্গে হারিছের যোগাযোগ ছিল জানিয়েছেন জেলা বিএনপি নেতা আবুল কাহির চৌধুরী। তার ভাষ্য, ঢাকায় মারা যাওয়ায় মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা হয়নি।
সিলেট জেলা বিএনপি নেতা আবুল কাহির চৌধুরী দাবি করেছেন, হারিছ চৌধুরী ঢাকায় ছিলেন এবং মারা যাওয়ার পর তাকে ঢাকায় দাফন করা হয়েছে। রাজধানীর মিরপুরে বসবাসকারী তার বোনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বলেও জানান ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে সিলেট-৫ আসনের এই সংসদ সদস্য।কাহির চৌধুরী সমকালকে বলেন, আত্মগোপনে যাওয়ার পর হারিছ চৌধুরী কানাইঘাট সীমান্ত হয়ে ভারতে গিয়েছিলেন। পরে আবার জকিগঞ্জ হয়ে দেশে ফিরেছিলেন। তখন তার সঙ্গে দেখাও হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা-সাক্ষাৎ বা যোগাযোগ হয়নি। কানাইঘাটের একজন কলেজ শিক্ষকের মাধ্যমে তিনি হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ পেয়েছেন বলে জানান। মৃত্যুর পর হারিছ চৌধুরীর লন্ডন প্রবাসী ছেলে দেশে এসেছিলেন বলেও দাবি কাহির চৌধুরীর।পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে হারিছ চৌধুরী সবার বড় ছিলেন। তবে মিরপুরের বাসিন্দা বোন আমেনা ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড়। এই পরিবারের ঘনিষ্ঠ কানাইঘাট বিএনপির এক নেতা বলেন, হারিছ চৌধুরীর কিছুদিন আগে তার ছোট ভাই সেলিম চৌধুরী মারা যান। তিনিও ঢাকায় বসবাস করতেন।
তবে আশিক চৌধুরী তথ্য অস্বীকার করে ওই নেতা বলেন, হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে কারও যোগাযোগ ছিল না; তাদের কেউ বাড়িতেও আসেনি। তিনি মারা যাওয়ার পর আমরা জেনেছি। বর্তমানে হারিছ চৌধুরীর স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা লন্ডনে বসবাস করছেন।
হারিছ চৌধুরীর সবচেয়ে ছোট ভাই কামাল চৌধুরী গ্রামেই থাকেন। তিনি সমকালকে বলেন, ‘বড় ভাই মারা গেছেন বলে শুনেছি। তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না।’গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর হারিছ চৌধুরীর ছবি দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন আশিক চৌধুরী। সেদিন ‘ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন’ লিখে দেওয়া স্ট্যাটাসের পাশাপাশি হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে খালেদা জিয়ার ছবি সংযুক্ত করেছিলেন। সেই স্ট্যাটাসের নিচে বিএনপি ঘরানার অনেকে মন্তব্য করে হারিছ চৌধুরীর সুস্থতা কামনা করেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার নিজের ছবির সঙ্গে হারিছ চৌধুরীর ছবি যুক্ত করে আশিক চৌধুরী ফেসবুকে নিজের ওয়ালে আবারও লেখেন- ‘ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধন’। এতে অনেক মানুষের ‘ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন’ মন্তব্য দেখা যায়।আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় হারিছ চৌধুরীকরোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। এক পর্যায়ে করোনামুক্ত হলেও তিনি ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছিলেন।আশিক চৌধুরী জানান, হারিছ চৌধুরীর স্ত্রী জোসনা আরা চৌধুরী, ছেলে নায়েম শাফি চৌধুরী ও মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। তিনিও সেখানে ছিলেন বলে শুনেছি। অসুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসা নিয়েছেন।লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর কথা বললেও সেখানে কোনো হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তা জানেন না বলে দাবি করেন আশিক চৌধুরী। তিনি বলেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি।
সিলেটের সীমান্তবর্তী কানাইঘাট উপজেলার দিঘিরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের দর্পনগর গ্রামে হারিছ চৌধুরীর বাড়ি। ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পর হারিছ চৌধুরী তার স্ত্রী জোসনা আরা চৌধুরীকে নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটি জানায়, গভীর রাতে হারিছের ব্যক্তিগত সহকারী আতিক তাকে জানান, ঢাকায় বিএনপি নেতাদের বাসভবনে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। এর কয়েক ঘণ্টা পর যৌথ বাহিনী হারিছের বাড়িতেও হানা দেয়। তবে তার আগেই তিনি সরে পড়েছিলেন। কিছুদিন সিলেটে এখানে-সেখানে লুকিয়ে থাকার পর ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে ভারতে চলে যান। ভারতের আসামে করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরে তার নানাবাড়ি। সেখানেই তিনি ওঠেন। সেখান থেকেই বিদেশে যাতায়াত করতেন। সূত্র: সমকাল