মৃত্যুফাঁদ সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ১৩ দিনে ঝরলো ২৩ প্রাণ
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ একের পর এক দুর্ঘটনায় দিনে দিনে মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। প্রায় প্রতিদিনই ছোট-বড় অসংখ্য দুর্ঘটনায় হতাহত হচ্ছেন শত শত মানুষ। শুধু গত ১৫ দিনেই এই মহাসড়কে ২৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে যানবাহনের বেপরোয়া গতি, অপ্রশস্ত রাস্তা আর ট্রাফিক আইন অমান্য করাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।৭ জুন বুধবার ভোরে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার কুতুবপুর এলাকায় একটি আলুবাহী ট্রাক ও শ্রমিক বহনকারী পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ১৪ জন নিহত হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এই ঘটনায় আরও একবার আলোচনায় এ মহাসড়কটি। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন আরও অনেকে।পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগর থেকে পিকআপে (সিলেট-ন ১১-১৬৪৭) করে প্রায় ৩০ জন নারী-পুরুষ নির্মাণশ্রমিক জেলার ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার যাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার কুতুবপুর নামক স্থানে পৌঁছলে মুনশীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী বালুবাহী ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো-ট ১৩-০৭৮০) সঙ্গে শ্রমিক বহনকারী পিকআপের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ১১ জন মারা যান। হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান আরও ৩ জন।
এরআগে গত ৪ জুন ভোরে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জের সুদিয়াখলা এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে ৩ যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
নিহতরা হলেন, জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের মুসা মিয়া (৬৪), বানিয়াচং উপজেলার রঘু চৌধুরী পাড়া গ্রামের জিয়াউর রহমান (৩৬) ও চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা গ্রামের বাসিন্দ অটোরিকশা চালক রফিক মিয়া (৩৫)।৩ জুন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবপুর উপজেলায় কাউছারনগর এলাকায় পিকআপ ভ্যানের চাপায় মো. ফরিদ মিয়া (৪০) নামে এক পথচারী নিহত হন। নিহত ফরিদ মিয়া সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার জয়বর্ধনপাড়ার মৃত গোলাম আজম তালুকদারের ছেলে।
শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মঈনুল ইসলাম ভূইয়া জানান, সকালে সিলেটমুখী একটি পিকআপ ভ্যান মহাসড়কের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা ফরিদ মিয়াকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।২৬ মে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একই এলাকায় বাসের চাপায় রোজিনা খাতুন (৩২) নামে আরেক পথচারী নারীর মৃত্যু হয়।একই দিন ২৬ মে কিশোরগঞ্জ থেকে ১৯ যাত্রী নিয়ে সিলেটে মাজার জিয়ারতে যাওয়ার পথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাহুবলের মৌচাক এলাকায় ৩ নারী যাত্রী নিহত এবং শিশুসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি মাঈনুল ইসলাম বলেন, পিকআপ ভ্যানটি ১৯ জন যাত্রী নিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। মৌচাক এলাকায় ঢাকামুখী একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই পিকআপ ভ্যানের ৩ নারী যাত্রীর মৃত্যু হয়। এছাড়া শিশুসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।একই দিনই ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবপুর আন্দিউড়া এলাকায় অজ্ঞাত গাড়ির চাপায় সিএনজি অটোরিকশা চালক নিহত হয়।সিলেট জোনের হাইওয়ে পুলিশ বলছে-সড়কে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। স্পিডগান ব্যবহার করে বেপরোয়া যানগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে চালকরা কেউ কাউকে সমীহ করতে চায় না। একই গাড়ি অপর গাড়িকে সুযোগ দিতে চায় না। এছাড়াও রাতে চালকরা বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। আর অসচেতনতা তো আছেই। তারা সুযোগ পেলেই ইচ্ছেমতো গাড়ি চালান। এজন্য দুর্ঘটনাগুলো হয়।