যুদ্ধ নয়, আমরা শান্তিতে বিশ্বাসী : প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

চট্টগ্রাম: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যুদ্ধের জন্য নয়, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য।’ তিনি সশস্ত্র বাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের শান্তিপ্রতিষ্ঠায় সদা-প্রস্তুত থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন।রোববার চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির (বিএমএ) ৮৩তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের রাষ্ট্রপতি প্যারেড অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।প্রধানমন্ত্রী মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রমহারা ২ লাখ নারী এবং ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বুলেটে নিহত তার পরিবারের সদস্যদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর জন্ম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একটি পেশাদার, প্রশিক্ষিত ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।তিনি এসময় অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ক্রয়, প্রতিরক্ষানীতি প্রণয়নসহ বঙ্গবন্ধুর গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।বঙ্গবন্ধু কন্যা জানান, ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নবীন সামরিক কর্মকর্তাদের পেশাগতভাবে দক্ষ, নৈতিক গুণাবলী সম্পন্ন এবং দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

‘দুর্ভাগ্য, জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে একাত্তরের পরাজিত শক্তির এদেশীয় দোসররা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতার ইতিহাসকে কলঙ্কিত করে এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে।দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে নানা উদ্যোগ নেয় উল্লেখ করে সেসব কার্যক্রম তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠনের পর প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করছি। আমরা ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করছি। ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষানীতিকে যুগোপযোগী করে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষানীতি, ২০১৮’ প্রণয়ন করেছি। অ্যারোস্পেস ও এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা সিএমএইচগুলোকে অত্যাধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরিত করেছি।’

‘দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে আমরা সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন, রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং বরিশালে ৭ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। বিগত ৪ বছরে বিভিন্ন ফরমেশনের অধীনে ৩টি ব্রিগেড এবং ছোট-বড় ৫৮টি ইউনিট প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। সম্প্রতি মাওয়া-জাজিরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শেখ রাসেল সেনানিবাস এবং মিঠামইন, রাজবাড়ী ও ত্রিশালে নতুন সেনানিবাস স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আর্মি এভিয়েশনের ফরোয়ার্ড বেস এবং লালমনিরহাটে এভিয়েশন স্কুল নির্মাণের কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।সেনাবাহিনীতে নতুন কম্পোজিট ব্রিগেড ও প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড যুক্ত করার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘প্রতিটি বাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক এবং যুগোপযোগী অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে।নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের এই শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তোমাদের ওপর ন্যস্ত হলো দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে পাসিং আউট ক্যাডেটদের উদ্দেশে বলেছিলেন—‘আমি তোমাদের জাতির পিতা হিসাবে আদেশ দিচ্ছি, তোমরা সৎ পথে থেকো, মাতৃভূমিকে ভালোবেসো। ন্যায়ের পক্ষে দাড়াবা, গুরুজনকে মেনো, শৃঙ্খলা রেখো, তা হলে জীবনে মানুষ হতে পারবা’।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তোমাদের মনে রাখতে হবে, তোমরা এ দেশের সন্তান; জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই তোমাদের সবাইকেই সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্নার সমান অংশীদার হতে হবে। সুযোগ্য নেতৃত্ব, সার্বিক দিক-নির্দেশনা, পেশাদারিত্ব, দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার মাধ্যমে তোমাদের দেশের সেবা করে যেতে হবে। দেশপ্রেমের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই তোমাদের পেশাগত জীবনের প্রধান ব্রত।আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যুদ্ধের জন্য নয়, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তোমাদের সদা-প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জনকারী একটি দেশ, একটি জাতি। মনে সাহস রেখে, মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে তোমরা চলবে এবং নিজেদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তুলবে।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আজকের নবীনরাই আগামীর উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দ্যারিদ্রমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবো, ইনশাআল্লাহ।’

You might also like