রাজধানীর পশুর হাটের প্রস্তুতি শেষ, বেচাকেনা শুরু কাল
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ রাজধানীর ১৬টি অস্থায়ী ও ১টি স্থায়ী হাটে আগামীকাল থেকে কোরবানির পশু কেনাবেচা শুরু হবে।এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ১১টি এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ৬টি হাট ইজারা দেয়া হয়েছে।করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পশু কেনাবেচার যাবতীয় প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন।
ডিএসসিসি এলাকার ১১টি পশুর হাটের মধ্যে রয়েছে- কমলাপুর লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন গোপীবাগ বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্ট্রেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, আফতাবনগর ব্লক-ই, এফ জি এর সেকশন ১ ও ২ নম্বর এলাকা, হাজারীবাগ লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের পাশে ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উম্মুক্ত জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের খালি জায়গা এবং রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা।
ডিএনসিসি এলাকায় ৬টি পশুর হাট বসবে। ৬টি হাটের মধ্যে ১টি স্থায়ী এবং ৫টি অস্থায়ী হাট। স্থায়ী হাটটি গাবতলীতে বসবে। অস্থায়ী ৫টি হাট হচ্ছে- উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ ভবন পর্যন্ত খালি জায়গা, কাওলা শিয়াল ডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজ সংলগ্ন মস্তুল ডুমনী বাজারমূখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গা, ভাটারা (সাইদ নগর) পশুর হাট এবং উত্তরখান মৈনারটেক হাউজিং প্রকল্পের খালি জায়গা।
এছাড়া করোনাভাইরাসের গণসংক্রমণ রোধে ই-কমার্স অব বাংলাদেশ (ইক্যাব) এর সহায়তায় অনলাইনে কোরবানি পশু কিনে অনলাইনের মাধ্যমে কোরবানি, মাংস প্রক্রিয়াকরণ এবং বাসায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছে এই সিটি কর্পোরেশন। করোনাভাইরাসের গণসংক্রামণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রেতা-বিক্রেতারা যাতে হাটে গরু বেচাকেনা করতে পারে এজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে ডিএসসিসি’ প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন বলেন, ‘ডিএসসিসি এলাকার ১১টি পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ১১টি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি কমিটিতে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকছে। আমাদের নির্ধারিত গাইডলাইনের বাইরে কোন অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে সাথে-সাথে তারা ব্যবস্থা নেবেন। এমনকি সংশ্লিষ্ট হাটের ইজারা বাতিল করা হবে।’
ডিএনসিসি’র প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ডিএসসিসি এলাকার পশুর হাটে আগামীকাল থেকে কোরবানির পশু কেনাবেচা শুরু হবে। ঈদের দিন পর্যন্ত হাট চালু থাকবে।তিনি জানান, কোরবানি পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি ও অন্যান্য শর্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা মনিটরিংয়ের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। কমিটির আহবায়ক ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মফিজুর রহমান।সদস্যরা হলেন ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আফসার উদ্দিন খান; ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইসমাইল মোল্লা;১৪ নম্বর ওয়ার্ড মো. হুমায়ুন রশীদ; ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইসহাক মিয়া; ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জাকির হোসেন; ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নুর ইসলাম; ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন; ১০ নম্বর সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর হামিদা আক্তার মিতা; এবং ১৭ নম্বর সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর জাকিয়া সুলতানা।
এছাড়া প্রতিটি হাটে একটি করে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে। স্বাস্থ্যবিধি ও অন্যান্য শর্ত মেনে চলছে কিনা তা নিশ্চিত করতে একটি করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলে তিনি জানান।এছাড়াও হাটের আইনশৃঙ্খলা ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভেটেরিনারি বিভাগের একাধিক টিমসহ বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগে সার্ভিলেন্স টিম গরুর হাটে মোতায়েন থাকছে।
হাট ইজারা গ্রহীতাদের জন্য অবশ্যপালনীয় শর্তগুলো হলো- গবাদি পশুর হাট ঈদের দিনসহ মোট ৫ দিন চালু থাকবে। নির্ধারিত তারিখের বেশী দিন হাট পরিচালনা করা যাবে না। কোরবানির পশুর হাটের নির্ধারিত সীমানা বহাল থাকবে। হাটের সীমানার বাইরে কোন হাট বসানো যাবে না। ইজারা গ্রহীতা নিজ ব্যবস্থাপনায় হাটের চৌহদ্দি সংরক্ষণপূর্বক চৌহদ্দির বাইরে যাতে পশুর হাট প্রসারিত না হয় তা নিশ্চিত করবে। পশুর বিক্রয় মূল্যের উপর সরকার অনুমোদিত শতকরা ৫ টাকা হারে হাসিল আদায় করতে হবে; সরকারি হারের অতিরিক্ত হাসিল আদায় করা যাবে না। ইজারা গ্রহীতা নিজ খরচে বাজারে দৃশ্যমান একাধিক স্থানে সর্বসাধারণের অবগতির জন্য টোল চার্ট প্রদর্শনের ব্যবস্থা করবেন। হাট হস্তান্তর করার পূর্বে কোন টোল আদায় করা যাবে না। যথাযথ কর্তৃপক্ষ যে কোন সময় ইজারা বাতিল বলে ঘোষণা করলে ইজারা গ্রহীতা তা মেনে নিতে বাধ্য থাকবে।
করোনা সংক্রমণ রোধে ইজারা গ্রহীতাকে ইজারা প্রদত্ত অস্থায়ী পশুর হাটে বাধ্যতামূলকভাবে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। হাটের প্রবেশ পথে টিভি স্ক্রিনযুক্ত থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে প্রবেশকারীর শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করতে হবে। গায়ে জ্বর থাকলে কাউকে হাটে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। হাটে প্রত্যেক প্রবেশকারীকে হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক, হেড ক্যাপ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে হাটে প্রবেশ করতে হবে। হ্যান্ড-স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক ও হেড কভার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং এ কাজ তদারকির জন্য মনিটারিং টিম রাখতে হবে। করোনা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি সম্বলিত ব্যানার, পোস্টার টাঙ্গানোসহ এতদবিষয়ে মাইকে ধারাবাহিকভাবে প্রচার করতে হবে।
জীবাণুনাশক দিয়ে হাটের সর্বত্র ও আশে-পাশের সংশ্লিষ্ট জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ক্রেতা, বিক্রেতা ও ইজারাদারের নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট সকলকে মাস্ক, গ্লাভস,হেড কভার পড়ে হাটে আসতে হবে। হাটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাবান, পানির ড্রাম ও বেসিন রাখতে হবে। (বেসিন স্থাপনের ডিজাইন পূর্বেই ডিএনসিসি বরাবর জমা দিয়ে তা অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে)। হাটে প্রবেশ এবং বাহিরের জন্য পৃথক-পৃথক গেইট করতে হবে এবং নির্ধারিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাটে প্রবেশ/ বাহির হতে হবে। একাধিক প্রবেশ পথ হলে প্রত্যেক প্রবেশ পথেই টিভি স্ক্রিনযুক্ত থার্মাল স্ক্যানার বসাতে হবে। বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিকে হাটে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের নিমিত্তে করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়গুলো স্ক্রিনে সার্বক্ষণিকভাবে দেখাতে হবে।