রাবি অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় রিভিউর রায় প্রকাশ : রায় কার্যকরের অপেক্ষা স্বজনদের
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের রিভিউ আবেদন খারিজের রায় প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৮ বিচারপতির বেঞ্চ ২১ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করেছেন।এর ফলে এই দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরে আইনগত কোনো বাধা থাকল না। তবে তারা শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ পাবেন বলে আইনজীবীরা জানায়।অধ্যাপক ড. তাহেরের মেয়ে এডভোকেট সেগুফতা তাব্বাসুম আহমেদ বিষয়টি বাসস’কে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছরের আইনি লড়াইয়ের অবসান হলো। এখন আমরা রায় কার্যকর দেখতে অপেক্ষায় রয়েছি।নিয়মানুযায়ী, সুপ্রিমকোর্ট থেকে এ রায় রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হবে। গত ২ মার্চ অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ।
অধ্যাপক ড. এস তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ বলেন, ১৭ বছর ধরে অপেক্ষা করছি। অনেক যন্ত্রণা নিয়ে জীবন পার করছি। দুই আসামির রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমাদের ১৭ বছরের অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। আমরা সন্তুষ্ট। দ্রুত আসামিদের ফাঁসি কার্যকরের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করছি। এর ফলে এই দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরে আইনগত কোনো বাধা থাকলো না। তারা শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ পাবেন। আদেশে অপর দুই আসামি মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর বড় ভাই আব্দুস সালামের যাবজ্জীবন দন্ডও বহাল রেখেছেন আদালত। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৮ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগ বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন।আদালতে রিভিউ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এন গোস্বামী ও এডভোকেট এস এম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবি’র কোয়ার্টারের ম্যানহোলে পাওয়া যায় পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় অজ্ঞাত নামা কয়েক জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ। এ হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন। দন্ড প্রাপ্তরা হলেন: একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, নাজমুল আলম ও আব্দুস সালাম। খালাসপ্রাপ্ত দু’জন হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী। ২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন।শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দন্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দন্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট। শুনানি শেষে গত বছরের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রাখেন।