রাষ্ট্রের বন্ধু নেই,রাষ্ট্রের আছে স্বার্থ
ফেরদৌস কবির টিপু
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অনুসন্ধিৎসু পাঠক মাত্রই জানেন, রাষ্ট্রের কোনও বন্ধু নেই।রাষ্ট্রের থাকে স্বার্থ (A state has no friends but interests)। নি:স্বার্থ বন্ধুত্ব হতে পারে শুধুমাত্র মানুষের মধ্যে। কারণ মানুষ জৈবিক এবং অনুভূতিপ্রবণ প্রাণী। সে স্বার্থ ব্যতিরেকেও সম্পর্ক গড়ার আকাক্সক্ষা লালন করে। আত্মিক-মানসিক-নৈতিক সন্ত্তষ্টির জন্যে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে চায়। স্পষ্টতই রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সেসব প্রযোজ্য নয়। সুতরাং একমাত্র পারস্পরিক স্বার্থের ওপর ভিত্তি করেই দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রবিষয়ক মূল নীতির দিকে তাকালেও বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে ওঠে। সেখানে আছে ‘সবার প্রতি বন্ধুত্ব, কারও প্রতি শত্রুতা নয়’। এখানে সহজেই বোধগম্য ‘সবার প্রতি বন্ধুত্ব’ কথাটা আসলে রূপক। এর গূঢ়ার্থ হলো ন্যায়বিচার, পারস্পরিক স্বার্থ এবং সমতার ভিত্তিতে সবার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা। প্রথমেই এ বিষয়টা আমাদের উপলব্ধি করা দরকার। তারপর এ নিয়ে আমরা খোলামেলা এবং বিশদ আলোচনায় প্রবৃত্ত হতে পারি। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েন লেগেই আছে। একই সময়ে দেশে এ বিষয়ে লেখালেখি, বিতর্ক শুরু হয়েছে যা আজও অব্যাহত রয়েছে। এবং মনে হচ্ছে সাম্প্রতিককালে তা চরম বিদ্বেষপূর্ণ রূপ ধারণ করেছে।
নি:সন্দেহে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রধান চালিকাশক্তি ভারত ইস্যু। এ কথাটি অতিরঞ্জন নয়। এবং এর সপক্ষে আদতে ব্যাখ্যা করার কিছু নেই। স্পষ্টতই বাংলাদেশের রাজনীতিতে সকল দল-মতের মানুষ এই ভারত ইস্যুটিকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় গ্রহণ করে নিয়েছে। এখানে আমি নিজেদের ‘ভারত নীতি’ নিয়ে আলোচনার আগে ভারতের ‘বাংলাদেশ নীতি’ নিয়ে দু’একটা কথা বলার চেষ্টা করবো। প্রথম কথা হলো, ভারত সরকার কি আসলেই বাংলাদেশের কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলকে অধিকতর পেয়ার-মহব্বত করে? নাকি যখন যে বাংলাদেশী দল ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বার্থে যত বেশী অনুকূল নীতি গ্রহণ করে সেই মুহূর্তে ভারত সরকার ওই দলটিকে সমর্থন-সহযোগিতা দেয়? সমস্যা হলো সে প্রশ্নের জবাব না খোঁজে আমাদের মধ্যে একটা বিশ্বাস গভীরভাবে প্রোথিত হয়ে গেছে। তা হলো বাংলাদেশের একটা মাত্র রাজনৈতিক দল-ই ভারতের সব রাজনৈতিক দল সব সরকারের স্থায়ী বন্ধু। সবাই জানি এ দলটির নাম আওয়ামী লীগ। এ কথাটি আসলে কতখানি সত্য? সেটা আমরা দু’একটি ফ্যাক্টস বিবেচনায় নিয়ে সহজেই যাচাই করতে পারি, যেমন কেউ প্রশ্ন তুলতে-ই পারে, এত ‘বড়, প্রভাবশালী, এবং স্থায়ী’ ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র থাকার পরও কেনও দেশের পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে আওয়ামী লীগকে তিরিশ বছর ক্ষমতার বাইরে কাটাতে হলো? এ কেমন বন্ধু তাহলে! দেশের বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ এবং নানা মত-পথের দল-গোষ্ঠীসমূহ ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তায় বিশ্বাস করে যে, ভারত সরকারের ‘ডাইরেক্ট’ পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামীলীগ সরকার গত বারো বছর ধরে দেশ শাসন করছে। আবারও কেউ প্রশ্ন করতে-ই পারে, ভারত যদি ২০২১ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখার ‘ক্ষমতা’ রাখে, তাহলে একনাগাড়ে একুশ বছর কেনও আওয়ামী লীগকে নির্বাসনে থাকতে হয়েছে? কেনও তারা এরকম বিশ্বস্ত বন্ধুকে একুশ বছরের জন্যে ত্যাগ করেছিল? এতদসত্তে¡ ভারত-আওয়ামীলীগের প্রেমকাহিনি নিয়ে নানামুখী বিতর্ক চলছে তো চলছেই। তাদের বক্তব্য পরিষ্কার। দেশের আর কোনও ব্যক্তি-গোষ্ঠী-দল ভারতের বন্ধু নয়। এ বিতর্ক থামার কোনও লক্ষণ আজও নজরে পড়ছে না। উল্টো এর শিকড় দিনদিন আরও গভীরে প্রবেশ করছে। অত সহজে এ থেকে নিষ্কৃতি মিলবে বলে মনে হয় না।
সে যাকগে। ভালো হোক মন্দ হোক ভারত আমাদের বিশাল প্রতিবেশী দেশ। মায়ানমারের সঙ্গে অনুল্লেখযোগ্য নাতিদীর্ঘ সীমান্তের কথা বাদ দিলে বলা যায় ভারত-ই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। সুতরাং তাদের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপক কলেবরে খোলামেলা আলোচনা, লেখালেখি এবং গবেষণা প্রয়োজন। আমার এ লেখার উদ্দেশ্য সেটা নয়। আমি শুধু এ বিষয়ে লোকমুখে প্রচলিত ও জনপ্রিয় কিছু মতামত, ধ্যানধারণা এবং বিশ্বাস নিয়ে আলোকপাত করতে চাই।২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর প্রথম আলোর ১০ জুন সংখ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল ‘ভারতবিরোধীতা বনাম দেশপ্রেম’ শিরোনামে একটি কলাম লিখেন। এরকম কলাম, প্রবন্ধ, নিবন্ধ হামেশাই চোখে পড়ে। আসিফ সাহেবের ওই কলামটি আমি নোট করে রেখেছিলাম বলে সেটির রেফারেন্স এখানে দিয়েছি। সেখানে তিনি বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের রহস্যময় প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন এবং এর পক্ষে ভারতের বিভিন্ন কর্মকান্ড বহু মানুষের কাছে এই বার্তা দেয় যে, জনগণের সম্মতি শুধু নয়, ভারতের সম্মতিও এদেশে ক্ষমতায় আরোহনের একটি বড় শর্ত’। ইতোমধ্যেই যত্রতত্র এ ধরনের বক্তব্য শুনে এবং পড়ে কয়েকটা প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে। বলা যায় এধরনের মন্তব্য আজ দেশের বিরাট সংখ্যক মানুষের কাছে অনেকটা চিরন্তন সত্যরূপে গৃহীত হয়ে গেছে। দৈনন্দিন মামুলি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কিন্ত্ত বিষয়টা কি আসলেই মামুলি? শুনতে-পড়তে স্থূল মনে হলেও ভারত ইস্যুটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর। কারণ স্পষ্টতই এর সঙ্গে রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রশ্ন জড়িত। দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে পাঠদানরত আইন বিষয়ে পিএইচডিধারী অধ্যাপক এবং বিপুল সংখ্যক বিশেষজ্ঞ যখন এ ধরনের মন্তব্য করেন, তখন সেটা আমাদের জন্য ভাবনার বিষয় বৈ কি।
প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের সময়, বিশেষ করে নির্বাচনোত্তর ফলাফল নিয়ে প্রথমত গণমাধ্যমে এবং পরবর্তীকালে জনমনে ব্যাপক মাত্রায় আলোচনা-সমালোচনা-বিতর্কের ঝড় ওঠে। নির্বাচন কি আদৌ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে? এতে ভারত সরকার কী ভূমিকা পালন করেছে? কোন্ দলের ওপর তাদের নেক নজর ছিলো? আবার অনেকের মতে, একমাত্র পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশসহ সমস্ত উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের সরকার পরিবর্তনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা রাখে। তাদের মতে, ভোট-ফোট কিছু নয়, ক্ষমতায় আসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ইশারাই কাফি! যে দেশটির আজও দুনিয়াজুড়ে ১৩২টি দেশে প্রায় ৭০২টি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে সেই দেশের রাজনৈতিক-সামরিক-সাংস্কৃতিক প্রভাব কত ব্যাপক এবং সুদূরপ্রসারী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। গত শতাব্দীতে অন্তত ৫০টি দেশে গোপনে বা প্রকাশ্যে শান্তিপূর্ণ পন্থায় বা রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার বা সরকার প্রধান পরিবর্তনে আমেরিকার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হাত ছিল। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইংরেজ নাট্যকার হ্যারল্ড পিন্টার ২০০৫ সালে তাঁর বিখ্যাত নোবেল বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সরকারীভাবে ঘোষিত নীতিকে পূর্ণমাত্রার আধিপত্য (ফুল স্পেকট্রাম ডমিনেন্স) হিশেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। এটা তাদের নিজেদের ভাষা, আমার নয়। পূর্ণমাত্রার আধিপত্য মানে জল, স্থল, অন্তরীক্ষ, মহাশূন্য এবং এসবের অভ্যন্তরস্থ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ’।
অত:পর বলতে হয় আমলাতন্ত্রের কথা। আমাদের দেশে কেউ কেউ আবার শক্তিশালী আমলাতন্ত্রকেও জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণের কিংমেইকার হিশেবে বিবেচনা করেন। তদুপরি, সেনাবাহিনির প্রভাব তো আছে-ই। সেটা নিয়ে বিস্তারিত বলা নিষ্প্রয়োজন। দু’একটা ব্যতিক্রম বাদে, (যেমন ভারত) অধিকাংশ অনুন্নত-উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষমতায় সাধারণত সেনাবাহিনির প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ হিস্যা থাকে। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনি দেশেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। দেশের ভালো-মন্দ নিয়ে তারাও ভাবে। যে সেনাবাহিনি মাতৃভূমির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রাণদানের জন্যে সর্বদা প্রস্ত্তত থাকে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে তারা কীভাবে নিজেদের মুক্ত রাখবে? সমস্যা হলো, আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলো সুষ্ঠু রাজনীতিতে ব্যর্থ হয়ে সেনাবাহিনির সুনজর পাবার নির্লজ্জ্ব প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। দলগুলো সেনাবাহিনির উপর ভর করে শর্টকাট পথে ক্ষমতায় যেতে চায় বা অনির্দিষ্টকাল থাকতে চায়। অন্যদিকে, প্রতিবেশী ভারতে অন্তত জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কামড়াকামড়ি বা লঙ্কাকান্ড বাঁধে না। সেখানে তারা চুয়াত্তর বছর ধরে নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মোটামুটি শান্তিপূর্ণ উপায়ে সরকার অদল-বদল করে চলেছে। তাই ভারতের সেনাবাহিনি রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায় না বা তাদের দলগুলো ক্ষমতায় যাবার জন্যে সেনাবাহিনির মুখপানে চেয়ে থাকে না। এটা যে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিশেবে ভারতের কত বড় সাফল্য সেটা আমরা প্রতিবেশী হওয়া সত্তে¡ আজও উপলব্ধি করতে পারিনি।
এখানে আবারও ভারত প্রসঙ্গে দুটো কথা বলা যায়। সেখানকার নির্বাচনে বিদেশী প্রভাব আছে বা এ নিয়ে কোনও বিতর্ক হয়েছে বলে আমি এখন পর্যন্ত শুনিনি। তবে অভ্যন্তরীণ প্রভাবের নানা অনুঘটক নিয়ে খোদ ভারতেই বিতর্ক হয়। গত নির্বাচনের পর সেখানকার বিখ্যাত একটি টিভি চ্যানেল এ বিষয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে তারা ‘আন্তর্জাতিক শক্তি’ নয় বরং তাদের ‘অভ্যন্তরীণ’ কর্পোরেট মিডিয়ার নেতিবাচক ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করে। বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর মালিকানাধীন গণমাধ্যমের এক বিরাট অংশ কিভাবে বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদির পক্ষে সমর্থন দেয় এবং কৌশলগত প্রচারণা চালায় সেটা নিয়ে অনেক বিশ্লেষক অভিযোগ তোলেন। বলা যায়, ভারত আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্তে¡ মূলত তাদের শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আন্তর্জাতিক প্রভাব থেকে নিজেকে মোটামুটি মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় (মূলত ডজনখানেক দেশের সমষ্টি!), আন্তর্জাতিক সংস্থা এমনকি জাতিসংঘের অনেক সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বা বাস্তবায়নে ভারতের অনীহা বা গড়িমসি সেটাই প্রমাণ করে। কিন্ত্ত উপরি-উক্ত বিষয়ে বাংলাদেশের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।
বাংলাদেশে মোটামুটি একটা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে আমাদের নির্বাচনে তথা সরকার পরিবর্তনে প্রতিবেশী ভারতসহ শক্তিশালী দেশগুলো সরাসরি হস্তক্ষেপ করে থাকে। দু’একটা ব্যতিক্রম অবশ্য আছে, যেমন সবাই মোটামুটি একমত ১৯৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন সবচাইতে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ছিল। একই বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের অধীনে অনুষ্ঠিত ১৯৯৬ সালের নির্বাচন। বাদবাকি প্রতিটি নির্বাচন নিয়ে কমবেশী বিতর্ক, কানাঘুষা রয়েছে। কোনও কোনও নির্বাচনের পর সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি সবাই প্রকাশ্যে বলাবলি করেছে, অমুক দলকে অমুক দেশ ক্ষমতায় এনেছে। তারা এমনকি নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে প্রতিবেশী দেশের একজন রাষ্ট্রপতির লেখা বই থেকেও উদ্ধৃত করে থাকে!
এখন কথা হলো, আমরা প্রতিনিয়ত সমস্বরে বলে যাচ্ছি বিদেশী সরকারের ইশারা-ইঙ্গিতে বাংলাদেশে সরকার বদল হয়। একটা রাজনৈতিক দল গদীনশীন হয়। আরেকটা হয় গদিচ্যুত। এটা শুধু একটা গুরুতর অভিযোগ নয়। একটা স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের জন্যে এটা অত্যন্ত লজ্জ্বাজনক। আমাদের সমস্ত গণমাধ্যমে এ বিষয়টি নিয়ে দিনেরাতে আলোচনা হচ্ছে। সোশাল মিডিয়ায় এবং টকশো নামক বিনোদনমূলক (!) অনুষ্ঠানে প্রতিদিন তারস্বরে বলা হচ্ছে, অমুক সরকারকে ‘ভারত বসিয়েছে, ভারত টিকিয়ে রেখেছে, প্রণব মুখার্জির বইতে সেটা বলা আছে, ইত্যাদি ইত্যাদি।’ ভাবনার বিষয় হলো, এসবের সঙ্গে একটা দেশের জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং স্বার্থ জড়িয়ে আছে। কোনও দেশীয় বা বহি:শক্তির প্রভাবমুক্ত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে না পারার অর্থ কী? এর অর্থ স্পষ্ট। সেটা হলো আমরা নির্বাচনসহ অনেক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে গত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে সেনাবাহিনির কর্মকর্তাদের কাছে আবদুল আউয়াল মিন্টুর স্বীকারোক্তি, ‘স্যার, আমার বাসায় বসে আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতিতে আমরা দেশের অর্থনৈতিক নীতিমালা ঠিক করেছিলাম’। অবশ্য কথাটা তিনি কোন্ প্রেক্ষাপটে বলেছেন সেটাও বিবেচ্য। তবে আমার মতামত হলো, সৈন্যদের গুঁতো খেয়েও এ ধরনের মন্তব্য বের হলে সেটাকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করা উচিত।
এবার আসি দ্বিতীয় কথায়। অভিযোগ হলো প্রতিবেশী ভারতসহ শক্তিধর দেশগুলো বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে। এ নিয়ে আমাদের কি প্রশ্ন করা উচিত নয়? এই অভিযোগটা কি আদৌ সত্য? এর সত্যাসত্য নির্ণয় করবার জন্য আমরা এপর্যন্ত উল্লেখ করার মতো কিছু করেছি? এই মুহূর্তে করছি? খুব শিগগীর করার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে? এটা নির্ণয়ের আদৌ কি কোনও পথ বা ফর্মূলা আছে? নানা ক্ষেত্রে দেশের বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে বস্ত্তনিষ্ঠ আলোচনা বা গবেষণায় নিয়োজিত হয়েছেন? একজন সচেতন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিশেবে এ ধরনের গুরুতর অভিযোগ আমাদের কিভাবে নেয়া উচিত? উপেক্ষা করা? নাকি অভিযোগের ভিত্তি, যুক্তি-প্রমাণ খোঁজা? সেসব বিষয়ে অনুসন্ধান, লেখালেখি এবং জনগণকে সচেতন করা? যদি সত্য হয়, তবে জাতি হিশেবে এটাকে আমরা কিভাবে নেব? উপেক্ষা করব? নাকি তার প্রতিবিধান করার চেষ্টা করব? নাকি এ বিষয়ে আমাদের আসলে করার কিছু নেই! গরীবের বউয়ের মতো সবকিছু সয়ে যেতে হবে! নাকি এ বিষয়ে কিছু করার আকাক্সক্ষা, যোগ্যতা বা সার্বভৌম ক্ষমতা কোনওটাই নেই? অভিযোগ যদি মিথ্যা হয়, সেক্ষেত্রেই বা আমরা কী করবো? জনগণকে জানানো উচিত নয়? আমাদের কি উচিত নয় এর প্রতিবাদ করা? এবং এ ধরনের গুজব থেকে সবাইকে বিরত রাখা। যতটুকু সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নি:সন্দেহে এ অভিযোগ ‘রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার অসারতা প্রমাণ করে’। এ বিষয়টা উপলব্ধি করবার জন্যে হ্যারাল্ড লাস্কির মতো পÐিত হবার দরকার নেই। এর চেয়ে গুরুতর অভিযোগ আর কী হতে পারে? তেমন অভিযোগ কি আমরা যুগযুগ ধরে নিরবে শুনে যাব? আর দেশের দু’চারটি রাজনৈতিক দল এর পক্ষে-বিপক্ষে জনমত উস্কে ফায়দা লুটতে থাকবে? বিশেষ করে নির্বাচনী মৌসুমে।
যারা অভিযোগ করেন তাদের উচিত, এ বিষয়ে খোলাসা করে লেখা বা বলা, যাতে সাধারণ মানুষ জানতে পারে আসলে আমাদের সার্বভৌম ক্ষমতা কতটুকু কার্যকর আছে। নাকি সেটা ইতোমধ্যেই ফুটো হয়ে গেছে? হলে কতখানি? সেলেব্রিটি ভাষ্যকার এবং প্রতিষ্ঠিত বিশেষজ্ঞদের উচিত, এ নিয়ে ঢালাও মন্তব্য না করে বরং সবিস্তারে লেখা। কারা কোন্ কোন্ দেশ-গোষ্ঠী ঠিক কোন্ কোন্ পন্থায় দেশের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করে? কিভাবে তারা সমগ্র জাতির নাকের ডগায় এত বড় অপরাধ সংঘটিত করতে সফল হয়? আমাদের দেশের ক্ষমতার পালাবদলে এই বিদেশী প্রভাব বিস্তারের ম্যাকানিজমটা আসলে কী রকম? কী উদ্দেশ্যে তারা এটা করে? অর্থনৈতিক কারণ তো সহজে বোধগম্য। রাজনৈতিক কারণটা কী? এটা কি আঞ্চলিক নাকি বৈশ্বিক? না দুটোই? ভূ-রাজনৈতিক বা আঞ্চলিক যা-ই হোক, কারণটা কী? এর প্রকৃতিটাই বা কী? এর মাধ্যমে তারা ঠিক কী ধরনের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়?
দুই পরাশক্তির মধ্যকার স্নায়ু যুদ্ধকালীন উত্তেজনাকর বিশ্ব পরিস্থিতির কাহিনি আমরা অনেকে দেখেছি বা পড়েছি। কিন্তু এর অবসানের পর নতুন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্যের মধ্যেও আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম যে বিশ্বের গরীব দেশগুলোকে আর কোনও একটা শিবিরের ছত্রছায়ায় ‘বানানা রিপাবলিক’ হয়ে থাকতে হবে না। গণতান্ত্রিক বিশ্বে অন্তত আশা করা যায়, গরীব দেশগুলো তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনের সর্বক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। কিন্ত্ত পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের স্বদেশী অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠী এবং সংস্থা নিয়মিত অভিযোগ করে চলেছে, বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনে জনগণের সম্মতি বা ভোটের রায় যথেষ্ঠ নয়। সেজনে দিল্লী বা ওয়াশিংটনের সম্মতির প্রয়োজন। সহজ কথায় এর অর্থ হলো দেশের জনগণের ভোট অর্থহীন। তার অর্থ হলো দেশের সার্বভৌম ক্ষমতা অত্যন্ত দুর্বল বা নেই বললে চলে । তাই যদি হয় তাহলে হাজার হাজার কোটি টাকার নির্বাচনের কী প্রয়োজন? কী প্রয়োজন নির্বাচনের নামে সহিংসতার আয়োজন? এই অভিযোগ উত্থাপন-ই তো একটা রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার জন্য অসম্মানজনক। এর জনগণ, রাজনৈতিক দল-কাঠামোসহ পুরো দেশের অস্তিত্বের জন্য অপমানজনক। একটা স্বাধীন দেশের জনগণ এবং বিদেশী সরকার উভয়ে যুগপৎ সেই স্বাধীন দেশটির জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করতে পারে না। কোনও বিশেষ দলকে গদিনশীন বা গদিচ্যুত করতে পারে না। দুটো একসঙ্গে সত্য হতে পারে না। তাহলে সেটা হবে অক্সিমোরোনিক। উই জাস্ট কান্ট হ্যাভ ইট বৌথ ওয়েজ। হয় দেশের জনগণের রায়ের ভিত্তিতে অথবা শক্তিধর বিদেশী সরকারের সম্মতিতে সরকার গঠিত হয়। এ বিষয়টা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে সার্বভৌম আত্মমর্যাদাবান জাতির দাবিদার হিশেবে এবং সম্মিলিতভাবে। হ্যাঁ, একটা দেশে বিদেশী সরকার বা গোষ্ঠীসমূহের নানামুখী প্রভাব থাকতে-ই পারে। তাই বলে এটা হতে পারে না যে তারা আমাদের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করে দেবে, তাদের খেয়ালখুশীমতো সরকার পরিবর্তন করবে। এবং সেটা নিয়ে আমরা জাতীয় গণমাধ্যমে যুগের পর যুগ গল্প-গসিপ করে বেড়াবো।
ভারত-বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলাপচারিতায় আরেকটা ইস্যু আজও বারেবারে ফিরে আসে। সেটা হলো মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান। এবং সেজন্যে আমাদের জাতির কৃতজ্ঞতাবোধ। আমি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে কিছুটা স্টাডিও করেছি। অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞ। সবাই কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। আমার মনে হয় অধিকাংশ পাঠক একমত হবেন যে আমরা জাতি হিশেবে যথেষ্ঠ কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করেছি। আজও করছি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের দান করেছে মুক্তি। ভারতকেও তৎক্ষণাৎ কিছু দান করেছে। বিশাল সীমান্তজুড়ে নিরাপত্তা। তার মূল্যও কম নয়। এ বিষয়ে আজ আর বিস্তারিত লিখতে চাই না। অবশ্য কৃতজ্ঞতার প্রশ্নে কিছু ব্যতিক্রম সবখানে থাকে। এক্ষেত্রেও আছে। স্বীকার করতে লজ্জ্বা নেই, আমাদের মধ্যে গুটিকয়েক অকৃতজ্ঞ লোক আছে। তাদের আমরা জাস্ট উপেক্ষা করতে পারি। তবে এখানে অবশ্যই জাতীয় স্বার্থে সকলকে সতর্কও থাকতে হবে। ভারতের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি মিটমাট এবং নানা বিষয়ে লেনদেনের ক্ষেত্রে আমরা যেন অত্যন্ত সচেতন এবং মাতৃভূমির প্রতি পূর্ণ অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকি। কৃতজ্ঞতাবোধের আবেগ যেন আমাদের বিবেককে ঝাপসা বা অন্ধ করে না দেয়। সবকিছুর একটা সীমা থাকে। সব ধরনের কৃতজ্ঞতার ক্ষেত্রেও আছে। এমনকি আপন পিতা-মাতার কাছেও সন্তানের কৃতজ্ঞতাবোধের এবং দায়শোধের একটা সীমা থাকে। বন্ধু এবং বন্ধুরাষ্ট্রের প্রতি তো বটে-ই। এই সীমারেখাটা আমাদের কাছে পরিষ্কার হওয়া দরকার। সেসব ভেবেচিন্তে-ই আমাদেরকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নানা দিক বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে। এর প্রধান দিক হলো, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত-জুজু এবং ভারতপ্রীতির ইস্যু। সেজন্যে আজ দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলকে ভারত সংক্রান্ত বিদেশনীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
প্রশ্ন হলো, এই কঠিন কাজটা আমরা কিভাবে করবো? আমার কাছে উত্তরটা সহজ-ই মনে হয়। আমাদের উচিত, এ বিষয়ে মানে বাংলাদেশ-বিষয়ক ভারতের ‘বিদেশ নীতি’ পাল্টা অনুসরণ করা মানে তাদেরটা কপি করে ভারত-বিষয়ে নিজেদের ‘বিদেশ নীতি’ প্রণয়ন করা। ভারতের সমস্ত দল যেভাবে তাদের সরকারের নেতৃত্বে ‘কমন নীতির’ মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আচরণ করে, আমাদেরকেও ঠিক তা-ই করতে হবে। এই ধরুন তিস্তা চুক্তির বিষয়টি। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার চাইলেই কাজটি করতে পারবে না। সেজন্যে তারা জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। হয়তো এরপর করবে চুক্তি, যদি করে। তার আগে নয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে চাপ দিয়ে দিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকার কাজটি করতে চায় না। তার অর্থ এই নয় যে দিল্লী আইনগতভাবে করতে অক্ষম। আমার ধারণা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে এই চুক্তিটি করতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে, সাংবিধানিকভাবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অত্যন্ত শক্তিশালী। তারা প্রয়োজনে নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে বাতিল করে সেখানে রাষ্ট্রপতির মানে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন জারি করতে পারে। এর নজীর আমরা বহুবার দেখেছি। সুতরাং জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে এবং বিদেশনীতির ক্ষেত্রে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য ও পারস্পরিক সংহতি থেকে বাংলাদেশ অনেক কিছু শিখতে পারে। অনুসরণ করতে পারে। ভারতের জাতীয় রাজনীতিতেও তাদের দলগুলো সেটা কম-বেশী চর্চা করে। এইতো ক-দিন আগে বিজেপি গুজরাটে কংগ্রেস নেতা সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের বিশাল ভাষ্কর্য় নির্মাণ করেছে। তারা চাইলে সেস্থলে পিতৃসংগঠন আরএসএসের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা বিনায়েক দামোদর সাভারকার, কেশব বালিরাম হেডগিয়ার বা এমএস গুলওয়াকারের ভাষ্কর্য বানাতে পারতো। তাহলে আমরা দেখছি, বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক দলও বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য, সংহতি ও সমৃদ্ধির স্বার্থে যতখানি সম্ভব দলীয় সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করে। এখানে আমরা ভারতের মিডিয়া কর্তৃক তাদের বিদেশনীতি সংক্রান্ত রিপোর্টিংও বিবেচনা করতে পারি। যখন-ই কোনও পররাষ্ট্র ইস্যুর উদ্ভব হয় তারা সকলে মোটামুটি একই সুরে ভারতের স্বার্থরক্ষায় সরব হয়ে ওঠে। বলিউডী সিনেমায় প্রচারিত দেশপ্রেমের কথা আর না-ই বা বললাম! কিন্ত্ত এই সমস্ত ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো।
নি:সন্দেহে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে বিশেষ করে ভারতের ক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় ঐকমত্য ও সংহতি গড়ে তোলার কাজটা অত্যন্ত দুরূহ। বলা চলে আপাতত অসম্ভব। কিন্তু সে কাজটা শুরু করা যায় কি না, সেটা নিয়ে অন্তত চিন্তাভাবনা শুরু করতে দোষ কি! কারণ এ সমস্যা থেকে ওই পথেই মিলবে মুক্তি। বাংলাদেশের ভেতরে পঞ্চাশ বছর ধরে ভারতকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক গুটি চালাচালি চলছে। এটাই এক নাম্বার রাজনৈতিক ইস্যু, বিশেষ করে নির্বাচনী মৌসুমে। শিক্ষা নয়, স্বাস্থ্য নয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা নয়, ভারত ইস্যু-ই হলো আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাণভোমরা।সুতরাং জাতীয় জীবনে এই ইস্যুর নেতিবাচক প্রভাব থেকে আমাদের মুক্তি পেতে-ই হবে। এটাকে মূখ্য ইস্যু থেকে গৌণ স্তরে নামাতে হলে এ কাজটা আমাদের করতে-ই হবে।মূলত, ভারত-বিষয়ে একটা ‘কমন নীতি’ প্রয়োগ করতে-ই হবে। তা না হলে আমাদের দলগুলো কর্তৃক একে অন্যকে ‘ভারতপ্রীতি এবং ভারতভীতি’ প্রদর্শনের দোষাদোষি বন্ধ হবে না। এতে উপকৃত হবে শুধু ভারত। ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে আমাদের জাতীয় স্বার্থ। কমন নীতিতে ঐকমত্য না হলে দলগুলো ভারতের মন জোগানোর প্রতিযোগিতায় একে অপরের বিরুদ্ধে খেলে-ই যাবো, ফাউল করতে-ই থাকবো। সেই সুযোগে ভারত তার রাষ্ট্রীয় স্বার্থের ষোল আনা আদায় করে নেবে। আমাদের জন্যে থাকবে শুধু ছালাটা। থাকবে শুকনো তিস্তা। সেই সঙ্গে আমাদের তরুণদের এক বিরাট অংশ সারা বছর রাজপথে ‘দিল্লী না ঢাকা’ চিল্লাইয়া ফাটাবে গলা।
লেখক: প্রাবন্ধিক, অনুবাদক।