রিজার্ভ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই: প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বজুড়ে এখন বড় সমস্যা মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে, তবে আমাদের রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন ১৪ দলের নেতারা। বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুদ্রাস্ফীতি সব দেশের মতো বাংলাদেশেও হচ্ছে। একই কথা রিজার্ভেও। রিজার্ভ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কেননা আপদকালীন খাদ্য মজুত রয়েছে। এত বেশি আলোচনার কারণে আজ প্রায় সবাই রিজার্ভ নিয়ে কথা বলেন। এই সতর্কতা দেশের জন্য ভালো।প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়, তা গেল ১৫ বছরে প্রমাণিত হয়েছে। এরপরও শুনতে হয় কথা বলার স্বাধীনতা নেই। কিন্তু সরকার কারও গলা টিপে ধরেনি।তিনি বলেন, বিজয় ও স্বাধীনতার চেতনা নস্যাৎ করতেই ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটানো হয়। তারপর থেকেই দেশটা শুধু পেছাতে থাকে। সরকার জনগণের জন্য কাজ করে, কেবল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই মানুষ এটা বুঝতে পারে।

বাংলাদেশের গ্যাস না বিক্রির সিদ্ধান্তের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শক্তিশালী (যুক্তরাষ্ট্র) দেশটি সেই সিদ্ধান্তকে ভালোভাবে নেয়নি। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় বসার মতো দৈন্যতায় ছিলাম না কখনও।সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশে এয়ারবেজ বানাতে দিলে কারও কোনও নির্বাচনে জিততে কোনো সমস্যা নেই— এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু রাজি হইনি আমি। বে-অব বেঙ্গলে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) ঘাঁটি বানাবে, ভারত মহাসাগরের এই শান্তিপূর্ণ জায়গাটার ওপর তাদের নজর। এখানে বেজ বানিয়ে তারা কোথায় হামলা করতে চায়? আমি এটা করতে দিচ্ছি না বলেই খারাপ।তিনি বলেন, চক্রান্ত এখনো চলমান রয়েছে। তবে, জনগণ সঙ্গে রয়েছে, তারাই সামনে চলার মূল শক্তি।সমবায়ের মাধ্যমে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ধান-মাছ চাষ হচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, সেখানে ছয় বিঘা জমি দিয়েছি আমি। সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছে এখন শরীয়তপুরের সবজি। ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্বাধীনতাবিরোধীদের চক্রান্ত অতিক্রম করেই এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।জোটের শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ছাড়া দেশের মানুষের কল্যাণ হবে না। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে আরও সুসংগঠিত হতে হবে। মানুষের কাছে যেতে হবে।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, গ্রেনেড হামলাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি; ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে রোজই আন্দোলন ও সরকার উৎখাতসহ নানা রকম হুমকি-ধমকি দেয়। যতক্ষণ জনগণ সঙ্গে আছে ওটা আমি কেয়ার করি না।

‘তারপরও এরা যেন দেশে জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসংযোগ এগুলো করতে না পারে। এগুলো যারা করবে, তাদের কোনো ছাড় নাই। যতই মুরুব্বি ধরুক, আর যা-ই ধরুক, এদের আমরা ছাড়বো না। মানুষের ক্ষতি যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে’- এ প্রসঙ্গে যোগ করেন তিনি।রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করে সরকারপ্রধান বলেন, রোহিঙ্গাদের অনেকের ঘরে সন্তানের জন্ম হচ্ছে। তাদের জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মিয়ানমারেও পরিস্থিতি ভালো নয়। তাদের তো আর ঠেলে দিতে পারি না। আলাপ-আলোচনা করে যাচ্ছি। যুদ্ধ করতে যাইনি, ঝগড়াও করতে যাইনি। কখন যে তাদের ফেরাতে পারবো, জানি না। আমরাও তো (মুক্তিযুদ্ধকালীন) রিফিউজি ছিলাম, ফলে রোহিঙ্গাদের কষ্টটা বুঝি। তাদের ভাসানচরে নিচ্ছি। কিছু গেছে, আরও যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছি। গাজায় গণহত্যা চলছে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি। যেখানেই যাই, এ যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলছি। ইরানের প্রেসিডেন্ট মারা যাওয়ার ঘটনায় আমরা শোক দিয়েছি। শোক দিবসও পালন করেছি। যেখানেই মানুষ বিপদে পড়েছে, আমরা পাশে দাঁড়িয়েছি। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- এ নীতিতে আমরা কাজ করছি।মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও, টেলিভিশন করে দেওয়ার পরও বলছে, কথা বলতে পারি না। ফেসবুকেও সমালোচনা, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স। আমরাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশও এ সমস্যা মোকাবিলার ব্যাপারে সচেতন।

তিনি বলেন, স্কুলে ছেলেদের সংখ্যা কমছে। মেয়েদের সংখ্যা বেশি। এবার (এসএসসির ফলাফলে) মেয়েরা বেশি পাস করছে, ছেলেরা কম। এর কারণ খুঁজে বের করতে বলেছি। উচ্চশিক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ফান্ড থেকে আমরা সুবিধা দিচ্ছি।সরকারপ্রধান বলেন, দেশের ২২ জেলা ও ৩৩৪ উপজেলা এখন ভূমিহীন গৃহহীন মুক্ত। বাকিগুলোও হবে। প্রত্যেক নাগরিক দুই শতক জমিসহ ঘর পাবে। কোনো মানুষ ভূমিহীন গৃহহীন থাকবে না। কেউ অভুক্ত থাকবে না। পাশাপাশি নিরক্ষরও থাকবে না। সবাইকে পড়াশোনার আওতায় আনবো। বেকারও থাকবে না। কর্মসংস্থানের নানা সুযোগ সৃষ্টি করছি আমরা।তিনি বলেন, বিএনপির অহমিকা ছিল, তারাই বড় দল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সিট পেয়েছে মাত্র ৩০টি, সেটিই তাদের ক্ষোভ। ২০১৪ সালে তারা নির্বাচনে আসেনি। এরপর থেকে তো বাংলাদেশে নির্বাচনই হতে দেবে না, এমন অবস্থা। হ্যাঁ, কোনো এক সাদা চামড়া থেকে প্রস্তাব এসেছে, বাংলাদেশে তাদের ঘাঁটি করবে। সে সুযোগ দিলে তারা নির্বাচন করতে দেবে। আমি রাজি হইনি। আমি এ প্রস্তাব পাত্তা দিইনি, সোজা কথা। দেশের মানুষই আমার শক্তি, আমি তাদের ওপরই নির্ভর করি।বৈঠকে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতারাও অংশ নেন।

You might also like