লোকবল না থাকায় ৫টি রেলস্টেশন বন্ধঃ বেদখল হচ্ছে রেলের জমি
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের মাধবপুর উপজেলায় লোকবলের অভাবে ৫টি রেল স্টেশন দীর্ঘ এক যুগ থেকে বন্ধ রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারি না থাকায় সুযোগে রেলওয়ের কোটি-কোটি টাকা মূল্যের জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় লোকেরা রেলওয়ে বিভিন্ন স্থাপনা দখল করে বসবাস করছে। এছাড়া স্টেশনগুলো বন্ধ ও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ায় এখানে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ সংঘটিত হওয়ার পাশাপাশি অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে।
মাধবপুর থেকে সংবাদদাতা জানান, আখাউড়া-সিলেট রেল সেকশনে লাতু, বাল্লা, কুশিয়ারা, জালালাবাদ ও সুরমা মেইল নিয়মিত চলাচল করত। এই মেইলট্রেনগুলো কাসিমনগর, শাহপুর, তেলিয়াপাড়া, ইটাখোলা ও ছাতিয়াইন রেলস্টেশনে যাত্রা-বিরতি দিত। লোকবল ও সংস্কারের অভাবে পরবর্তীতে সুরমা মেইলছাড়া সবগুলো ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ার ফলে স্টেশনগুলো বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি সুরমা মেইলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
১০/১২ বছর ধরে মাধবপুর উপজেলার কাসিমনগর, শাহপুর, তেলিয়াপাড়া রেলস্টেশনে আখাউড়া থেকে সিলেট লোকাল ট্রেন যাত্রাবিরতি করলেও ৩টি রেলস্টেশনে কোনো টিকিট মাস্টার বা লোকবল ছিল না। কাসিমনগর রেল স্টেশনের টিকিট মাস্টার নুরুল ইসলাম গত ১৩ বছর পূর্বে মারা যাওয়ার পর এ স্টেশনে নতুন কোন লোকবল প্রদান করা হয়নি। যে কারণে রেল স্টেশনের কার্যালয়ে তালা পড়ে রয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, ঐ সময়ে পার্শ্ববর্তী ১৫/২০টি গ্রাম থেকে আখাউড়া-সিলেট রোডে প্রায় প্রতিদিন ৪টি লোকাল ট্রেনে ২/৩শ’ যাত্রী ওঠানামা করত। তেলিয়াপাড়া, শাহপুর, ইটাখোলা রেলস্টেশন থেকে সুরমা, তেলিয়াপাড়া চা বাগান থেকে প্রতিদিন সিলেট গন্তব্যে প্রচুর যাত্রী যাতায়াত করতেন। এ তেলিয়াপাড়া স্টেশনের টিকিট মাস্টার আবদুল হাই প্রায় ১২ বছর আগে মারা যাওয়ার পর স্টেশনটি বন্ধ হয়ে পড়ে। এছাড়া সংস্কার ও লোকবলের অভাবে ইটাখোলা ও ছাতিয়াইন রেলস্টেশন অনেক বছর ধরে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। এক সময় ছাতিয়াইন রেলস্টেশন থেকে জনগণের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম ছিল রেল। এ রেলস্টেশন থেকে কৃষিপণ্য ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটে সরবরাহ করা হতো। ফলে এলাকার কৃষকরা উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব পেত। এখন এ রেলস্টেশনটি সংস্কার করে আবার পুনরায় ট্রেন চলাচলে ব্যবস্থা করলে এলাকাবাসী উপকৃত হবে। কাসিমনগর রেলস্টেশনটি একটি জনগুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। ব্রিটিশ আমল হতে এ স্টেশন থেকে অনেক লোক যাতায়াত করত। বর্তমানে রেলস্টেশনটি সংস্কার করে লোকবল নিয়োগ করে চালু করলে সরকার রাজস্ব পেত।
রেলওয়ের সাবেক পরিচালক (ট্রাফিক) সৈয়দ আব্দুল মুকিত বলেন, বন্ধ স্টেশনগুলোতে সাধারণ জনসমাগম কম থাকায় সেখানে রেলওয়ের বিভিন্ন স্থাপনা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে এবং রেলওয়ের জায়গা আস্তে আস্তে বেদখল হয়ে যাচ্ছে।
রেলওয়ের আখাউড়া-কুলাউড়া সেকশনের পরিদর্শক (পরিবহন) তৌফিকুল আলম রুবেল জানান, উক্ত ৫টি স্টেশন হল ‘ডি’ ক্যাটাগরির। সম্পুর্ণ লোকবলের অভাবে এ স্টেশনগুলো বন্ধ আছে। রেলওয়েও জমি বেদখল বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা রেলওয়ে ভু-সম্প্রত্তি বিভাগ আছে তারা দেখভাল করে, তাদের সাথে যোগাযোগ করুন। শাহজিবাজার রেলস্টেশনে স্টেশন মাষ্টার নাই এবং ট্রেনগুলি মধ্যলাইনে থামায় এতে যাত্রীরা খুব কষ্ট করে উঠানামা করে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, শাহজিবাজারে একজন বুকিং সহকারী আছেন তিনি টিকেট বিক্রি করেন আর বজ্রপাতে গত ৩ বছর আগে সিগনাল সিস্টেমে সমস্যা হয় তা সংস্কার করার জন্য প্রক্রিয়াধীন আছে।