সংসদে ৪৬ হাজার কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট পাস
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
জাতীয় সংসদ ভবন থেকেঃ সরকারের যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তাদের মূল বরাদ্দের বেশি খরচ করেছে তার অনুমোদন দিতে বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৪৬ হাজার ৫১৬ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার টাকার সম্পূরক বাজেট সংসদে পাস হয়েছে।এর আগে সম্পূরক বাজেটের ওপর সরকারি ও বিরোধীদলের সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেন।বিরোধীদলের সদস্যরা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেন এবং অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রস্তাবে আপত্তি জানান।সোমবার (১৫ জুন) জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল-২০২০’ পাস হয়।বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।আগামী ৩০ জুন সমাপ্য অর্থবছরে কার্যাদি নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল থেকে মঞ্জুরিকৃত অর্থের বেশি অর্থ প্রদান ও নির্দিষ্টকরণের কর্তৃত্ব দেওয়ার জন্য এ সম্পূরক বিল আনা হয়।
এর আগে সম্পূরক বাজেটের ওপর বিরোধীদল জাতীয় পার্টি,বিএনপি ও গণফোরামের সংসদ সদস্যরা ১৬৭টি ছাঁটাই প্রস্তাব দেন।ওই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির পীর হাবিবুর রহমান, রওশন আরা মান্নান ও ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এবং বিএনপির মো. হারুনুর রশীদ।তবে সেগুলো কণ্ঠভোটে বাতিল হয়। পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।এরপর আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত সংসদের বৈঠক মুলতবি করেন স্পিকার।বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ২৪টি মঞ্জুরি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূরক বাজেটটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।ছাঁটাই প্রস্তাবগুলোর মধ্যে সমাজকল্যাণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এই দুটি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়।সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের পক্ষে ৫টি মঞ্জুরি দাবি তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার উত্থাপিত দাবিগুলো ছিল- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়,মন্ত্রিপষিদ বিভাগ,পরিকল্পনা বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ,পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সংশ্লিষ্ট।
সংসদে উত্থাপিত বিদায়ী অর্থবছরের সম্পূরক আর্থিক বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের অনুকূলে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে ২৬টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের বরাদ্দ ৪৬ হাজার ৫১৬ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৩৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের বরাদ্দ ১৮ হাজার ৩৫৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা কমেছে। সার্বিকভাবে ২১ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে সংশোধিত বরাদ্দ নিট দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ এক হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।সম্পূরক বাজেটে অর্থবিভাগ সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার ৩৫৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে এবং সবচেয়ে কম এক কোটি ৫৪ লাখ বরাদ্দ পেয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়।২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।সংশোধনে তা ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
ত্রাণ বিতরণে দুর্নীতিতে কোনো ছাড় নয়
ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত এক হাজার ২৩২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বরাদ্দের বিরোধিতা করে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা বলেন,করোনাকালীন সমন্বিত একটি তালিকা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে ত্রাণ মন্ত্রণালয়। জনগণের আমানত এই দুর্যোগে প্রকৃত মানুষের পাওয়া উচিত। অথচ যারা সাহায্য পাওয়র যোগ্য এরকম ৭০ ভাগ বঞ্চিত হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ত্রাণ বিতরণে নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।জবাবে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘প্রায় ৫ কোটি পরিবারকে সাহায্যের তালিকায় এনেছি। আর ত্রাণ বিতরণে কোনো ধরণের দুর্নীতি যেন না হয় সেজন্য ডাটাবেজ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে তালিকা বেড়েই যাচ্ছে। রেড জোনগুলোতে লকডাউন করার পর সেখানেও সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে। ত্রাণ নিয়ে নয়-ছয়ের সঙ্গে জড়িত কাউকেই প্রধানমন্ত্রী ছাড় দেননি, গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের বিরোধিতা
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত ১২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে আরও অধিক স্বচ্ছতা আনা উচিত। বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে মানুষ চরম কষ্টে রয়েছে, কিন্তু বয়স্ক-বিধবা-স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা প্রদানেও স্বজনপ্রীতি ও বৈষম্য করা হচ্ছে। প্রবাস থেকে চাকরি হারিয়ে অনেকে ফেরত আসছে, কিন্তু এ মন্ত্রণালয় থেকে তাদের পুনর্বাসনে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।বিরোধী দলের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন,আগামী তিন মাসের মধ্যেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভাতা প্রদান করতে আমরা সক্ষম হব। করোনার করাল গ্রাস থেকে মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে সমাজকল্যাণ খাতের সব টাকা তাদের রক্ষায় ব্যয় করা হয়েছে।এজন্য এমপিদের খাতে বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয়নি।এদিকে সংসদে বিল উত্থাপনের আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বৈশ্বিক করোনার কারণে রাজস্ব আয়-ব্যয় ও জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা পুনর্নির্ধারিত করতে হয়েছে। স্বাস্থ্য-সুরক্ষা বিভাগ, ত্রাণ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ দিতে হয়েছে।তাই সম্পূরক বাজেট পাস করতে হবে।
উল্লেখ্য,সাংবিধানিক নিয়ম অনুসারে যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে পারেনি তাদের হ্রাসকৃত বরাদ্দের জন্য সংসদের অনুমতির কোনো প্রয়োজন হয় না।কিন্তু যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ অতিরিক্ত ব্যয় করেছে, কেবলমাত্র তাদের বরাদ্দই সংসদের অনুমতির প্রয়োজন হয়।এজন্য সংসদে সম্পূরক বাজেট পাস করা হয়েছে।