সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ দেশকে মুক্তিযুদ্ধের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার আহ্বান – সম্প্রীতির জাগরণসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সন্মিলিত সামাজিক আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটি । গতকাল সকাল ১০টায় সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।সভায় বক্তারা বলেন, দেশের রাজনীতি ৭৫ এর পরবর্তী সময় থেকে বিপথে চলমান রয়েছে এবং পথ হারিয়েছে। জিয়াউর রহমান কলমের খোচায় সংবিধানকে সাম্প্রদায়িক ধারায় পরিবর্তন করেন। দেশের বিরাজমান বিশৃঙ্খলা শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ড. খুদরতই খোদা শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি করেন। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠন করার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা না গেলে জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করা সম্ভব হবে না। একই সাথে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার যে বাণিজ্যকরণ ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনে বিভক্ত করা হয়েছে তা বন্ধ করতে হবে। বৈষম্য ও শোষণমুক্ত আধুনিক রাষ্ট্র গড়ার পুর্বশর্ত হলো রাষ্ট্র ব্যবস্থার সকল অনিয়ম রোধ করা সেই সাথে সাম্প্রদায়িকতাকে রুখতে হবে। বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এখন সাম্প্রদায়িক শক্তি রাজনীতির নিয়ামক হয়ে উঠেছে। আমরা দেশের চিন্তাশীল বিবেকবান মানুষদের আহবন জানাই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে পরাজিত সাম্প্রদায়িক শক্তির ছোবল থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ হউন।

গতকাল সকাল ১০টায় সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় সভাপতির সূচনা বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন উপরোক্ত মন্তব্য করেন।এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ মিলনায়তনে অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, প্রেসিডিয়াম সদস্য রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী, এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, এডভোকেট এসএমএ সবুর, রঞ্জিত কুমার সাহা, অধ্যাপক শক্তিপদ ঘোষ, রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, ড. সেলু বাসিত, ড. জোবাইদা নাসরিন কনা, এমএ সামাদ, ডা. অসিত বরণ রায়, হারুন অর রশীদ লাল, সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একে আজাদ, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কারশেদ আলম, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক স্বাধীন চৌধুরী, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সামসুল আলম জুলফিকার, সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক দেবব্রত রায় দীপন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাহিদ আলম, মিজানুর রহমান মজুমদার, অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন । এছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন টুনু রানী কর্মকার (বরিশাল), আজাহারুল ইসলাম (নরসিংদী), ফারুক মহসীন (নারায়ণগঞ্জ), প্রকৌশলী আনিসুর রহামন (কিশোরগঞ্জ), ফরিদা ইয়ামিন (লক্ষীপুর), রবীন্দ্রনাথ অধিকারী (গোপালগঞ্জ), মোবাশ্বের চৌধুরী (ভোলা), শাহজাহান আলী সাজু (মানিকগঞ্জ), মির্জা সাইজি (শরিয়তপুর), অহনা নাসরিন (ময়মনসিংহ), কামাল জোয়াদ্দার (খুলনা), মোঃ শামসুর রহমান পারভেজ (দিনাজপুর) প্রমুখ।

সভায় সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট পারভেজ হাসেম, কর্মসূচি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির, সাংগঠনিক রিপোট উপস্থাপন করেন সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ, শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক রেজাউল কবীর, আর্থিক বিবরণী উপস্থাপন করেন অর্থ সম্পাদক অলক দাশগুপ্ত, সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ। সভায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও ৪০টি জেলার অধিক প্রতিনিধিগণ অংশ নেন।সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য রামেন্দু মজুমদার বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন বিদেশী শক্তির অযাচিত ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার বর্হিভূত হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। দেশে আজ অপসংস্কৃতি ও দুবৃর্ত্তায়নের প্রসার ঘটে। এই সময়ে সুবিধাবাদী শ্রেণী ধর্মের লেবাসে দেশের নিরহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর চাপ প্রয়োগ, লুন্ঠন, নিপীড়ন, নির্যাতনে মেতে উঠেছে। আমরা সকল নাগরিকের নিরাপদ বাংলাদেশ দেখতে চাই।

সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য রানা দাশগুপ্ত বলেন, দেশের এই অরাজকতাপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য একটি গণজাগরণের দরকার। দেশের নীতি আদর্শ ও শাসন ব্যবস্থা ৭২এর সংবিধানের অনুকরণে হওয়া উচিত বলে মনে করেন।
সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ইতিহাস ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করে দেশবান্ধব সরকার প্রতিষ্ঠা করা যায় না। ইতিহাস সমসময় সাক্ষ্য বহন করে। সামনে এগুতে হলে দেশের ঐতিহ্য ও ইতিহাস চর্চার উপর গুরুত্ব দিতে হয়।বাংলাদেশের অতীত গৌরবের ইতিহাস রয়েছে। মায়ের ভাষা রক্ষার জন্য যে জাতি রক্ত দিয়েছে, স্বাধিকার আদায়ের পথ ধরে ৩০ লক্ষ মানুষ রক্ত দিয়ে শোষণ, বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। দুর্ভাগ্য হলো ইতিহাসের সেই পথ ধরে বাংলাদেশকে অগ্রসর করা সম্ভবপর হয়ে উঠেনি এখনো।

কর্মসূচি প্রস্তাবনা:দেশের আর্থ সামাজিক অবনতিশীল পরিস্থিতীতে ও জনজীবনের দুর্ভোগের পাশাপাশি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নানান জটিলতার পটভূমিতে দেশবাসী শঙ্কিত। বিশেষত নির্বচন ঘনিয়ে আসলে এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তথা সংখ্যালঘু, আদিবাসী ও নিরীহ জনসাধারণের উপর নিপীড়ন, নির্যাতন ক্ষেত্রবিশেষ নারী-শিশু ধর্ষণ, বাড়ীঘরে অগ্নিসংযোগ, সম্পদ লুটপাটসহ অনেককে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়।আমরা মনেকরি মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ ও ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে সংবিধানে প্রত্যেক নাগরিকের শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র বদ্ধপরিকর। সেই বিবেচনা থেকে এখন থেকে আমাদের সকল নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে হবে। জনমত গঠনসহ সাধারণ নাগরিকদের সাহস যোগাতে হবে। ইতোপূর্বে যে সকল এলাকায় সাম্প্রদায়িক অপশক্তি নির্বাচনকালীন ও পরবর্তী সময়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও নিপীড়ন চালিয়েছিলো সে সব এলাকাসমূহ চিহ্নিত করে সমাজের সচেতন নাগরিক ছাত্র-যুব ব্রিগেড গঠন করতে হবে।

You might also like