সরকারি দলের ২ এমপি’র দ্বন্দ্বে বলির শিকার ইউএনও!
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ সরকারি দলের ২ এমপির দ্বন্দ্বের জেরে বলির শিকার হয়েছেন এক ইউএনও। দায়িত্ব গ্রহণের ৫ মাস ৯ দিনের মাথায় অন্যত্র বদলি হতে হচ্ছে তাঁকে। অনাকাঙ্খিত এই বলির শিকার হচ্ছেন সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা।
গত মঙ্গলবার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ সিদ্দিকী ইউএনও মাসুদ রানাকে জামালগঞ্জ থেকে বদলি করে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় যোগদানের নির্দেশ দেন। বুধবার এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়।
জামালগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এবং সিলেট-সুনামগঞ্জ সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি শামীমা আক্তার খানমের মধ্যে আগামী নির্বাচনে মনোনয়নপ্রাপ্তির ইস্যুতে প্রকট দ্বন্দ্ব বিরাজমান। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে মাঠে আধিপত্য বিস্তারে শোডাউন অব্যাহত রেখেছেন দু’’জনেই।
স্থানীয় আ’লীগের একাধিক নেতা জানান, গত বৃহস্পতিবার জামালগঞ্জ উপজেলা সদরে উপজেলার সব ইউনিয়নের ভাতাভোগীদের নিয়ে সমাবেশ ডেকেছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি। ওই সমাবেশে মহিলা এমপি শামীমা আক্তার খানমও আসার জন্য ইউএনওকে ফোন দেন। তবে এমপি রতন তাতে আপত্তি জানান। মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের উপস্থিতিতে আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ইউএনও মাসুদ রানাও। তবে অজ্ঞাত কারণে ওই ঘটনার পরপরই ইউএনও মাসুদের বদলির সিদ্ধান্ত আসে।
এদিকে, মঙ্গলবার ইউএনওর বদলির আদেশ নিশ্চিত হওয়ার পর উল্লাস করেছেন এমপি রতনের সমর্থকরা। অন্যদিকে শামীমা আক্তার খানমের সমর্থকরা জানিয়েছেন ইউএনও মাসুদ জামালগঞ্জেই থাকবেন।
জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীম জানান, ইউএনও মাসুদ রানা অল্পদিনের মধ্যেই বিতর্কিত হয়েছেন। তিনি উপজেলার বেহেলীতে ধান শুকানোর খলায় মাটি ভরাট করে বাজার স্থাপন করতে চাচ্ছেন। আশপাশের গ্রামের মানুষের মতামত উপেক্ষা করে বিভিন্ন কাজের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যা স্থানীয়দের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
বৃহস্পতিবার সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জামালগঞ্জে ভাতাভোগীদের নিয়ে সমাবেশ ডেকেছিলেন স্থানীয় এমপি। তবে সেখানে ইউএনও তার দায়িত্ব প্রত্যাশা অনুযায়ী পালন করেননি। এছাড়া কর্মস্থলেও কম থাকেন তিনি।
এমপি শামীমার ঘনিষ্ঠ অনুসারী জামালগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম জিলানী আফিন্দি জানান, ইউএনও ভালো মানুষ। স্থানীয় নেতাদের মধ্যে যারা লুটপাট করে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে চায় তারা ইউএনওকে পছন্দ করছে না। এছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালীদের অনেক অনৈতিক তৎপরতার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন ইউএনও মাসুদ রানা।
মহিলা এমপি শামীমা আক্তার খানম জানান, ইউএনও মাসুদ রানা জামালগঞ্জে যোগদানের পর থেকেই অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলেন। এটাই তার দোষ। সেদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তিনি ইউএনওকে কল করেছিলেন। এমপি রতন আপত্তি করায় জটিলতা সৃষ্টি হয়। এই প্রোগ্রাম নিয়ে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়েছে।
এদিকে এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন জানান, জামালগঞ্জের ইউএনওর বদলি সরকারের রুটিন কাজ। এ বিষয়ে তার কিছু বলার সুযোগ নেই।
ইউএনও মাসুদ রানা তার বদলির ব্যাপারে জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাকে সেটিই মানতে হবে। সেদিনের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে যা হয়েছে তাতে তার কিছুই করার ছিল না। দু’জন এমপি সরকারের কোনো অনুষ্ঠানে আসতে চাইলে তার বাধা দেয়ার এখতিয়ার নেই।
সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ জানান, ইউএনও মাসুদকে চাপের মুখে বদলি করা হয়নি। তাকে কুলাউড়ায় আনা হচ্ছে।