সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না আরিফ

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে বার বার চমক দেখানো রাজনীতিবিদ আরিফুল হক চৌধুরী। বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত থাকরেও আ’লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের ‘সন্তুষ্ট’ করে অনেক কিছুই বাগিয়ে নিতে সফল হয়েছেন তিনি। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখে ‘সিলেটের মেয়র ভালো কাজ করছেন’ স্বীকৃতি পাওয়া আরিফ একের পর এক দেখাচ্ছেন ‘খেল’।এবার তাঁকে নিয়ে গুঞ্জন ছিলো, আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিতব্য সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নাগরিক সমাজের ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে যাচ্ছেন আরিফুল হক চৌধুরী। তবে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটেছে। জানা গেছে আসন্ন সিসিক নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হচ্ছেন না।

বর্তমানে যুক্তরাজ্য সফরে রয়েছেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক। ১০ এপ্রিল সোমবার বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেছেন তিনি। লন্ডনের কিংস্টন এলাকার একটি ভেন্যুতে তাদের এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয় বলে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র একটি দায়িত্বশীল সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে। ওই সূত্র জানায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি জানিয়েছেন, এবার প্রার্থী হচ্ছেন না সিসিকি নির্বাচনে। এছাড়াও নতুন চমক নিয়ে লন্ডন থেকে ফিরছেন মেয়র আরিফ। জানা গেছে হাই কমান্ডের নির্দেশনা মেনে সিসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী না হয়ে তাঁর এই ‘ত্যাগ স্বীকারে’ দল তাঁকে অন্যভাবে মূল্যায়ন করবে। আগামীতে আরিফকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করার আশ্বাস দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তাছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে সিলেটের একটি আসনে তাকে প্রার্থী করা হবে।
সিটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার ঠিক আগের দিন ২ এপ্রিল হঠাৎ লন্ডনের উদ্দেশে সিলেট ছাড়েন মেয়র আরিফ। ওইদিন তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী গণমাধ্যমকে জানান, ব্যক্তিগত সফরে তিনি লন্ডনে গেছেন। এক সপ্তাহের মতো সেখানে অবস্থান করবেন।
এদিকে, লন্ডন সফরে থাকা অবস্থায় গুঞ্জন উঠে, আসন্ন সিসিক নির্বাচনে ফের মেয়র প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে আরিফের। তবে এ ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দলীয় সিদ্ধান্ত। ‘বিএনপি এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না’ এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন তিনি। তাই লন্ডনে থাকা দলের নীতি নির্ধারক ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে রাজি করিয়ে প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই সেখানে গেছেন আরিফ। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী সোমবার সেখানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখাও করেন তিনি।
আরও গুঞ্জন উঠেছিল, মেয়র আরিফের পলিসি হবে নির্বাচনের আগে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে নাগরিক সমাজের ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। বিজয়ী হওয়ার পর দল তাকে ‘এমনিতেই কাছে টেনে নেবে’ শোনা গিয়েছিলো এমন কথাও।

তবে যত জল্পনা-কল্পনাই চলুক মেয়র আরিফকে ঘিরে দেশে ফেরার আগেই তিনি জানালেন আর প্রার্থী হচ্ছেন না সিসিকে।সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বর্তমানে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একজন সদস্য। ছিলেন সিলেট নগর কমিটির সভাপতি ও জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকও। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে আরিফুল হক সিসিকের একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের আশীর্বাদ পেয়ে তিনি সিলেটের প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হন। সে সময় তাকে ‘ডিপ্লোম্যাটিক লিডার’ হিসেবে আখ্যা দেন সাইফুর। ওই সময় আরিফ সিটি কর্পোরেশনের নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা কমিটির আহবায়ক ছিলেন।২০১৩ সালের ১৫ জুন বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আরিফ। আ’লীগের শাসনামলেই তৎকালীন মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো মেয়র পদ লাভ করেন তিনি। ২০১৮ সালে ফের কামরানকে হারিয়ে পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হন আরিফ।আরিফুল হকের জন্ম ১৯৫৯ সালের ২৩ নভেম্বর সিলেটের কুমারপাড়ায়। তাঁর পিতা মো. শফিকুল হক চৌধুরী এবং মা আমিনা খাতুন।

You might also like