সিলেট অঞ্চলে সরিষার আবাদ বেড়েছে ৬ হাজার হেক্টর ঢোলাখাল গ্রামের মানুষ ভোজ্যতেলের ধার ধারেন না
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের সমারোহ। হলুদ সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে মাঠ। যেন হলুদ চাদরে ঢাকা পড়েছে। গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারের রয়েছে সরিষা আবাদ। তাদের সারা বছরের ভোজ্যতেলের চাহিদা এখান থেকেই পূরণ হয়ে যায়। ফলে বাজার থেকে ভোজ্যতেল ক্রয় করেন না সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ডুলারখাল গ্রামের মানুষ। পাশের কাঁঠালবাড়ি এবং লম্বাকান্দি গ্রামের মানুষও নিজেদের উৎপাদিত সরিষা দিয়ে ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ করতে পারেন।এদিকে, সরকার ভোজ্যতেল আমদানি হ্রাস করতে তেলবীজ শস্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করায় সিলেট অঞ্চলে সরিষা আবাদ বেড়েছে ৫ হাজার ৭৩০ হেক্টর।
গত বছর আবাদের পরিমাণ ছিলো ১১ হাজর ৯শ’ হেক্টর। এ বছর আবাদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজর ৬৩০ হেক্টর। তবে, উৎপাদন আরো বাড়াতে সরকারের সহায়তা এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন কৃষকরা। দিগন্ত বিস্তৃত সরিষার মাঠে মৌ চাষের অপার সম্ভাবনা অবহেলায় থেকে গেছে বলে জানান স্থানীয়রা।কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ডুলারখাল, কাঁঠালবাড়ি এলাকার চাষীরা জানান, পূর্বপুরুষের সময় থেকেই তারা সরিষা আবাদ করে আসছেন। তাদের নিজেদের সরিষা থেকে উৎপাদিত তেল দিয়েই ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ করে আসছেন। তাদের কখনো বাজার থেকে ভোজ্যতেল ক্রয় করতে হয়নি বরং অনেকেই প্রয়োজনীয় সরিষার পরে অতিরিক্ত সরিষা বাজারে বিক্রি করে দেন।উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের ডুলিয়ার হাওর ও সাতবিলার হাওর জুড়ে আবাদ হয় সরিষা। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে এই ব্লকে প্রায় ৮৬ হেক্টর জমিতে এ বছর সরিষা আবাদ হয়েছে। তবে কৃষকদের মতে এই আবাদ অনেক বেশি। হাওরের অনেকাংশই ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের অংশ হওয়ায় কৃষি বিভাগের হিসেবে তা আসছে না। সেই অংশের জমিও তারা আবাদ করছেন বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। বছরের কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি পর্যন্ত সরিষা রোপণ করা যায় বলে জানান তারা। তবে শীতের সাথে সরিষা আবাদের সম্পর্ক। শীত আগে আসলে সরিষার মৌসুমও আগে শুরু হয় বলে জানান চাষীরা।
গ্রামের আব্দুল মুছব্বির জানান, তাদের বাপ-দাদার সময় থেকেই সরিষা আবাদ হচ্ছে। তারা সব সময়ই নিজেদের সরিষা থেকেই ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ করেছেন এবং অতিরিক্ত সরিষা বাজারে বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, ৩০ শতক ভূমিতে সরিষা আবাদ করতে তাদের প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। ঠিকমতো ফল হলে প্রতি ৩০ শতক ভূমিতে আবাদ থেকে ১২০ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। তিনি জানান, প্রতি ৪০ কেজি সরিষা থেকে ১৮ থেকে ১৯ লিটার সরিষার তেল পাওয়া যায়।তিনি বলেন, এখন কৃষি বিভাগ সরিষা আবাদ বাড়ানোর জন্য পরামর্শ ও সহযোগিতা করছে। তবে এই সহযোগিতার আওতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, সরিষা উৎপাদন বাড়াতে হলে প্রকৃত কৃষকদের সহায়তা দিতে হবে। কৃষকদের আয় বাড়ানোর জন্য সরিষা আবাদের সাথে মৌমাছি পালন থেকে মধু উৎপাদন করা য়ায়। কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে মধু উৎপাদন লাভজনক হতে পারে। কিন্তু বিষয়টি অবহেলায় থেকে গেছে।
তিনি বলেন, তাদের ৩ গ্রামের প্রায় ৮০ ভাগ পরিবার নিজেদের উৎপাদিত সরিষা থেকে ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ করেন। এই অভিজ্ঞতা অন্যরা নিতে পারেন।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ জানান, সরিষা উৎপাদন বাড়াতে কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক কৃষকদের সাথে যোগাযোগ রাখছে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর সরকারকে ২৭ হাজার কোটি টাকার ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। সরকার এর ৪০ ভাগ স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কাজী মুজিবুর রহমান তেল শস্য উৎপাদন বাড়াতে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, কোম্পানিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, বড়লেখা, বানিয়াচং উপজেলায় প্রচুর সরিষা আবাদ হয়। সরকার আবাদ আরো বাড়ানোর জন্য প্রণোদনা, রাজস্ব খাত থেকে সহায়তা, যন্ত্রপাতি, বীজ, সার বিতরণসহ নানা সহায়তা করে যাচ্ছে। মৌ-চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, কিছুদিন পূর্বে মৌ-চাষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। এখন নুুতন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হলে আবারো প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।