সিলেট যুবলীগ:চেয়ারম্যান দেশে ফিরলেই সিদ্ধান্ত

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটি গঠনের বিষয়ে নানা কথাবার্তা চলছে। বিশেষ করে তিন বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ার বিষয়টি মানতে পারছেন না নেতাকর্মীরা। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, জেলা ও মহানগর যুবলীগের কমিটি কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়েছে। এখন অপেক্ষার পালা। কেন্দ্রীয় সভাপতি দেশের বাইরে। তিনি ফিরলেই কমিটি অনুমোদন হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।প্রায় দেড় যুগ ধরে ঝিমিয়ে পড়া সিলেট যুবলীগকে চাঙ্গা করতে ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর ঠিক দু’দিন আগে অনুষ্ঠিত হয় মহানগর সম্মেলন।সংগঠনের তৎকালীন সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর উপস্থিতিতে সম্মেলনে নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ভোটে জেলায় সভাপতি নির্বাচিত হন শামীম আহমদ ভিপি ও সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম আহমদ। মহানগরে সভাপতি নির্বাচিত হন আগের কমিটির আহ্বায়ক আলম খান মুক্তি ও সাধারণ সম্পাদক আগের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মুশফিক জায়গীরদার।

সম্মেলনের পরপরই সিলেট যুবলীগ প্রাণ ফিরে পায়। নেতাকর্মীদের মাঝে চাঞ্চল্য ফিরে আসে। কিন্তু কমিটি গঠনের ৩ বছর হলেও এখন পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি এ ২ ইউনিটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। গুরুত্বপূর্ণ দ’ুটি ইউনিটেরই নেতৃত্বে আসতে ইচ্ছুক পদপ্রত্যাশীরা কমিটি করতে না পারাকে ‘ব্যর্থতা’ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন।তবে জেলা ও মহানগর যুবলীগের নির্বাচিত নেতৃবৃন্দ এবং তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলোর দাবি অন্যরকম। তাদের কথা হচ্ছে, সময় ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও নানা কারণে কমিটি গঠনের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। সেটি কেন্দ্রের নির্দেশ বা পরামর্শেই। ৭ মাস আগে তারা এ ব্যাপারে চূড়ান্ত গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছিলেন এবং এ সময়ের মধ্যেই দু’টি ইউনিটের কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়েছে।জানা গেছে, যুবলীগের মহানগর ও জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার পরপরই চলে আসে শোকের মাস আগস্ট। বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত বেদনাবিধুর এই মাস। কাজেই কেন্দ্র থেকে সব ধরনের কমিটি গঠন কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি জাতির পিতার স্মরণে কেন্দ্র থেকে নানা কর্মসূচিও দেয়া হয়েছিল। একই সাথে জেলা ও মহানগর যুবলীগও নিজস্ব উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালন করে। এভাবেই চলে যায় শোকাবহ আগস্ট।

এরপরই সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনোকান্ডে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে ওমর ফারুক চৌধুরীর নেতৃত্বে থাকা যুবলীগ। সারাদেশে তখন যুবলীগকে নিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটে।এরপর শুরু হয় কেন্দ্রীয় যুবলীগকে ঢেলে সাজানোর কাজ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ওইদিন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ ফজলে শামস পরশ এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মাইনুল হোসেন খান নিখিল। যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসের কাউন্সিল অধিবেশনে তাদের নির্বাচিত করা হয়।নতুন কমিটি আসার পরপরই যুবলীগে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়। ক্যাসিনোকান্ড, চাঁদাবাজির মতো অপবাদ থেকে যুবলীগকে বের করতে পরশ-নিখিলের নেতৃত্বে কাজ করেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তৃণমূল থেকে শুরু করে জেলা পর্যন্ত প্রত্যেক কমিটিতে শুদ্ধি অভিযান চলে। এ অভিযানেই চলে যায় ৩ মাস। কেন্দ্রের নির্দেশনা না পাওয়ায় জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ কমিটি গঠনের কোন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেননি।

এরপর সারা বিশ্বে শুরু হয় মহামারি করোনার তান্ডব। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর সরকার দেশের মানুষের সুরক্ষায় কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। মহামারি থেকে সুরক্ষায় নেয়া হয় বিভিন্ন পদক্ষেপ। শুরুতেই সব রাজনৈতিক দলের সব কর্মসূচি ও সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। জনসমাগম এড়াতে সরকারের এ পদক্ষেপ আলোর মুখ দেখে। এতে ভালই সুফল পেয়েছেন দেশবাসী। ২০২০ ও ২০২১ সাল চলে যায় এভাবেই। লকডাউন-লকওপেন। সবকিছু মিলিয়ে দেশ এক কঠিন সময় পার করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে মহামারি কোভিড-১৯ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। আর তখনই সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটি গঠন নিয়ে কাজ শুরু করে যুবলীগ।এ হিসেবে এ বছরের মাত্র ৭ মাস সময় পেয়েছেন নির্বাচিত নেতৃবৃন্দ। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে সরকারের সব নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও কেন্দ্রীয় যুবলীগ থেকে নির্দেশনা পাওয়ামাত্রই মাঠে নামেন জেলা ও মহানগর যুবলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ।

নতুন করে যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে আহ্বান করা হয় জীবনবৃত্তান্ত। জেলা, উপজেলা ও মহানগর থেকে তা আসতে শুরু করে। এ থেকে নেতা নির্বাচন করতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের একটি সূত্র জানায়।এ ব্যাপারে মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি বলেন, আমাদের মেয়াদের ২ বছর করোনা থাকায় কাজ করতে পারিনি। সম্প্রতি আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রস্তুত করে কেন্দ্রে জমা দিয়েছি। কিন্তু সেখান থেকে এখনও অনুমোদন পাওয়া যায়নি।জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ ভিপি এ সম্পর্কে গণমাধ্যমকে বলেন, ২৯ জুলাই সম্মেলনের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে কোন ম্যাসেজ পাইনি। পরে যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, নতুন কমিটি আসে। তাদের নেতৃত্বে যখনই কাজ শুরু করবো, তখনই দেশে করোনা হানা দেয়। প্রায় ২ বছর করোনা থাকার কারণে কাজ করা যায়নি। সম্প্রতি কমিটি প্রস্তুত করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। আশা করছি, শিগগিরই কমিটি অনুমোদন পাবে। জেলা ও মহানগর কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ড. রেজাউল কবির গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের ৬৪ জেলায় বহু কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু তবু এসব কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাই বহাল তবিয়তে থাকবেন। তারাই কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবেন। যুবলীগের প্রেসিডেন্ট দেশের বাইরে রয়েছেন, দেশে আসলেই সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

You might also like