সিলেট সিটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কঠোর অবস্থানে

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে বিগত দুই টার্ম সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর এতে মেয়র পদে চমক দেখান বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। বিগত দু’বারই সিলেট সিটির ভোটকে জাতীয় নির্বাচনে রোল মডেল হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল। এবারো একই পরিস্থিতি। জাতীয় নির্বাচনের ঠিক পূর্ব মূহূর্তে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের ৫ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। তবে সবার চোখ এবার সিলেটের দিকে।আর এর কারণ হচ্ছে; সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী হচ্ছেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য। বিগত দুই সিটি নির্বাচনে বিএনপি তার সঙ্গেই ছিল। প্রথমবার বিএনপি’র সমর্থন ও দ্বিতীয়বার সরাসরি দলীয় প্রতীকে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। বিএনপি এবার আগে থেকেই চেপে ধরেছে মেয়র আরিফসহ সিলেটের বিএনপিদলীয় কাউন্সিলরদেরও।নির্বাচনে না যেতেই এরই মধ্যে দিয়েছেন কঠোর বার্তা। এই বার্তার পেছনের কারণ কী? এ প্রশ্নের উত্তরে প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না সিলেট বিএনপি’র নেতারা।
তবে কয়েকজন নেতা গতকাল জানিয়েছেন, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিয়ে বিগত দুই নির্বাচনে গ্রহণযোগ্যতা দেখিয়েছিল ক্ষমতাসীন দল আ’লীগ। এ কারণে এবার বিএনপি সিলেটে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলের সবাইকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চাচ্ছে।

তাদের মতে, বিএনপি’র মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনে না থাকলে সিটি করপোরেশন নির্বাচন একপেশে হবে। কোনো লড়াই হবে না। ফলে নির্বাচনকে বৈধতা দেয়ার সুযোগ থাকবে না। অন্যদিকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও লড়াইয়ের সম্ভাবনা থেকে যায়। এমনকি বিএনপি’র কাছ থেকে জয় কেড়ে নেয়াও সহজ হবে না। কাউন্সিলর প্রার্থীরাও গ্রহণযোগ্য জনপ্রতিনিধি। অন্তত ২০/২৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর জয়েরও সম্ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে সিলেট মহানগর বিএনপি’র তরফ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে প্রার্থীদের নামও উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর বিএনপি’র এক শীর্ষ নেতা।এদিকে, গত রোববার সিলেটে ওয়ার্ড বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের কাছে মহানগর বিএনপি’র পক্ষ থেকে আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী না হতে লিখিত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশনাকে কঠোর বার্তা হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা।নগর বিএনপি’র সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকদের এই চিঠি দেয়া হয়।চিঠিতে বলা হয়; ‘বিএনপি বিগত ১৫ বছরের অধিক সময় থেকে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, গণমানুষের রাজনৈতিক অধিকারসহ সরকারের সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সরকারের মিথ্যা মামলায় দীর্ঘদিন যাবৎ কারান্তরীণ। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মিথ্যা মামলায় সাজায় দেশান্তরীণ।

এই অবৈধ সরকারের সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে বিএনপি যখন সর্বাত্মক চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক তখনই শেখ হাসিনা সরকার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পিতভাবে ইভিএমের মাধ্যমে সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিচ্ছে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট বক্তব্য এই পাতানো নির্বাচনে দলের কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মী মেয়র বা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন, কোনো ধরণের নির্বাচনী কর্মকা- করতে পারবেন না। যদি এই পাতানো নির্বাচনে দলের কোনো নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করে বা নির্বাচনী কাজে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ কঠিন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।চিঠিতে আরও বলা হয় ‘দেশের এই ক্রান্তিকালে দলের চূড়ান্ত আন্দোলনের সময়ে আমরা আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা আশা করি, আপনারা এই পাতানো নির্বাচন থেকে বিরত থাকবেন।চিঠি প্রেরণ প্রসঙ্গে নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন; ‘কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুসারে তারা এই চিঠি প্রেরণ করেছেন। ওয়ার্ড ও অঙ্গ সংগঠনের কমিটিকে উদ্দেশ্য করে এই চিঠি প্রেরণ করা হয়।তিনি জানান, ‘বিএনপি চাইছে; দলের কেউ যেন এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নেয়। এ কারণে বিএনপি’র তরফ থেকে এ বার্তা দেয়া হয়েছে।জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘বিএনপি’র বার্তা স্পষ্ট। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। যদি কেউ দলের অবাধ্য হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন তাহলে দল তার বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে। দলীয় সিদ্ধান্ত সবাই মানতে বাধ্য বলে জানান তিনি।’

You might also like