সিলেটে পিটিয়ে হত্যা পানি চেয়েছিলো নয়ন দেয়নি নির্যাতনকারীরা
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ নানা কেলেঙ্কারীতে জড়িয়ে পড়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম জামাল অ্যান্ড কোম্পানি লিঃ।একের পর এক অপকর্মে এই প্রতিষ্ঠানের নামে সিলেটের মানুষ শংকিত। তাও যে সে অপকর্ম নয়। সরাসরি খুনের সাথে জড়িত হয়েছে এই ‘কুপা’ প্রতিষ্ঠানের নাম। গত ৩ জুন এই প্রতিষ্ঠানের কর্মাধীন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১২ তলা ভবনের ছাদ থেকে লোহার পাইপ পড়ে সেনাবাহিনীর এক সদস্য ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। আর ৯ জুন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নির্মাণাধীন ভবনে কর্মরত ২ নির্মাণ শ্রমিককে চোর সন্দেহে অন্যায়ভাবে পিটিয়ে ১ জনকে ঘটনাস্থলেই হত্যা করা হয়েছে। আরেক হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। সিলেটের সচেতন সমাজ এই ‘খুনী’ প্রতিষ্ঠানকে সিলেটে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে পাততালি গুটিয়ে চলে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।
খুনী এম জামাল অ্যান্ড কোম্পানি লিঃ-এ কাজ করতো নির্মাণশ্রমিক নয়ন মিয়া। গরিব পরিবারের সন্তান। জীবন-জীবিকার তাগিদে কৈশোরের গন্ডি শেষ হতে না হতেই নামতে হয়েছিলো জীবনযুদ্ধে। মাত্র একদিন আগে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার ইউনিটের নির্মাণাধীন ভবনে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু চুরির অপবাদে নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ, মারাত্মক আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার আগেই ত্যাগ করতে হলো শেষ নিঃশ্বাস। মৃত্যুর আগে, নির্যাতনের সময় কাতরাতে কাতরাতে পানি চেয়েছিল সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার আবদুল জলিলের ছেলে নয়ন মিয়া (২০)। কিন্তু তাকে পাষন্ডরা তাকে পানি দেয়নি। পানি পান না করেই তাকে এ দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হলো।
৯ জুন শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ওসমানী হাসপাতালের ক্যানসার ইউনিটের নির্মাণাধীন ভবনে কর্মরত নয়ন মিয়া ও আইয়ুব আলী নামের ২ শ্রমিককে চুরির অভিযোগে একটি রুমে নিয়ে ব্যাপক মারধোর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা। পরে মারাত্মক আহত অবস্থায় সকাল সোয়া ৯টার দিকে নয়নকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সহকর্মীদের দেয়া গোপন তথ্যে হাসপাতাল ক্যাম্পের পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আরও এক শ্রমিককে হাত-পা বাঁধা এবং মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করে।এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে নয়নের বাবা আবদুল জলিল বাদী হয়ে কোতয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩/৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত হিসেবে এখন পর্যন্ত পর্যন্ত ৫অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হল, কুড়িগ্রামের কচাকাঁটা থানার নারায়ণপুর গ্রামের আমিনুল ইসলাম, আয়নাল, সাবান আলী, দিনাজপুরের বিরল উপজেলার তেঘরা গ্রামের রুবেল মিয়া ও বগুড়ার শিবগঞ্জের আবদুর রাজ্জাক। ৫ জন গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালি থানার ওসি মোহম্মদ আলী মাহমুদ। তিনি জানান, নিহত নয়নের লাশ ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।এদিকে, শুক্রবার সকালে নয়নকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে নির্যাতনের শিকার আরেক শ্রমিকের তথ্য পাওয়া যায়। পরে নির্মাণাধীন ভবন থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আইয়ুব আলী নামের ওই শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আইয়ুব আলী বলেন, ‘নয়ন মারা যাওয়ার আগে পানি চেয়েছিল, কিন্তু নির্যাতনকারী পাষন্ডরা তাকে পানি পর্যন্ত খেতে দেয়নি।
ভবনে কাজ করা ফজলুল হক নামের এক নির্মাণশ্রমিক বলেন, নির্মাণাধীন ভবনে ঠিকাদারের লোকজন থাকেন। তাঁদের ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আর মুঠোফোন চুরির অভিযোগে শুক্রবার সকাল ৬ টার দিকে একটি কক্ষের দরজা বন্ধ করে শুধু সন্দেহের জেরে নয়ন ও আইয়ুব আলীকে নির্যাতন করা হয়। নয়ন গত বৃহস্পতিবার থেকে নতুন কাজ শুরু করেছিলেন। আর তাঁকে এনেছিলেন আইয়ুব আলী।নয়নের বাবা আবদুল জলিল বলেন, ২ ছেলে, ৩ মেয়ের মধ্যে নয়ন দ্বিতীয়। কাজের জন্য বাড়ি থেকে তাঁর ছেলে বের হয়েছিল। শুক্রবার সকাল থেকে তাঁরা ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। এরপর স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে নয়নের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারেন।জানা যায়, হাসপাতালের ভবনটি নির্মাণ করছে এম জামাল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানই সিলেট সিটি করপোরেশনের ১২তলা ভবনের নির্মাণকাজ করছে। গত ৩ জুন সিটি করপোরেশনের নির্মাণাধীন ভবনের উপর থেকে লোহার পাইপ নিচে পড়ে সিটি সুপার মার্কেটের ভেতরে থাকা এক সেনাসদস্যের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিককে আসামি করা হয়েছে।