সিলেটে হিটস্ট্রোকে রাস্তায় গড়াগড়ি

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ গত বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টা। নগরীর দক্ষিণ সুরমার শাহজালাল ব্রিজের উপরে হঠাৎ করে একটি যাত্রীবাহী রিকশার চালক কাঁপতে কাঁপতে রিকশা থেকে ছিটকে পড়লেন। সাথে সাথে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। তারা তাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি ছিটিয়ে দেন। প্রায় ৩০ মিনিট চেষ্টার পর ওই চালক কিছুটা স্বাভাবিক হলে তাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেন গোলাপগঞ্জের হেতিমগঞ্জ এলাকার একটা ওষুধ কোম্পানীর চাকরিজীবী ফয়েজ আহমদ (৩২)। এমন দৃশ্য বর্ণনা করেছেন সিলেটের সিনিয়র সাংবাদিক এনামুল কবীর।

ফয়েজ আহমদ জানান, ওই চালককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। কাজে যাই। কিন্তু আমরা না থাকলে তার মারাত্মক বিপদ হতে পারতো।শনিবার দুপুর ২ টার দিকে নগরীর ইলেক্ট্রি সাপ্লাই রোডে এক যাত্রীকে নামিয়ে দেয়ার পর হঠাৎ কাঁপতে কাঁপতে পড়ে যান রিকশাচালক হামিদ আলী (৪৬)। এরপর তাকে ধরাধরি করে পাশের একটু ছায়াঘেরা স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন ওই এলাকায় বিদ্যুৎ ছিলনা। আশপাশের লোকজন কেউ পানি নিয়ে আসেন। কেউবা নিয়ে আসেন হাতপাখা। একজন মহিলা নিয়ে আসেন বোতল ভর্তি স্যালাইনের পানি। তার মুখে পানি তুলে দেয়ার পাশাপাশি মাথা এবং শরীরের অন্যান্য স্থানে পানি ছিটিয়ে তাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়। খাওয়ানো হয় খাবার স্যালাইন। দেয়া হয় হাতপাখার বাতাস। প্রায় ৪৫/৫০ মিনিট পর তিনি কিছুটা স্বাভাবিক হলে তাকে অন্য একটা রিকশায় তার বাসায় পাঠানো হয়।

হামিদ আলী বাসায় ফেরার আগে প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন। জানান, হঠাৎ চোখে অন্ধকার দেখেন। শরীর কেঁপে উঠে। একপর্যায়ে রাস্তায় শুয়ে পড়তে বাধ্য হন তিনি।
এই দুই চালকের বিবরণ জানিয়ে আলাপ হয় সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্তের সাথে। তিনি বলেন, এটাই হচ্ছে হিটস্ট্রোক। অতিরিক্ত গরম সহ্য করতে না পারলে অনেকেরই এ অবস্থা হয়। ইদানিং তাদের কাছে এমন আরও বেশ কয়েকটি ঘটনার বিবরণ জানানো হয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।সপ্তাহখানেক আগে সিলেট অঞ্চলে এক দফা তাপদাহের পর এখন আবার সেই উত্তপ্ত পরিস্থিতি। গত কয়েকদিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রির উপরে। শনিবারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন উত্তপ্ত অবস্থায় হিটস্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সিলেট জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাক্তার জন্মেজয় দত্ত বলেন, হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এখন বেশি। এতে যে কারও মৃত্যুও হতে পারে। তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এ সমস্যা এড়ানো সম্ভব।তিনি বলেন, সরাসরি যাতে রোদ মাথা বা শরীরে না লাগে সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া ও ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে ছাতা ব্যবহারের প্রতি জোর দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া গরমে প্রচুর পানি পান করা, বিশেষ করে খাবার স্যালাইন মেশানো পানি পানের পরামর্শ তার। আর রোদের মধ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার ও হার্টের রোগীদের এ ব্যাপারে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।আর হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে পড়লে করণীয় সম্পর্কে তার পরামর্শ, যতদ্রুত সম্ভব হাসপাতালে পাঠাতে হবে। তার আগে খাবার স্যালাইন মেশানো পানি পানের পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে যেসব অংশে বাতাস লাগেনা, সেসব অংশে পানির ছিটা বা ঝাপটা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তার জন্মেজয় দত্ত।

You might also like