সিলেটের পাথর কোয়ারি বন্ধের ৩ বছর হতে চলছে
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ প্রায় ৩৩ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন পাথর কোয়ারি। পাথর শ্রমিক ও পরিবহন শ্রমিকরা কোয়ারি খোলার দাবিতে আন্দোলন করছেন। আর পরিবেশবাদীরা বলছেন, কোয়ারি খুলে দিলে সিলেটের প্রকৃতি, পরিবেশ ও পর্যটনের ক্ষেত্রে বর্তমানে যে সু-বাতাস বইছে, এ ধারা অব্যাহত রাখা কঠিন হবে। এ অবস্থায় কোয়ারি পরিদর্শনে এসেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল। সিলেটের কানাইঘাটের লোভাছড়া পাথর কোয়ারি থেকে গত ৯ নভেম্বর তাদের পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু হয়। সুনামগঞ্জের বিভিন্ন পাথর কোয়ারি পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে গতকাল তাদের পরিদর্শন কার্যক্রম শেষ হয়েছে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেট জেলায় সব মিলিয়ে ৭টি পাথর কোয়ারি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ, শাহ আরফিন ও উৎমাছড়া, গোয়াইনঘাটের জাফলং ও বিছনাকান্দি, জৈন্তাপুরের শ্রীপুর এবং কানাইঘাটের লোভাছড়া। এছাড়া, সুনামগঞ্জ জেলায়ও বেশ কয়েকটি পাথর কোয়ারি রয়েছে। করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসের অজুহাতে গত ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সিলেটের বেশ কয়েকটি পাথর কোয়ারি বন্ধ আছে। পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে পাথর শ্রমিক ও পরিবহন শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছে। সম্প্রতি এ দাবিতে সিলেট বিভাগীয় ট্রাক, পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বানে ৪৮ ঘণ্টার পণ্যপরিবহন ধর্মঘটও পালন করা হয়। তারা বলছেন, কোয়ারি বন্ধ থাকায় অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা হতাশার মধ্যে রয়েছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সম্প্রতি সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ সব কোয়ারি ব্যবস্থাপনা ও হালনাগাদের জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবরে একটি ডিও লেটার (আধা সরকারি পত্র) দেন। মন্ত্রীর চিঠি পাওয়ার পর পাথর কোয়ারি সরেজমিন পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত নেয় বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় গঠিত টিম।প্রতিনিধিদলের পরিদর্শন শিডিউল অনুযায়ী, ৯ নভেম্বর তারা কানাইঘাটের লোভাছড়া পাথর কোয়ারি পরিদর্শনের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। পরদিন গোয়াইনঘাটের জাফলং, বিছনাকান্দি ও জৈন্তাপুরের শ্রীপুর এবং ১১ নভেম্বর কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ, কালাইরাগ, শাহ আরেফিন ও উৎমাছড়া পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করেন। গতকাল সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তারা সুনামগঞ্জ জেলা সদর, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করেন।সরেজমিনে দেখা গেছে, পরিদর্শনে আসা প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ভূমি জরিপ ম্যাপ অনুসারে পায়ে হেঁটে স্পটগুলো ঘুরে দেখেন এবং দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ থাকা কোয়ারিতে পাথরের মজুদ পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করেন।প্রতিনিধি দলে রয়েছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অপারেশন-টু অনুবিভাগের যুগ্ম-সচিব মো. নায়েব আলী, বিএমডি খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো ডেপুটি ডিরেক্টর মো. মাহফুজুর রহমান, জিএমবি ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর মিজানুর রহমান, পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক একেএম রফিকুল ইসলাম। এছাড়া, সংশ্লিষ্ট এলাকার পদস্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও তাদেরকে সহযোগিতা করছেন।
প্রতিনিধি দলের সদস্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অপারেশন-টু অনুবিভাগের যুগ্মসচিব মো. নায়েব আলী জানান, পাথর কোয়ারিসমূহ পরিদর্শন শেষে আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবো।বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, পাথর উত্তোলন বন্ধ করা যাবে না-এটা তারা কখনো বলেননি। অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, অতীতে পাথরখেকো চক্র ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে পাথর তোলার অনুমতি নিয়ে কৃষি জমি ধ্বংস করেছে। পরিদর্শনকারী দল প্রয়োজনে ড্রোন ব্যবহারে প্রকৃতি ধ্বংসের বিষয়টি অবলোকন করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক এ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা। বলেন, পাথর কোয়ারি খুলে দেয়া হলে ভবিষ্যতে তা আটকানো অসম্ভব হবে। কোয়ারি বন্ধ থাকায় সিলেটের প্রকৃতি, পরিবেশ ও পর্যটনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুবাতাস বইছে-তা ধরে রাখা কঠিন হবে বলে তার মন্তব্য।