সিলেটের মাটির নিচে রয়েছে ৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস!
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ সিলেটে খুলছে নতুন অপার সম্ভাবনার দুয়ার। এ অঞ্চলের ভূ-গর্ভে ৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস পাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা দেখছে দেশি-বিদেশি ৩টি জ্বালানি তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও জরিপকারী প্রতিষ্ঠান।প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে সিলেট অঞ্চলে জোরালোভাবে জরিপ কাজও শুরু করে দিয়েছে। চলতি বছরের আগস্টের দিকে জরিপের প্রতিবেদন সিলেট গ্যাসফিল্ড লিঃ’র (এসজিএফসিএল) কাছে হস্তান্তর করা হবে।
জানা গেছে, দেশে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সিলেট অঞ্চলে জোরালোভাবে জরিপকাজ চলছে। সিলেট গ্যাসফিল্ড লিঃ’র (এসজিএফসিএল) আওতাধীন স্থলভাগে গ্যাস ব্লক ১৩ ও ১৪-এর ৫টি এলাকায় এরই মধ্যে থ্রিডি সিসমিক সার্ভে শুরু করেছে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (সিএনপিসি) অধীন অনুসন্ধান ও জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ব্যুরো অব জিওফিজিক্যাল প্রসপেক্টিং (বিজিপি)। এসব এলাকায় প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস পাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসজিএফসিএলের পক্ষ থেকে ২ মার্চ গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদ এলাকা নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। জ্বালানি বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার প্রতিবেদনটি উপস্থাপনের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদনে এসজিএফসিএলের আওতাধীন গ্যাস মজুদ, উত্তোলন এবং সিলেট ও মৌলভীবাজারের ৫টি গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদ এলাকার তথ্য উঠে আসে। এতে দেখানো হয়, ব্লক ১৩ ও ১৪-এর আওতাভুক্ত মৌলভীবাজার জেলার হারারগজ, বাতচিয়া ও ডুপিটিলা এবং সিলেট দক্ষিণ ও জকিগঞ্জ এলাকায় ২ হাজার ৮১৩ বিসিএফ গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদ রয়েছে। দেশি জ্বালানি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স, মার্কিন কোম্পানি শ্লুমবার্জারস ও অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক ওয়েলড্রিল সম্ভাব্য গ্যাস মজুদের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় সমীক্ষা চালায়। এরমধ্যে মৌলভীবাজারের হারারগঞ্জে ৪৯২ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ), একই জেলার বাতচিয়ায় ৫৭৭ বিসিএফ, ডুপিটিলায় ৬৭৯ বিসিএফ, সিলেটের জকিগঞ্জ/আটগ্রামে ৮৮৬ বিসিএফ ও সিলেট দক্ষিণে ১৭৯ বিসিএফ সম্ভাব্য গ্যাস মজুদ রয়েছে।গ্যাস পাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা থাকায় এরই মধ্যে এসব এলাকায় থ্রিডি সিসমিক সার্ভে শুরু করেছে চীনা কোম্পানি বিজিপি। জরিপের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ শেষে কোম্পানিটির আগামী আগস্ট নাগাদ এসজিএফসিএলের কাছে ফলাফল উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে এ দুটি ব্লকে থ্রিডি সিসমিক সার্ভের ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করেছে চীনা অনুসন্ধানকারী দলটি। গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদ এলাকাগুলো চিহ্নিত করতে শুরুতে টুডি এবং পরে থ্রিডি সিসমিক সার্ভে করা হয়। এরপর সেসব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে কূপ খনন এলাকা চিহ্নিত করা হয়। সম্ভাবনা খুব জোরালো হলেই কূপ খননের উদ্যোগ নেয়া হয়।
স্থলভাগের ১৩ ও ১৪ নম্বর ব্লকে এখন থ্রিডি সিসমিক সার্ভে চলছে। ওই অঞ্চল ও সংলগ্ন এলাকায় বেশ কিছু গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানার অবস্থানও ১৩ ও ১৪ নম্বর ব্লকের কাছে। ফলে সেখানেও গ্যাস পাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন ভূ-তাত্ত্বিকরা।এসজিএফসিএল সূত্র জানিয়েছে, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ও সংস্থাটির নিজস্ব অর্থায়নে এ এলাকায় জরিপকাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। এজন্য গৃহিত প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর আওতায় দুটি ব্লকের সিলেট গ্যাসফিল্ড এলাকার ৮৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় থ্রিডি সিসমিক সার্ভে করা হবে। আগামী বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ চূড়ান্তভাবে শেষ হওয়ার কথা। এর মাধ্যমে হাইড্রোকার্বন রিজার্ভ ও রিসোর্স এস্টিমেট এবং নতুন কূপ খননের লোকেশন চিহ্নিত করা হবে বলে জানায় এসজিএফসিএল।প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্লক ১৩ নম্বরের বাতচিয়া কমলগঞ্জ উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন ও কুলাউড়া উপজেলার দু’টি ইউনিয়ন মিলিয়ে ১২০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় সার্ভে, ড্রিলিং ও তেল-গ্যাস মজুদ বিষয়ে রেকর্ডিং কাজ শেষ করা গেছে। একই প্রক্রিয়ায় ৩টি ধাপে কাজ শেষ হয়েছে ব্লক ১৪ নম্বরের হারারগজের আওতাভুক্ত কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৩৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকায়।
জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট দু’জন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানে সরকার নানা ধরণের উদ্যোগ নিয়েছে। অনেকগুলো প্রকল্পের কাজ চলছে। সিলেট অঞ্চলে গ্যাস মজুদের সমীক্ষা নিয়েও থ্রিডি সিসমিক প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে গ্যাস আছে কিনা তা এখনই বলা যাবে না। কারণ থ্রিডি সিসমিকের পর গ্যাস কূপ খননের জায়গাগুলো চিহ্নিত করা হবে। এরপর সেখানে কূপ খনন করে চাপ ও মজুদের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে বলা যাবে গ্যাস রয়েছে।তবে যে ৫টি এলাকায় গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদ ক্ষেত্র চিহ্নিত হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে আগেও গ্যাসের মজুদ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে সিলেটের জকিগঞ্জে ২০২১ সালের আগস্টে দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া যায়। রাষ্ট্রীয় জ্বালানি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স সেখানে ওই গ্যাসক্ষেত্রে ৬৮ বিসিএফ গ্যাসের মজুদ আবিষ্কার করে।ব্লক ১৩ ও ১৪ ভূক্ত এলাকাগুলোর পাশেই রয়েছে রশিদপুর, বিয়ানীবাজার, জালালাবাদ ও পরিত্যক্ত গ্যাসক্ষেত্র ছাতক। এর মধ্যে ছাতকে বিপুল পরিমাণ গ্যাস থাকলেও কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে মামলা জটিলতার কারণে আজও তা উত্তোলন সম্ভব হয়নি।