সিসিক নির্বাচন:ভোটের মাঠে বিএনপি জামায়াতের অর্ধশত প্রার্থী
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ দলের কঠোর হুশিয়ারি উপেক্ষা করে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন নি।
গত ১ জুন মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিন থাকলেও অনড় রয়ে গেছেন সবাই। ফলে তাদের বিরুদ্ধে ‘আজীবন বহিস্কারের’ মতো কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বিএনপি। তবে নির্বাচনে অংশ নেয়া নেতাকর্মীদের ব্যাপারে নমনীয় জামায়াত। কাউন্সিলর প্রার্থী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে নিরবে তাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে সিটি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়া দলটি।নির্বাচন নিয়ে দলের কঠোর অবস্থানের কারণে অংশ নেননি বর্তমান মেয়র ও বিএনপির নির্বাহী সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। নিজে প্রার্থী না হওয়ার সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়ে তিনি নগরবাসীকেও ভোট বর্জনের আহবান জানান। মেয়র আরিফের বর্জনের পর সিটি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন আরও কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি নেতা। এরপরও নির্বাচনে অনড় রয়ে গেছেন অন্তত অর্ধশত নেতা। নগরির বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে তারা প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। বৃহস্পতিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিন এসব প্রার্থীদের কেউ কেউ হয়তো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে আশাবাদী ছিলেন দলের নেতারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন প্রার্থীই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন নি।
বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে যেসব বিএনপি নেতা এবারও প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন তারা হলেন, নগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, নগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি, ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ওয়ার্ড বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও ১৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম, ওয়ার্ড বিএনপি নেতা ও ১৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল, ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুর রকিব তুহিন, নগর মহিলা দলের সভাপতি ও নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক এবং সংরক্ষিত ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এডভোকেট রোকসানা বেগম শাহনাজ এবারও প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এরমধ্যে রোকসানা বেগম শাহনাজ এবার ২৫নং সাধারণ ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হয়েছেন।এছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্ডে যেসব বিএনপি নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন তারা হলেন, ৫নং ওয়ার্ডে নগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল মিয়া, নগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সাবেক সদস্য খালেদ আকবর চৌধুরী, ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান খোকন ও নগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. শাহেদ সিরাজ। ১৫নং ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান শওকত, ১৮নং ওয়ার্ডে সাবেক ছাত্রদল নেতা সালমান চৌধুরী, ২২নং ওয়ার্ডে সিলেট সরকারী কলেজ ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক মো. বদরুল আজাদ রানা, ২৪নং ওয়ার্ডে সাবেক ছাত্রদল নেতা হুমায়ূন কবির সুহিন, ২৯ নং ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা সাহেদ খান স্বপন ও গোলাম মোস্তফা কামাল, ৩০নং ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা জাবেদ আহমদ সেলিম, ৩৭নং ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা দেলওয়ার হোসেন জয় ও ৪০নং ওয়ার্ডে ছাত্রদল নেতা মো. আবদুল হাসিব।
এছাড়া সংরক্ষিত ৫নং ওয়ার্ডে মহিলাদল নেত্রী শাহানা বেগম শানু, ৬নং ওয়ার্ডে ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি কামরুন নাহার চৌধুরী, ৮নং ওয়ার্ডে জেলা মহিলা দলের সভাপতি সালেহা কবীর সেপী প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া মেয়র পদে যুবদলকর্মী ছালাহ উদ্দিন রিমনও প্রার্থী হয়েছেন।দলীয় নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে নগর বিএনপি সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে যারা নির্বাচন করছেন তাদের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হবে। কেন্দ্র থেকে আগেই ঘোষণা দেয়া হয়েছে যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হবেন তাদেরকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হবে।’
এদিকে, নির্বাচনে জামায়াতের অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী ও সমর্থক কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে রয়েছেন ২নং ওয়ার্ডে মো. রাজিক মিয়া, ৭নং ওয়ার্ডে সাঈদ মো. আবদুল্লাহ, ৮নং ওয়ার্ডে ফয়জুল হক, ১২নং ওয়ার্ডে মো. আবদুল কাদির, ১৬নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আবদুল মুহিত জাবেদ, ২৪নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর সুহেল আহমদ রিপন, ২৭নং ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর আবদুল জলিল নজরুল, ২৮নং ওয়ার্ডে সুহেল রানা, ৩০নং ওয়ার্ডে এডভোকেট মকসুদ আহমেদ, ৩৩নং ওয়ার্ডে মঞ্জুরুল ইসলাম ও ৪১নং ওয়ার্ডে মঞ্জুরুল ইসলাম।এ প্রসঙ্গে জামায়াতের নগর শাখার আমির মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই গত সিটি নির্বাচনে আমরা আলাদা প্রার্থী দিলেও এবার দেইনি। কাউন্সিলর নির্বাচনকে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ নেই। দলীয় পরিচয়ে কেউ কাউন্সিলর প্রার্থী হন না। স্থানীয়দের চাপে ও ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতার কারণেই জামায়াতের অনেকে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। এর সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। স্থানীয় নির্বাচন হওয়ায় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দল কোনো কঠোর সিদ্ধান্তও নেবে না। তা ছাড়া প্রার্থী হওয়া ব্যক্তিরা দলের কোনো দায়িত্বশীল পদেও নেই।’