সুরালয়ের সঙ্গীত উৎসব: দর্শকদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় সিক্ত হলো শিক্ষার্থীবৃন্দ
সারওয়ার ই আলম
অতিথি লেখক, সত্যবাণী
লন্ডন: স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী শ্রীমতি গৌরী চৌধুরীর অনবদ্য পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সঙ্গীত উৎসবে সুরালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ সঙ্গীত পরিবেশন করে গতকাল দর্শকদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় সিক্ত হয়। পূর্ব লণ্ডনের ক্রিস্টেল ব্যান্কুয়েটিঙ হলে অনুষ্ঠিত সাড়ে তিন ঘণ্টার এ মনোরম সঙ্গীত উৎসবটি কার্যত রূপ নেয় শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও সংস্কৃতিকর্মীদের এক প্রাণবন্ত মিলনমেলায়। হলভর্তি দর্শক গভীর আগ্রহ নিয়ে উপভোগ করেন বিলেতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা এক ঝাঁক সম্ভাবনাময় শিশু-কিশোরের নিপুণ পারদর্শীতা। তাঁরা অভিভূত হন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে তাঁদের অনেকেই অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে গৌরী চৌধুরী ও সুরালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরলস প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং প্রতিষ্ঠানটির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করে এর অগ্রযাত্রায় সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
প্রতিষ্ঠানটিতে বাংলাদেশ ও ভারতের শিক্ষার্থী থাকায় সমবেত কণ্ঠে দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সন্ধ্যা সাতটায় অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। দর্শকদের অনেকেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ পর্বে অংশগ্রহণ করেন। এরপর গৌরী চৌধুরী স্বাগত ভাষণের মাধ্যমে অভ্যাগত অতিথিদের স্বাগত জানান এবং সুরালয়ের অভিভাবক ও পৃষ্ঠপোষকদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। পরে সুরালয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরেন রঞ্জিতা সেন। এরপর সাবলীল সঞ্চালনায় একে একে পরিবেশিত হয় বহুল জনপ্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলসঙ্গীত, লালনসঙ্গীত, ভাটিয়ালী ও আধুনিক বাংলা গান। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি ছিল সুগ্রন্থিত ও সুপরিচালিত। প্রতিটি পরিবেশনার সময় ‘ ডিজিটাল স্ক্রীণে’ গানের কথা ও শিল্পীর পরিচয় তুলে ধরার বিষয়টি ছিল প্রশংসনীয়।
রবীন্দ্রনাথের ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে’ গানটি নিয়ে মঞ্চে আসেন বিরজা, রেমি ও জায়না। ইয়াথ্রিব, নিথার ও সায়ান পরিবেশন করেন প্রতুল মুখার্জির ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানটি। ‘রাঙা মাটির রঙে চোখ জুড়াল’ গায় শ্রেয়সী ও সায়ন্তিকা। শিশুদের কাছে নজরুলের বহুল জনপ্রিয় ‘ প্রজাপতি প্রজাপতি’ গানটি পরিবেশন করেন শায়না ও দিয়া। রজনা ও রোজ পরিবেশন করে ‘ বাজে বাজে রম্যবীণা বাজে’। অতুল প্রসাদের ‘ কে আবার বাজায় বাঁশি এ ভাঙ্গা কুঞ্জ বনে’ গেয়ে শোনান অদিতি। তারপর এরিকা নিয়ে আসেন শিব কুমার চট্টাপাধ্যায়ের ‘ আর কোথায় নয় মা আর নয় কোনখানে’গানটি। রবীন্দ্রনাথের ‘ ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি’ পরিবেশন করেন বৃষ্টি। এশা গেয়ে শোনান আধুনিক বাংলা গান ‘ দেখেছি রূপ সাগরে’।
নজরুলের ‘ মোমের পুতুল মোমের দেশে মেতে যায়’ পরিবেশন করেন তানিশা। অবন্তিকা গায় শ্যামা সঙ্গীত ‘ মনরে কৃষি কাজ জানো না’ গানটি। দ্বৈতকণ্ঠে ‘ সোনার পালঙ্কের ঘরে’ গানটি গেয়ে শোনান বিন্তি ও বৃন্দা। রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর ‘ভাল আছি ভাল থেকো’ পরিবেশন করেন রূপকথা। এভাবে পর্যায়ক্রমে চলতে থাকে সুরালয়ের তিনটি ‘গ্রুপ’-এর মনমুগ্ধকর সঙ্গীত পরিবেশনা। এ পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করে দর্শকদের মুগ্ধ করেন সিয়ানা, স্নিগ্ধা, দিবজিত, সোয়াম, মোহনা, স্নেহা, শ্রেয়সী, শুভাঙ্গী, অম্বিকা, প্রিয়াংকা, পালমিরা, রঞ্জিতা, জয়শ্রী, সুপ্রিয়া, সোনালি, চন্দ্রানী, আল্পনা, প্রিয়াংকা ও মৃদুল। শেষে গৌরী চৌধুরীর নেতৃত্বে সমবেত কণ্ঠে ‘ ধনধান্য পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সঙ্গীত পর্ব সমাপ্ত হয়।
দর্শকদের প্রতিক্রিয়া পর্বে সুরালয়ের শিল্পীদের নান্দনিক পরিবেশনার প্রশংসা করে বক্তব্য রাখেন সঙ্গীতশিল্পী হিমাংশু গোস্বামী, কবি শামীম আজাদ, লেখক ডক্টর সেলিম জাহান, সংস্কৃতিনুরাগী আব্দুর রকিব, নিউহ্যাম কাউন্সিলের মেয়র রহিমা রহমান, সংস্কৃতিনুরাগী স্বপন নন্দী, টিভি উপস্থাপক ও আবৃত্তিকার উর্মি মাযহার, কবি টি এম আহমেদ কায়সার, সংস্কৃতিনুরাগী হেলাল খান, কাউন্সিলর মজিবুর রহমান জসিম, কবি সারওয়ার-ই আলম প্রমুখ। দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টার অনবদ্য অনুষ্ঠান শেষে রাত সাড়ে দশটায় দর্শকরা বাড়ি ফেরেন একটি স্মরণীয় সঙ্গীত উৎসবের আনন্দ সঙ্গে করে।