সোহাগপুর গণহত্যা দিবস পালিত
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
শেরপুর: শেরপুর জেলা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তরে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেষা নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে আজ গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সকাল ৮টায় শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানেরা মিলাদ ও দোওয়া মাহফিলের আয়োজন করে ।১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের নারকীয় তান্ডবে এ গ্রামে সংঘটিত হয় গণহত্যা। তাদের নৃশংসতা, বর্বরতায় নিভে যায় ১৮৭ জন পুরুষের তাজা প্রাণ।সম্ভ্রমহারা হন ১২ জন গৃহবধূ। নি:শেষ হয়ে যায় শতাধিক পরিবারের স্বপ্ন। তাঁরা সবাই ছিলেন, খেঁটে খাওয়া মানুষ। স্বাধীনতা অর্জনের পর গ্রামটির নাম পাল্টে হয়ে যায় বিধবাপল্লী। জীবন সংগ্রামের কঠিন বাস্তবতা নিয়ে এ গ্রামে ৫৮ জন নারী বিধবা হয়েছিলেন। এখনও বেঁচে আছে ২২ জন স্বামী-সন্তান হারা বিধবা, একজন মৃত্যুবরণ করায় ১২ বীরাঙ্গণার মধ্যে ১১ জন এবং শহীদ পরিবারের অর্ধশতাধিক সদস্য। এখন সরকার আর প্রশাসনের নেক নজরে গ্রামটি মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। শোকের মাঝেও যেন সেখানে লেগেছে সুখের ছোঁয়া।
স্বাধীনতা যুদ্ধে গণহত্যা ও গণহত্যার দায়ে জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসির কারণে শেরপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর বিধবাপল্লীর পরিচিতি এখন বিশ^ময়। যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের ফাঁসির পর সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ’৭১ গ্রামটির নামকরণ করেন ‘সোহাগপুর বীরকন্যাপল্লী’।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলেনা পারভীন জানান, আজ বিকোল জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তারের নেতৃত্বে স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, স্মৃতিচারণ মূলক আলোচনা ও বিধবা নারীদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্মাননা দেওয়া হবে।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় দু’দফায় ১২ বিধবাকে বীরঙ্গণা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বিধবার জন্য নির্মিত হয়েছে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমি পাকা ঘর, টিওবয়েল, ল্যাট্রিন। সরকারিভাবে শহীদদের কবরগুলো নামফলকসহ সংরক্ষণ করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ। বিধবাপল্লীতে ‘বীরকন্যাপল্লী বিদ্যালয়’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন নিয়মিত এলাকাটি পরিদর্শন করছেন এবং উন্নয়নে নানা কর্মকান্ড হাতে নিচ্ছেন। এতেই শোকের মাঝে সেখানে লেগেছে সুখের ছোঁয়া।নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মকছেদুর রহমান লেবু জানান, স্বাধীনতার পর কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সোহাগপুর গ্রামে সাহায্য সহযোগিতা করেছে। এর মধ্যে ছিল ব্র্যাক অন্যতম। তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সেনাবাহিনী তাদের নিজস্ব অর্থ দিয়ে সোহাগপুর গ্রামে বিভিন্ন অবকাঠামো ও অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বি করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী শহীদ পরিবারগুলোকে প্রতি মাসে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে জেলা প্রশাসন বিধবা ভাতা, পঙ্গু ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ তাদেরকে সামাজিক নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছেন।