স্থবির হয়ে যেতে পারে সিলেটের রাজপথ পরিবহন শ্রমিকরা যাচ্ছে কঠোর আন্দোলনে
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে সিলেটে পরিবহন সংগঠনগুলো।উত্থাপন করেছে ৫ দফা দাবি। জানিয়েছে দাবি পূরণ না হলে তারা কঠোর আন্দোলনে যাবে। এবার তারা প্রচন্ড ক্ষুব্দ পুলিশের বিরুদ্ধে। সোমবারও সিলেটে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা পুলিশি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সড়ক অবরোধ করেছে। তবে পুলিশ বলছে, শৃঙ্খলা ফেরাতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি চলমান থাকবে।পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছে, আগামী ৮সেপ্টেম্বর থেকে ৫দফা দাবিতে সিলেটে আন্দোলন শুরু হবে। গত শনিবার এ নিয়ে জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন’র প্রধান কার্যালয়ে পৃথক ৫টি ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের বৈঠক হয়। আর এ বৈঠকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ৫ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে (১) ট্রাফিক পুলিশ কর্তৃক হয়রানি, রেকার বাণিজ্যসহ মাত্রাতিরিক্ত জরিমানা বন্ধ এবং সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও ট্রাফিক ডিসিকে প্রত্যাহার, ট্রাফিক অফিসে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি দিলু মিয়ার সাথে অসম্মানজনক আচরণের প্রতিবাদে লিখিত বিচার চেয়েও সুরাহা না পাওয়ায় সভায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। এসবের প্রতিকার দাবী করা হয়েছে।
২. সিলেট শ্রম আদালতে শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে জনৈক নাজমুল আলম রোমেনকে প্রত্যাহার করতে হবে। শ্রমিক লীগের নাম ব্যবহার করে শ্রম দপ্তরে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোকে হয়রানি থেকে মুক্তি করতে হবে।
৩. সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনার আলোকে সিলেটের সব ক’টি পাথর কোয়ারি খুলে দিতে হবে।
৪. স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সিলেটের সিলেট-সুনামগঞ্জ, সুনামগঞ্জ বাইপাস রোড, কুমারগাঁও এলাকা, জকিগঞ্জ রোড, সিলেট-কামালবাজার রোডসহ সকল সড়ক অবিলম্বে সংস্কার করে যান চলাচলের উপযোগী করতে হবে।
৫. সিলেটে নতুন সিএনজিচালিত অটোরিকশা বিক্রি বন্ধ এবং অবিলম্বে বিক্রিত গাড়িগুলোর রেজিস্ট্রেশন দিতে হবে। বেআইনি গাড়ি, অটোবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা ডাম্পিংকৃত গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে হবে।
দাবি উপস্থাপনের পাশাপাশি বৈঠকে আন্দোলন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, দাবি পূরণ না হলে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন কর্মসূচি পালন এবং ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি হাজী ময়নুল ইসলাম। জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি জাকারিয়া আহমদের পরিচালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি মো. দিলু মিয়া, কার্যকরী সভাপতি আব্দুস সালাম, জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মুহিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলী আকবর রাজন, জেলা ইমা-লেগুনা-হিউম্যান-হলার শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি হাজী রুনু মিয়া মঈন, অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি সুন্দর আলী খান, সাধারণ সম্পাদক আজাদ মিয়া, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল আহমদ, কোষাধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ মামুন, জেলা অটোরিকশা অটোটেম্পো চালক শ্রমিক জোটের সভাপতি আব্দুল আলিম ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো.শাহীনুর রহমানসহ ৫ ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক প্রসঙ্গে জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি ময়নুল হক জানিয়েছেন, আগে যেখানে ট্রাফিক আইনসহ নানা বিষয় অমান্য করা হলে যে জরিমানা করা হতো, এখন সেই জরিমানার পরিমাণ কয়েকগুন বেশি। ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্টরা অনেক ক্ষেত্রে বেআইনিভাবেও শ্রমিকদের উপর শাস্তির খড়গ আরোপ এবং দুর্ব্যবহারের মাধ্যমে শ্রমিকদের অপমানিত করেন। এসব বিষয় নিয়ে আমরা একাধিকবার ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কার্যতঃ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে শ্রমিকদের ৫টি সংগঠনের পক্ষ থেকে সিলেটে এই আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) আশরাফ উল্লাহ তাহের জানিয়েছেন, এসএমপি’র ট্রাফিক শাখা জনবান্ধব একটি বিভাগ। মোটরযান আইন ২০১৮-এর বিধি অনুযায়ী ট্রাফিক বিভাগ তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। যে আইনগুলোতে একটু জরিমানা কম কিংবা মানবিকতা দেখানোর সুযোগ আছে সেগুলো ট্রাফিক বিভাগের সবাই দেখাচ্ছে। এরপরও যদি দুর্ব্যবহারের কোনো অভিযোগ থাকে সেটি লিখিতভাবে জানালে তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যক্তিগতভাবে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
ট্রাফিক পুলিশের হয়রানির প্রতিবাদে নগরিতে পরিবহণ শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ
ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ এনে সোমবার সকালে নগরির উপশহর পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে পরিবহন শ্রমিকরা। এতে করে ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরিবহন শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, ট্রাফিক পুলিশ উপশহর পয়েন্টে কাগজপত্র তল্লাশির নামে হয়রানি করছে। এতে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে প্রায় ১ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে ঊর্ধ্বতনদের হস্তক্ষেপে তারা অবরোধ তুলে নেন।জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি দিলু মিয়া জানিয়েছেন, সকালে কাঁচাবাজারে মালামাল আনলোড করে কয়েকটি ট্রাক বেরিয়ে যাচ্ছিল। এরমধ্যে ৩/৪টি গাড়ি আটকে মামলা দেয় পুলিশ। এতে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ প্রশাসন ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের শান্ত করে। তাদের আশ্বাসে সাড়ে ১১টার দিকে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। তিনি দাবি করেন, ট্রাফিক পুলিশের রেকার বাণিজ্যের কারণে চালকরা অতীষ্ঠ। সঙ্গে স্লিপ বাণিজ্যও রয়েছে। এতে করে চালকরা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামতেও ভয় পাচ্ছেন।