স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত আজিজুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ইউ কে বিডি টিভির ভার্চুয়াল স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত
বদরুল হক মনসুর
সত্যবাণী
কাড়িফ ইউকে: বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৭১’এর বীর মুক্তিযোদ্ধা, বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ স্বাধীনতা পদকে ভূষিত বাংলাদেশের সংবিধানে স্বাক্ষরকারী সাবেক গণ পরিষদ সদস্য মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত আদর্শিক রাজনীতির রাজকুমার, মৌলভীবাজার জেলা বাসীর হৃদয়ের বাতিঘর,আজিজুর রহমানের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে গত সোমবার স্মৃতির মনিকোটায় আজিজুর রহমান, শীরনামে ইউ কে বিডি টিভির ভার্চুয়ালি আন্তজার্তিক স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়েছে।
ইউকে বিডি টিভির চেয়ারম্যান. মৌলভীবাজার জেলার সাবেক ছাত্রনেতা ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মোহাম্মদ মকিস মনসুর এর সভাপতিত্বে এবং ইউকে বিডি টিভির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার খায়রুল আলম লিংকন এর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত স্মৃতিচারণ সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে জাতীয় সংসদের ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্হায়ী কমিটির সদস্য, মৌলভীবাজার -০৩ আসনের সাংসদ মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ এমপি,শোকার্ত হৃদয়ের শ্রদ্ধা,জানিয়ে স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সভাপতি ৭১ এর বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ সুলতান মাহমুদ শরীফ, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিসবাহুুর রহমান,
যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সাবেক নেতা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সহ
সভাপতি সাবেক কাউন্সিলার এম এ রহিম সি আই পি, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল আহাদ চৌধুরী, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সৈয়দ নওশের আলী খোকন, সুইডেন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ৭১’এর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুহিত চৌধূরী টুটু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা উপ কমিটির সদস্য “স্কুয়াড্রন লিডার এম সাদরুল” আহমেদ খান পলিট, মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা নাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ৭১ এর বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল আহমদ, ও মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ছাত্রনেতা মোহাম্মদ ফয়ছল মনসুর, সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
প্রধান অতিথির মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ এমপি,বলেন মৌলভীবাজার জেলার অবিভাবক মাটি ও মানুষের নেতা, হৃদয়ের স্পন্দন, সমাজ, দেশ, ও রাষ্ট্রের গৌরব ও গবের প্রতীক প্রবীণ রাজনীতিবিদ “আজিজুর রহমান আজ থেকে এক বছর আগে চলে গিয়েছিলেন না ফেরার দেশে, ২০২০ সালের ১৮ ই আগষ্ট তথা আজকের এই দিনে নেতার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে দেশে বিদেশে বসবাসকারী সকল জেলাবাসীর পক্ষ থেকে জানাই শোকার্ত হৃদয়ের শ্রদ্ধা, মহাণ আল্লাহু রাব্বুল আলামিন যেনো এই ভালো মানুষটিকে জান্নতবাসী করেন এই দোয়া করার জন্য তিনি সবার প্রতি বিনীতভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ, বলেন আজিজ ভাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের জন্য নিষ্টা ও নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের আদর্শ ও জীবনাদর্শ অনুসরণ করে নিজদের জীবন সাজাতে হবে। জীবনে কখনোই আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না,
মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিসবাহুুর রহমান, বলেন আজিজ ভাই আমাদের সকলের নেতা ছিলেন, নিঃসাথ ভাবে আজীবন মানুষের জন্য মানবতার সেবায় কাজ করে গেছেন, তিনি শুধু মৌলভীবাজার জেলা নয় কেন্দ্রীয় পযায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে ইউকে বিডি টিভির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মকিস মনসুর বলেন স্বাধীনতা পদকে ভূষিত আদর্শিক রাজনীতির রাজকুমার মৌলভীবাজার জেলাবসীর শ্রদ্ধা আর ভরসার আশ্রয়স্থল ছিলেন, মৌলভীবাজার জেলা থেকে খসে পড়া এক উজ্জ্বল নক্ষত্র সবার শ্রদ্ধেয় আমার আত্মার আত্নীয়, কিংবদন্তী নেতা আজিজুর রহমানকে মহাণ আল্লাহু রাব্বুল আলামিন র জান্নাতবাসী করেন এই দোয়া করার জন্য সবার প্রতি বিনীতভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন।
এখানে উল্লেখ্য যে বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ আজিজুর রহমান মৌলভীবাজার জেলা সদরের ৭নং চাঁদনীঘাট ইউনিয়ন এর গুজারাই গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৪৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম আব্দুল সত্তার, মাতা মরহুমা কাঞ্চন বিবি। তিনি শ্রীনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন।মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক ও মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকা কলেজে ভর্তি হলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে হবিগঞ্জের বিখ্যাত বৃন্দাবন কলেজ হতে বিকম ডিগ্রী অর্জন করেন।ছাত্রজীবন হতেই সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত আজিজুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর সরাসরি নির্দেশনায় ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কারাবরণ করেন তিনি। এরপর একই বছরের ৭ এপ্রিল মুক্তিবাহিনী কর্তৃক জেল ভেঙ্গে সিলেট কারাগার থেকে তাঁকে মুক্ত করা হয়।
২রা মে পুনরায় পাকবাহিনী মৌলভীবাজার শহরে প্রবেশ করে বর্বরোচিত দমন পীড়ন চালানোর পর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে আত্মনিয়োগ করেন তিনি।
এক পর্যায়ে মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আহুত পশ্চিমবঙ্গের বাগডুগায় (দার্জিলিং) প্রথম পার্লামেন্ট অধিবেশনে যোগদান করেন আজিজুর রহমান।
প্রবাসী সরকার কর্তৃক আয়োজিত সামরিক প্রশিক্ষণে সিলেট বিভাগের একমাত্র প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হিসেবে তিনি সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং ৪ নম্বর সেক্টরের রাজনৈতিক কো-অর্ডিনেটর ও কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং গণপরিষদ সদস্য হিসেবে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর শমসেরনগর, ৬ ডিসেম্বর রাজনগর এবং ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মৌলভীবাজারকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন আজিজুর রহমান।গণপরিষদের এই সদস্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য রচিত সংবিধানের একজন স্বাক্ষরকারী। তিনি ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় সংবিধানের একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনীতে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মৌলভীবাজার জেলা শাখার দুই বারের সাধারণ সম্পাদক ও দুই বার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। sবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পরবর্তীতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
অকৃতদার এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মৌলভীবাজার মহিলা কলেজ (বর্তমানে সরকারী) ও সৈয়দ শাহ মোস্তফা কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি মৌলভীবাজার জেলার অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠক।s সামাজিক কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, মৌলভীবাজার শাখার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রজ্ঞাপনমূলে মৌলভীবাজারে প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন আজিজুর রহমান। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই দায়িত্ব পালন করে গেছেন বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ।