স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক ও মানবিকতার মূল্যবোধের আদর্শে গড়ে তোলার আহ্বান
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডনঃ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক ও মানবিকতার মূল্যবোধের আদর্শে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস ২০২৪ যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে উদযাপন করেছে।এ উপলক্ষে রোববার ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের প্রাণকেন্দ্র পূর্ব লন্ডনে আয়োজিত “বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে, আনব হাসি সবার ঘরে” শীর্ষক এক বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম স্বাগত বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশকে জানতে হলে বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। তাঁর মহান নীতি ও আদর্শে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণীত ও গড়ে তুলতে হবে।” হাইকমিশনার এজন্য ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মূল্যবোধে এবং বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে উজ্জীবিত করে গড়ে তুলতে প্রবাসি বাংলাদেশি মা-বাবাদের প্রতি আহ্বান জানান।
শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম মমতার কথা উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, “বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ অনুসরণে শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে এবং আজকের শিশুদের ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং বিশেষ বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন।এপ্রেক্ষিতে হাইকমিশনার ব্রিটিশ এবং নতুন প্রজন্মের ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর জীবন, আদর্শ ও মুল্যবোধ তুলে ধরার জন্য বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন কর্তৃক বিগত পাঁচ বছরে গৃহীত বিশেষ বিশেষ উদ্যোগ, পদক্ষেপ ও কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “কমনওয়েলথের ৫৪টি দেশে জাতির পিতার মূল্যবোধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলার পাশাপাশি জলবায়ু-বান্ধব প্রযুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগ উৎসাহিত করতে এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে বিশেষভাবে তুলে ধরতে ‘কমনওয়েলথ-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ এবং বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের বন্ধুত্ব আরও গভীর ও সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য ‘বঙ্গবন্ধু-এডওয়ার্ড হিথ ফ্রেন্ডশিপ অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘বঙ্গবন্ধু-থমাস উইলিয়াম কেসি ফ্রেন্ডশিপ অ্যাওয়ার্ড’ প্রবর্তন করা হয়েছে । এছাড়া, বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখার জন্য লন্ডনের গ্ল্যাডস্টোন পার্কে বাংলাদেশ হাই কমিশনের উদ্যোগে ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এবং লন্ডন বা’রা অব ব্রেন্টের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু সেন্টেনারি পিস গ্রোভ’। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের আইরিশ, স্কটিশ ও ওয়েলস ভাষায় অনুবাদও বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডনের উদ্যোগে প্রকাশ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ, নির্বাচন কমিশনের সচিব মোঃ জাহাংগীর আলম ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বাংলাদেশ -এর সাধারণ সম্পাদক ডা. কামরুল হাসান। আরো বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান ও বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এদিনের বিশেষ আকর্ষণ ছিলো বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ বিষয়ে শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা যাতে অনেক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি-শিশু-কিশোর বিপুল উৎসাহে অংশগ্রহণ করে। হাইকমিশনার অতিথিদের নিয়ে শিশু-কিশোরদের সনদ প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে সম্মিলিত কবিতা আবৃতি করেন বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী ঊর্মি মাজহার, শতরূপা চৌধুরী ও দেওয়ান মাহমুদ। ব্রিটিশ-বাংলাদেশী শিশু-কিশোররা বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে একটি গান এবং পবিত্র রমজানে ইফতারের পূর্বে হামদ ও নাথ পরিবেশন করে। ইফতারের পর হাইকমিশনার অতিথি ও শিশু-কিশোরদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ১০৪তম জন্মদিন উপলক্ষে একটি কেক কাটেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।এর আগে হাইকমিশনার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিয়ে মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচী শুরু করেন। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া বাণী পাঠ করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সকল শহীদদের জন্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের শান্তি ও অব্যাহত অগ্রগতির জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়।