হবিগঞ্জে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে চা শ্রমিকদের কর্মবিরতি অচলাবস্থার হুঁশিয়ারি
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির ডাকে চা শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করাসহ বিভিন্ন দাবিতে হবিগঞ্জের ২৪টি বাগানে ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ২ ঘন্টা করে কর্মবিরতি পালন করছেন চা শ্রমিকরা। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে মঙ্গলবার থেকে এ কর্মসুচি পালন শুরু করেন সারাদেশের ২৪১টি চা বাগানের শ্রমিকরা। চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, ৩ দিনের মধ্যে তাদের দাবি মানা না হলে বাগানসমুহে অচলাবস্থা সৃষ্টি ও রাস্তায় নামার হুমকি দেন।
চান্দপুর চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সাধন সাওতাল বলেন, ‘বাংলাদেশে চা শ্রমিকদের একটা বিশাল অংশ রয়েছে। এ দেশের ভোটার হয়েও তারা অবহেলিত। মৌলিক অধিকারও তাদের ভাগ্যে জুটে না। এছাড়া রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ১২০ টাকা মজুরি পায়। এভাবে আর আমরা চলতে পারছি না। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।’
বাংলাদেশ চা কন্যা নারী সংগঠনের সভাপতি খায়রুন আক্তার বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিটি দ্রব্যের মুল্য হু হু করে বাড়ছে। কিন্তু সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বাগানে কাজ করে ১২০ টাকা মজুরি পায়। কিন্তু এই টাকা দিয়ে এখন ১ লিটার তেলও কিনতে পারি না। ২ কেজি সবজি কিনতেই পুরো টাকা চলে যায়। তাই শ্রমিকদের বাচাঁনোর স্বার্থে মজুরি ৩০০ টাকা করতে হবে।বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘মালিক-শ্রমিকের মধ্যে চুক্তির ১৯ মাস অতিবাহিত হলেও তারা শ্রমিকদের বেতন বাড়ায়নি। এখন বলছে তারা ১৪ টাকা বেতন বাড়াবে। তাই আমরা আজকে থেকে এই কর্মসুচি পালন করছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন ২ ঘন্টা করে কর্মবিরতি পালন করছি। শুক্রবার পর্যন্ত আমাদের এই কর্মসুচি চলবে। এরমধ্যে দাবি মানা না হলে আমরা বাগান সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেব। প্রয়োজনে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হব।’
চুনারুঘাটের ২৪ চা বাগানে কর্মবিরতি
চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি দীর্ঘদিনের। প্রতি বছর মজুরি বাড়ানোর কথা থাকলেও গত ৩ বছর ধরে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না। এ অবস্থায় বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে চা শ্রমিকের মজুরি ৩০০ টাকায় উন্নীত করার দাবিতে ৯ আগস্ট মঙ্গলবার থেকে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের ২৪ চা বাগানে ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন শুরু করেছেন চা শ্রমিকরা। পরবর্তী ৩ দিনের মধ্যে তাদের মজুরি বাড়ানোর বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না আসলে আগামী ১২ আগস্ট শুক্রবার থেকে তারা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন।৮ আগস্ট সোমবার উপজেলার লস্করপুর ভ্যালির লস্করপুর চা বাগানে ২৪টি চা বাগান শ্রমিকদের এক সমাবেশে এমন ঘোষণা দিয়েছেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল। পরে ঘোষিত কর্মসূচি সফলে পঞ্চায়েতের সঙ্গেও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন, লস্করপুর ভ্যালির সভাপতি অনিরুদ্ধ বাকচির সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য নৃপেন পাল। সভায় ২৪টি চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি, ভ্যালি নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করে ন্যূনতম চা শ্রমিকের হাজিরা ১২০ থেকে ৩০০ টাকায় উন্নীত করার দাবি অনেক দিনের। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সাথে টালবাহানা করছে।