হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি, সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটপাঠ
শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জ থেকেঃ সরকার প্রতিবছর হাওর ফসল রক্ষা বাধেঁর জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপ্রয়োজনীয় জায়গাতে বাধঁ নির্মাণ ও কিছু দূনীতিবাজ পিআইসির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের কারণে বাধঁ নির্মাণ নিয়ে সময় কালক্ষেপন করে সরকারের লাখ লাখ টাকা লুটপাঠের মহোৎসব চলছে। বাধঁ নির্মাণ কাজে সরকারের নির্ধারিত দুটি সময় সীমা পেরিয়ে গেলে এখনো ১৩টি বাধের মধ্যে দুইটিতে এখনো শুরুই হয়নি এবং বাকি ১১টিতে শতকরা ৩০/৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করতে পারলে ও বাকি ৬০ ভাগ বাধেঁর কাজ কবে সম্পন্ন হবে তা কারো জানা নেই এমন অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের। আর এদের কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে সহযোগিতা করছেন হাতেগোনা এই উপজেলায় দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী (এসও) মো. মাহবুব আলম।
সরেজমিনে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের কাউয়াজুরী হাওরে ১৩টি বাধঁ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেল কয়েকটি সাইনবোর্ড নেই,কিছু বাধেঁ এস্কোভেটার দিয়ে বাধেঁর পাশ থেকে মাটি উত্তোলন চলছে এবং তিনটি বাধেঁর কাজ এখনো শুরুই হয়নি। কবে শুরু হবে এবং কবে শেষ হবে তা আজো অজানা রয়ে গেল। এছাড়াও এই ইউনিয়নের খাই হাওরে-৬টি,সাংহাই হাওরে-৬টি সহ মোট ২৭টি বাধেঁ পিআইসি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে।সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ২০২০-২১ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাবিটার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ অবকাঠামো মেরামত ও সংস্কার কাজের গত ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্য সুনামগঞ্জের সকল হাওরের বাধেঁর কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ পিআইসির সদস্যরা বাধেঁর কাজ সময়মতো সম্পন্ন করতে না পারায় পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড তা বাড়িয়ে ৭মার্চ পর্যন্ত নির্ধারন করে দিলে ও কাউয়াজুরি হাওরে মোট ১৫টি বাধেঁর মধ্যে ২/৩টি বাধেঁর কাজ শেষ হলেও ১২টি বাধেঁ এখনো ৩০/৪০ ভাগের উপরে কাজ হয়নি। এই পিআইসির সদস্যরা কবে নাগাদ হাওর বাধেঁর কাজ শেষ করবেন স্থানীয় কৃষকরা তাও জানেন না। ফলে তাদের কষ্টার্জিত সোনালী ফসল নিয়ে উৎবেগ আর উৎকণ্ঠার যেন শেষ নেই। কাউয়াজুরী হাওরে ৩২ ,৩৩ ও ৩৪ নং বাধেঁর পিআইসি কমিটির সদস্যরা এখনো বাধঁ নির্মাণের কাজ শুরই করেননি।
অন্যদিকে ৫৭,৫৮,৫৯,৬০ ও ৬২ নং বাধেঁ ৩০/৪০ ভাগ কাজ শেষ হলেও বাকি ৬০ ভাগ কাজ এখনো বাকি রয়েছে। এই বাধঁগুলোর কাজ কখন শেষ হবে নাকি ঐ সমস্ত বাধেঁর পিআইসির সভাপতি ও সেক্রেটারী এসওকে ম্যানেজ করে লাখ লাখ টাকা লোপাঠের পায়ঁতারায় লিপ্ত রয়েছেন। ফলে ঐ সমস্ত বাধেঁর পাশের জমিগুলো অরক্ষিত থেকেই যায়। আর মাত্র কয়েকদিন পর একদিকে ধান কাটা শুরু হবে অন্যদিকে বৃষ্টিপাত শুরু হলে এই হাওরের কৃষকদের জমিগুলোর ধান কৃষকরা কেটে গোলায় উঠাতে পারবে কিনা তা নিয়ে যেন কৃষকদের শংঙ্কার শেষ নেই। এই ইউনিয়নের ৩১নং পিআইসির সভাপতি মৌখলা গ্রামের অর্জুন দেবনাথ ও সাধারন সম্পাদক ঠাকুরভোগ গ্রামের আলমগীর মিয়া ঠাকুরভোগের সাপের কোণার হতে জিরো পয়েন্ট থেকে আজামবাড়ি পর্যন্ত এক কিলো: কাজের জন্য সরকার ২৩ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫১টাকা সরকার বরাদ্দ দিলে ও ঐ বাধেঁ শতকরা ৪০ ভাগ কাজ শেষ না করেও তারা ইতিমধ্যে দুইটি বিলে টাকা উত্তোলন করেছেন । কিন্তু ঐ বাধেঁ এখনো ৬০ ভাগ কাজ বাকি থাকায় ঐ বাধগুলো এখনো রয়েছে অরক্ষিত।
এদিকে ৩২নং পিআইসির সভাপতি ঠাকুরভোগ গ্রামের ওসমান হারুণ ও সাধারন সম্পাদক কর্তৃক ৮৩০ মিটার ডুবন্ত বাধের জন্য ২০ লাখ ৭৫ হাজার ১৫৬.২২ টাকা বরাদ্দ,৩৩নং পিআইসির সভাপতি উমেদ নগর গ্রামের মোছানুর রহমানের বাধেঁ ১১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা দিলেও ঐ বাধেঁ কোন বিলবোর্ড লাগানো হয়নি এবং বাধেঁর কাজ ৪০ভাগ সম্পন্ন,৩৪নং পিআইসি কমিটির সভাপতি কাউয়াজুরী গ্রামের রফিকুল ইসলামের বাধঁ নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৬ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ৩৫নং পিআইসির সভাপতি ঠাকুরভোগ গ্রামের এমদাদুল হকের বরাদ্দ ২২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।কিছু কিছু বাধেঁ এস্কোভেটার দিয়ে বাধেঁর গোড়ার পাশ থেকে মাটি উত্তোলন করে বাধঁ নির্মাণ কাজ দায়সারাভাবে চলমান রেখেছেন। কিন্তু নীতিমালা অনুযায়ী গনশুনানীর মাধ্যমে প্রকৃত কৃষকদের পিআইসি কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করার কথা থাকলেও ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলামের মাধ্যমে স্বজনপ্রীতির করে তাদের পছন্দের লোকজনকে দিয়ে পিআইসি কমিটির সদস্য করা হয়েছে এমন অভিযোগ স্থানীয় অনেক কৃষকের। এছাড়া এই ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্যর অধীনে ১০টি পিআইসি কমিটি করে দেয়া হয়েছে এবং তার নিয়ন্ত্রক ঐ ইউপি সদস্য।
এ ব্যাপারে পশ্চিম বীরগাওঁ ইউপি চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,বাধেঁর কাজের তদারকির জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছু কিছু বাঁধ অনেক দূরে থাকায় আমি বাধঁ পরিদর্শন করতে পারিনি। শুনেছি ৩২.৩৩ ও ৩৪ নং বাধেঁর কাজ এখনো শুরুই হয়নি। যে সমস্ত বাধেঁর কাজ শুরু হয়েছিল সেগুলোর অনেক কাজ এখনো বাকি রয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁেধর কাজ শেষ করা হবে বলেও তিনি জানান।এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ অঞ্চলে হাওর বাধেঁর কাজে নিয়োজিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলমের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।এ ব্যাপার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেবুন নাহার শাম্মী জানান,কাজ শুরু হয়নি তা ঠিক না তবে যে সমস্ত বাধেঁর কাজ বাকি রয়েছে সেগুলো নিয়ে যারা সময় কালক্ষেপন করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান,যে সমস্ত বাধেঁর কাজ এখনো শুরু হয়নি কিংবা যেগুলো বাকি আছে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ না করলে ঐ সমস্ত পিআইসিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।