হাওরের হয়নি ফসলরক্ষা বাঁধঃ তাহিরপুরে কৃষকরা শঙ্কায়
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি ফসলরক্ষা বাঁধটিতে এক টুকরি মাটিও এখন পর্যন্ত পড়েনি। অথচ বাঁধনির্মাণ কাজের শেষ তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। হাতে আছে মাত্র ৮ দিন। নির্ধারিত সময়ে বাঁধে মাটি না পড়ায় হাওরপাড়ের কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।তাহিরপুর থেকে সংবাদদাতা জানান, চলতি বছর তাহিরপুর উপজেলায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ১১২টি প্রকল্পে ২০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকাভুক্ত না হওয়ায় হাওর পাড়ের তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ৮২টি গ্রামের কৃষকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। এতে ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমির ধান পানির নীচে তলিয়ে যাবে বলে আশংকা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
এ বাঁধটি না হলে গনিয়াকুরি, এরালিয়াকুনা, নান্দিয়া, রাঙামাটিয়া, ফল্লিয়ার বিল, সামসাগর, রূপাভূই, লামারবিল, সোনাডুবি, ইকরছরি, লুঙ্গাতুঙ্গা, শালদিগা, হানিয়া কলমা, মুক্তারখলা হাওরসহ বিভিন্ন হাওরের কাঁচা ধান নদীতে আগাম পানি আসা মাত্রই তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একে এম এনামুল হক শামীম টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি বাঁধটি পরিদর্শনে আসেন। তখন হাজারো কৃষকের বিক্ষোভ ও দাবির মুখে তিনি কৃষকদের আশ্বাস প্রদান করেছিলেন জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবেন। তিনি সেদিন বলেছিলেন, ‘হাওরের কৃষকদের ফসল রক্ষার স্বার্থে সরকার সবকিছুই করবে। সরকার কৃষকদের মুখে হাসি দেখতে চায়। কৃষকরা যাতে শতভাগ জমি চাষাবাদ করতে পারে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে সরকার। সেটা মাথায় রেখে আমরা কাজ করবো।পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে উপমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের পরিকল্পনার কারণে যাতে কৃষকদের ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নতুন করে টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ে ৩ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ উপমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরও নজরখালি বাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় হাওরের কৃষকদের মধ্যে এখন হতাশা দেখা দিয়েছে।মধ্যনগর উপজেলার দক্ষিণ বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের রংচি গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, নজরখালি বাঁধ নির্মাণ না হলে আমাদের বংশীকুন্ডা উত্তর ও দক্ষিণ এ দু’টি ইউনিয়নের বোরো ধান আগাম বন্যার পানিতে তলিয়ে যাবে। অথচ অনেক বছর ধরে এ বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মাণ করে আসছিল। এ বছর সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন টাঙ্গুয়ার হাওরটিকে জলাভূমির সনদ দিয়ে বাঁধের কাজ করাচ্ছেন না।
শ্রীপুর (উত্তর) ইউপি সদস্য সাজিনুর মিয়া বলেন, প্রশাসন জনগণের জন্য কিন্তু নজরখালি বাঁধটি নির্মাণে জেলা প্রশাসন কেন বাঁধা দিচ্ছেন তা তারা বুঝতে পারছেন না। যদি বাঁধ দেয়া না হয় তাহলে তারা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।দক্ষিণ বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, নজরখালিসহ গোলাবাড়ি থেকে মন্দিয়াতা পর্যন্ত আগের বাঁধটি হয়ে গেলে আমাদের আর ভিতরের বাঁধগুলো দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না।সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, বর্তমান সরকার কৃষকবান্ধব। কিন্তু সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন কেন কৃষকদের স্বার্থপরিপন্থী কাজ করছেন বিষয়টি তার বোধগম্য নয়।তাহিরপুরের ইউএনও সুপ্রভাত চাকমা বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে কোন সিদ্ধান্ত না আসায় বাঁধ নির্মাণ কাজ আপাতত করা সম্ভব হচ্ছে না।