হামিদ মোহাম্মদের গ্রন্থ ‘কবিতাসমগ্র’ ও উপন্যাস ‘পঙ্খিরাজ’ নিয়ে লন্ডনে আলোচনা অনুষ্ঠান

বিশেষ প্রতিবেদন
সত্যবাণী

লন্ডন, ২৫ জুলাই: কবিতা প্লাটফরম কবিকণ্ঠের উদ্যোগে কবি ও লেখক হামিদ মোহাম্মদের দুটি গ্রন্থ ‘কবিতাসমগ্র’ ও উপন্যাস ‘পঙ্খিরাজ’ নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক আলোচনা অনুষ্ঠান। গত ২৪ জুলাই বিকেলে পূর্ব লন্ডনের  লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব কার্যালয়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমদ, নাট্যকার, উপস্থাপক বুলবুল হাসান, কবি সারওয়ার ই আলম, কবি ময়নূর রহমান বাবুল, কবি শাহ শামীম আহমদ, কবি শামীম শাহান, লেখক ও অনুবাদক ফেরদৌস কবির টিপু ও আহবাব মিয়া। হামিদ মোহাম্মদের কবিতাসমগ্র থেকে কবিতা পাঠ করেন মানবাধিকার নেত্রী অজন্তা দেব রায়, সাংস্কৃতিক নেত্রী ইয়াসমীন মাহমুদ পলিন, আবৃত্তিকার মানস চৌধুরী, বাচিকশিল্পী শহিদুল ইসলাম সাগর ও বাচিকশিল্পী সালাউদ্দিন শাহিন। সব শেষে আলোচনায় অংশ নেন কবি হামিদ মোহাম্মদ। এতে আলোচনায় উঠে আসা নানা প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলমানাই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এম, এ রকিব, কবি সৈয়দ হিলাল সাইফ, লেখক আনোয়ার শাহজাহান, সংস্কৃতিকর্মী নাসিমা আলী, সংবাদকর্মী সুভাষ দে ও বিশ্বজিত রায় অপু।

অনুষ্ঠানে হামিদ মোহাম্মদের কবিতাকে সুরারোপ করে পরিবেশন করেন সঙ্গীতশিল্পী সঞ্জয় দে। এছাড়াও অনুষ্ঠানে গান গেয়ে শোনান কণ্ঠশিল্পী রীপা রকিব। সমগ্র অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় ছিলেন কবি টি এম আহমেদ কায়সার। সভাপতিত্ব করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ এনামুল ইসলাম।

উল্লেখ্য, এটি ছিল কোভিড—১৯ এর প্রকোপের দীর্ঘ পৌনে দু’বছর পর লন্ডনে আয়োজিত কোন সাহিত্যানুষ্ঠান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, হামিদ মোহাম্মদের কবিতা পড়ে মনে হয়েছে তার লেখনির সৃষ্টি ক্ষমতা অসাধারণ, বহুমাত্রিক বিষয় নিয়ে কবিতা লেখা কম কথা নয়। প্রেম, দেশপ্রেম, রাজনীতি ও সমাজের অসংগতি,প্রাপ্তি—অপ্রাপ্তি নিয়ে প্রায় চার শতাধিক কবিতার আকর গ্রন্থ‘কবিতাসমগ্র’ একটি বিশাল কাজ। ১৯৭৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় পয়তাল্লিশ বছরের নানা স্পর্শ তাকে আলোড়িত করেছে। এই সংগ্রহের প্রতিটি কবিতা পাঠককে টেনে ধরে, কোন কোন কবিতার বিষয়বস্তু ও স্বপ্ন এবং কল্পনার বিশালতা এমনই যে পাঠককে তার চমকেও দেয়। এছাড়া কবিতার ভাষা সহজ, বুঝতে বেগ পেতে হয় না।
ঊক্তারা বলেন, ‘পঙ্খিরাজ’ উপন্যাস যদিও সিলেট অঞ্চলের একটি নির্দিষ্ট ভূভাগের জীবন বৈচিত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কাহিনি, কিন্তু বড় অর্থে বাংলাদেশটাই কাহিনির মূল পটভূমি। বাউল ঘরানায় কাহিনি আবর্তিত। মৌলবাদী উত্থান এবং গ্রাম্য কলুষ রাজনীতিকে উপজীব্য করে কাহিনির গতিপ্রবাহ। তবে, গ্রন্থের মূলে রয়েছে স্বাধীনতা এবং বিশ্বাসের প্রতি অবিচল এক জগতের অপ্রতিরোধ্য বাসনা।
উল্লেখ্য, হামিদ মোহাম্মদের ‘কবিতাসমগ্র’ সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ঢাকার অন্যতম প্রকাশনা সংস্থা ‘অনার্য পাবলিশার্স।’ এবং ‘পঙ্খিরাজ’ প্রকাশ করেছে সিলেটের সনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা‘ নাগরী’।
ব্ক্তারা লেখকের অনলাইনে প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে ‘জাহাঙ্গীরর ডর’ ও ‘পাথরকন্যা’রও প্রশংসা করেন।
হামিদ মোহাম্মদ একজন লেখক হলেও মূলত সাংস্কৃতিক সংগঠক। সিলেটে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে ১৯৮৩ সালে শিকড় সংস্কৃতি চক্র প্রতিষ্ঠা, খেলাঘর, উদীচীর কমীর্ এবং শিল্পকলা একাডেমীর ১৯৮৩—৮৭ মেয়াদের কার্যকরি সদস্য এবং ১৯৮৮ সালে লন্ডনে উদীচী প্রতিষ্ঠার প্রধান কর্ণধার হামিদ মোহাম্মদ। ১৯৮৯ সালে লন্ডনে উদীচীর উদ্যোগে ও জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনীর সহযোগিতায় সপ্তাহব্যাপী সর্ববৃহৎ বাংলাদেশ বইমেলার অন্যতম আয়োজক ছিলেন হামিদ মোহাম্মদ। সাপ্তাহিক যুগভেরী অধুনা দৈনিক যুগভেরীর ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত স্টাফ রিপোর্টার,সাহিত্য সম্পাদক এবং ১৯৭৬ সালে সিলেট প্রেসক্লাবের সদস্যপদ লাভ ছাড়াও ১৯৭৮ থেকে ’৮২ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে সিলেট প্রেসক্লাবের কার্যকরি সদস্য।
২০১০ সাল থেকে লন্ডনে বসবাসসূত্রে সাপ্তাহিক পত্রিকায় কন্টিবিউটার, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব সদস্য এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কমীর্ হিসেবে উদীচী যুক্তরাজ্য সংসদ—এর উপদেষ্টা, প্রগতিশীল সাহিত্যান্দোলনের অন্যতম প্লাটফরম ‘কবিকণ্ঠ’এর প্রতিষ্ঠাতা কর্ণধার ছাড়াও যেকোনো প্রতিবাদী আন্দোলনে সোচ্চার কণ্ঠ হামিদ মোহাম্মদ। ২০১৮ সালে লন্ডনে ‘ধর্ষণ বিরোধী প্রতিবাদের কবিতাপাঠ’ এবং ‘বর্ণবাদ, সাম্পদায়িকতা ও মৌলবাদ বিরোধী’ কবিতাপাঠ এবং ‘কবি মুজিব ইরম—এর কবিতা ও সাহিত্য’ নিয়ে ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন হামিদ মোহাম্মদ।
সাংস্কৃতিক আন্দোলন—সংগ্রামে যুক্ত থাকা হামিদ মোহাম্মদ নিয়মিত কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ—নিবন্ধ লিখেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে কবিতাগ্রন্থ ‘স্বপ্নের লাল ঘুড়ি’ ‘আমার মৃত্যুর পর কোনো শোকসভা হবে না’ ‘উড়াল পাখি’ ‘তোমার অনিন্দ্য নাম’ এবং গল্পগ্রন্থ ‘হৃদয়ে রঙধনু’ ‘লাল গোলাপ’ উপন্যাস ‘কালোদানব’ ‘স্কোয়াটিং’ মাতাল বাঁশি ও ‘পঙ্খিরাজ’ ‘পাথরকন্যা,’ ‘জাহাঙ্গীরর ডর’। মননশীল গ্রন্থ ‘শিকড়ের দিনগুলি ও অন্যান্য’, ‘নন্দিত ভুবনে’ ‘বিলেতের সাহিত্য’, রূপালি সোনালি মাটি’ এবং বিশেষ গ্রন্থ ‘প্রেমের কবিতা’ ‘কবিতা সমগ্র—১’।

You might also like