১০ বছর পর মায়ের কোলে সাগর
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে দীর্ঘ ১০ বছর পর শিশু সন্তানকে ফিরে পেলেন মা-বাবা। আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে কেঁদে ফেলেন তারা। গত ১১ জুলাই মা-বাবার কোলে ফিরে এসেছে হারিয়ে যাওয়া মা কল্পনা বেগমের একমাত্র সন্তান।জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জের কালীবাড়ি গ্রামের ফারুক মিয়া ও কল্পনা বেগমের শিশুসন্তান সাগর। প্রায় ১০ বছর পূর্বে ২০০৩ সালের ১৬ মার্চ দুপুরে খেলার জন্য ঘর থেকে বের হলে পরে নিখোঁজ হয়ে যায় সে। অনেক খোঁজ নিয়ে না পেয়ে কল্পনা বেগম ২৫ মার্চ কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নং-৯৬৮) করেন।এদিকে, স্থানীয় দয়ারবাজারে সাগরকে কান্নারত অবস্থায় পান সিলেট সদর উপজেলার ছালিয়া গ্রামের বাবুল আহমদ নামক এক যুবক। মা-বাবার নাম-ঠিকানা বলতে না পারা ওই শিশুকে সাথে করে নিয়ে যান বাড়িতে। যুবকের মা ছালিয়া গ্রামে মৃত আব্দুর রউফের বিধবা রেহেনা বেগম তাকে লালন পালন করে বড় করতে থাকেন। রেহেনা বেগমের বাড়িতে ৬/৭ বছর যাওয়ার পর রেহেনার ছোট ছেলে সাগরের সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে এবং বলে তুমি আমাদের ভাই না। তুমি আমাদের পালক ভাই। পরে সে রেহেনার বেগমের কাছে জানতে চায় ঘটনা সত্য কিনা। রেহেনা বেগম ঘটনা খুলে বলেন। এরপর থেকে আসল মা বাবাকে খুজতে থাকে সাগর। ১ বছর আগে সাগর রেহেনা বেগমের ছেলের সাথে রাগ করে সিলেট নগরীর আম্বরখানাস্থ লোহারপাড়ার জেসমিন বেগমের বাড়িতে আশ্রয় নেন। জেসমিনকে মা ডেকে সেখানে বসবাস করতে থাকেন। জেসমিন বেগমকে মা ডাকলেও সবসময় তার আসল মা বাবাকে খোঁজতে থাকেন।কোম্পানীগঞ্জে একাধিক বার এসেছেন মা বাবাকে খুঁজতে, কিন্তু পাননি। গত ১১ জুলাই তিন বন্ধুকে নিয়ে সাদা পাথর দেখার কথা বলে আসেন স্থানীয় দয়ার বাজারে।এসে কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলে তাদের মধ্যে থেকে একজন জানান, কয়েকবছর আগে কালীবাড়ির ফারুক মিয়ার এক ছেলে হারিয়ে গিয়েছিল। তখন সাগর বাবা ফারুককে খুঁজতে থাকলে স্থানীয় একজন তাকে ফারুক মিয়ার বাড়িতে নিয়ে যান। তখন প্রথম দেখার সাথে সাথেই মা কল্পনা বেগম চিনতে পারেন তার হারিয়ে যাওয়া ছেলে সাগরকে। গলায় জড়িয়ে ধরে শুরু হয় কান্নার রুল।সাগরের মা কল্পনা বেগম জানান, ‘প্রথমেই আমি আল্লাহর লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করছি। আমি ভাবিনি আর কোনদিন আমার হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফিরে পাব। আমি আমার সাত রাজার ধন ফিরে পেয়েছি। এ জন্য আমি মহান প্রভুর শুকরিয়া আদায় করছি।’ এভাবেই দীর্ঘ ১০ বছর পর ফিরে পান কল্পনা বেগম তার হারিয়ে যাওয়া একমাত্র ছেলে সাগরকে।